আসলে সুখ সম্পদ বা সফলতার মধ্যে নয়; সুখ লুকিয়ে আছে সহজ-সরল জীবনের মধ্যে।
৬টি দারুণ অভ্যাস
১. একটি রুটিন তৈরি করুন, অনেকে মনে করেন রুটিন মানে একঘেয়েমি। কিন্তু আপনি কি জানেন, কুরআন ও সুন্নাহ আমাদের জীবনে রুটিনের গুরুত্বের উপর জোর দিয়েছে?
আল্লাহ তাআলা বলেন,
নিশ্চয়ই মুমিনদের ওপর নামাজ নির্ধারিত সময় অনুযায়ী ফরয করা হয়েছে। (সুরা আন-নিসা, ১০৩) হে মুমিনগণ! আল্লাহকে অধিক স্মরণ কর এবং সকাল-সন্ধ্যায় তার পবিত্রতা ঘোষণা কর। (সুরা আহজাব, ৪১-৪২) অভ্যাস গড়ার করণীয়:
সকাল-সন্ধ্যার দোয়া নিয়মিত নামাজ পড়ুন। বাবা-মা হলে, সন্তানদের ঘুম, খাওয়া ও গোসলের সময় নির্দিষ্ট রাখুন, এতে সন্তানরা নিরাপত্তা বোধ করে এবং আপনার নিজের সময়ও বের হবে।
আরও পড়ুন: নফল নামাজের সিজদায় দোয়া করা যাবে?
রুটিন মেনে চলুন। আপনার দেহ ও আত্মা—উভয়ই এর প্রয়োজন। ভালো ঘুমের রুটিন হলে আপনি প্রোডাক্টিভ হবেন, এবং সময়মতো খাবার খাওয়া শরীরের জন্য উপকারী। ক্ষুধার্ত হলেই খাবেন, দুঃখে বা বিরক্তিতে নয়।
২. লিখে রাখুন
আপনার সময় এবং নিজেকে সম্মান করুন, কারণ দুনিয়াতে কাটানো প্রতিটি মুহূর্তের হিসাব আপনাকে দিতে হবে। নবী করিম (সা.) বলেন,
পাঁচটি জিনিসকে পাঁচটি জিনিসের পূর্বে মূল্যায়ন করো, বার্ধক্য আসার আগে যৌবন, অসুস্থ হওয়ার আগে সুস্থতা, গরীব হওয়ার আগে ধন-সম্পদ, ব্যস্ত হওয়ার আগে ফাঁকা সময় এবং মৃত্যুর আগে জীবন। (হাদিস)
প্রতিদিন সকালে বা রাতে আগামী দিনের কাজগুলো লিখে ফেলুন। সবসময় একটি নোটবুক সঙ্গে রাখুন, বিছানার পাশে, অফিসে, বাড়িতে। কোনো কাজ মাথায় আসলেই লিখে ফেলুন। এতে মাথা চাপমুক্ত থাকবে এবং আপনি ‘অভারলোড’ অনুভব করবেন না।
৩. পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতা বজায় রাখুন
নবী করিম (সা.) বলেন,
পরিচ্ছন্নতা ঈমানের অঙ্গ। (মুসলিম) এটি শুধু দেহ নয়, বরং আত্মা, কাপড় ও আশপাশের পরিবেশকেও অন্তর্ভুক্ত করে। ব্যবহার শেষে জিনিস ঠিক জায়গায় রাখুন।খাওয়ার পর থালাবাসন ধুয়ে ফেলুন। সন্তানদের খেলনা গুছিয়ে রাখতে শেখান। এভাবে আপনার বাসা বা কর্মস্থল গোছানো থাকবে এবং আপনি মানসিক প্রশান্তি অনুভব করবেন।
৪. না বলা শিখুন, আমরা মাঝে মাঝে এতটাই ব্যস্ত থাকি অন্যদের সাহায্যে যে নিজের পরিবারকে ভুলে যাই।
আল্লাহ বলেন, হে মুমিনগণ! তোমরা নিজেদের এবং নিজেদের পরিবারকে সেই আগুন থেকে রক্ষা করো যার ইন্ধন হবে মানুষ ও পাথর। (সুরা তাহরিম ৬)
যদি কোনো সহকর্মীর ‘হ্যাঁ’ বলার মানে হয় নিজের সন্তানের ঘুমপূর্ব গল্প বলা বাদ দেওয়া—তবে পরিবারকেই অগ্রাধিকার দিন।
৫. বর্তমানকে বাঁচুন
চীনা দার্শনিক লাওৎসু বলেন, যদি তুমি হতাশ হও, তাহলে তুমি অতীতে বাস করছ। যদি তুমি উদ্বিগ্ন হও, তাহলে তুমি ভবিষ্যতে বাস করছ। আর যদি তুমি শান্ত থাকো, তাহলে তুমি বর্তমানে বাস করছ। আপনি আজ যা করছেন, সেটাই আপনার নিয়ন্ত্রণে আছে। এমনকি কঠিন সময়েও দিন মাত্র ২৪ ঘণ্টার। অতীত বা ভবিষ্যতের চিন্তায় নয়, বরং একদিন একদিন করে সামনে এগিয়ে যান।
ভুল করলে ক্ষমা চেয়ে নিন। মনের কষ্ট জমিয়ে রাখবেন না। দ্রুত সিদ্ধান্ত নিতে শিখুন। অপরিপূর্ণতা মেনে নিতে শিখুন এবং যা আপনি বদলাতে পারবেন না, তা আল্লাহর ওপর ছেড়ে দিন।
৬. সংযুক্ত থাকুন, কিন্তু মাঝে মাঝে বিচ্ছিন্নও হোন
প্রতিদিন আমরা অন্যদের বিষয়, অর্জন, রূপ-রূপান্তর, স্ট্যাটাসে ডুবে যাই। বিশেষ করে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে, আমরা নিজের চেয়ে অন্যকে নিয়ে বেশি ব্যস্ত থাকি।
আল্লাহ বলেন,
জেনে রাখো, দুনিয়ার জীবন তো কেবল খেলা-ধুলা, হাস্য-রসিকতা, সৌন্দর্য প্রদর্শন, পরস্পরের মধ্যে গর্ব-অহংকার ও ধন-সম্পদ ও সন্তান সন্ততির প্রতিযোগিতা মাত্র। (সুরা হাদিদ: ২০)
সপ্তাহে অন্তত একদিন পুরোপুরি প্রযুক্তি থেকে নিজেকে বিচ্ছিন্ন রাখুন। প্রকৃতির মাঝে থাকুন, সবচেয়ে ভালো মানসিক চিকিৎসা। গীবত, পরনিন্দা থেকে দূরে থাকুন। একজন বোন ইসলাম গ্রহণের পরে বলেন, গীবতের ভয়াবহতা জানার পর আমি এ থেকে দূরে গেলাম—এতে আমার জীবন আশ্চর্যভাবে অনেক সহজ হয়ে গেল।
জীবনকে সরল, গোছানো ও অর্থবহ করে তুলতে এই ছয়টি অভ্যাস অত্যন্ত কার্যকর। সময়কে মূল্য দিন, সত্যের পথে থাকুন, নিজের ও পরিবারের প্রতি দায়িত্বশীল হোন, আল্লাহর স্মরণে থাকুন এবং অহেতুক দুশ্চিন্তা বা অন্যের জীবনে ঢুকে নিজের শান্তি নষ্ট করবেন না। সূত্র: এভাউট ইসলাম অবলম্বনে
]]>