জিআই পণ্য জামদানি শাড়ির দাম দিন দিন কেন বাড়ছে?

৪ ঘন্টা আগে
মিহি জমিনে সূক্ষ্ম নকশায় তৈরি জামদানি শাড়ি শুধু দেশে নয়, নজর কাড়ছে বিদেশেও। তাইতো, বাংলাদেশের প্রথম ভৌগোলিক নির্দেশক (জিআই) স্বীকৃতিপ্রাপ্ত পণ্য হিসেবে মর্যাদা পেয়েছে ঐতিহ্যের এই শাড়ি। তবে দিন দিন চাহিদা বাড়লেও রয়েছে দক্ষ কারিগর সংকট। এছাড়া সুতার দাম বেড়ে যাওয়ায় শাড়ির দামও চলে যাচ্ছে ক্রেতার নাগালের বাইরে।

নারায়ণগঞ্জের শীতলক্ষ্যার পাড়। এই নদী তীরেই রূপগঞ্জের বিভিন্ন গ্রামের প্রতিটি ঘরে জামদানির নকশা তুলছেন বয়নশিল্পীরা। বলা হয়, মুঘল আমলে মসলিনের হাত ধরেই এসেছে অভিজাত পোশাক জামদানি।

 

ঐতিহ্যের বুনন ও তাঁতিদের সঙ্গে জামদানির সম্পর্কের গল্প জানতে নারায়ণগঞ্জের রূপগঞ্জের নোয়াপাড়া ঘুরে দেখা যায়, রঙবেরঙের সুতা আর প্রকৃতি নির্ভর গ্রামীণ নকশায় বয়নশিল্পীদের সুনিপুণ দক্ষতায় ফুটে উঠছে জীবনের ছবি।

 

আরও পড়ুন: আভিজাত্যের প্রতীক জামদানি শিল্পকে রক্ষা করতে হবে: বিসিক

 

কারিগররা বলেন, গ্রে রঙের সুতা কিনে এনে প্রথমে ওয়াশ করা হয়। পরে কেমিকেল ও অর্গানিক কালার ব্যবহার করে সুতা রঙ করা হয়। সুতার রঙ করার পর জামদানি তৈরির সুতো ভরা হয় চরকায়। ক্রেতার বায়নায় ঘুরে নতুন নকশা। মাটির নিচে তৈরি তাঁতে শাড়ির দুই পাড়ে বসতে হয় দুইজন লোক।

 

সুতা রঙ করে রোদে শুকাতে দেয়া হয়েছে। ছবি: সময় সংবাদ

 

আদি নকশা বজায় রাখার পাশাপাশি শাড়ির নিজস্ব বৈশিষ্ট্য আর সুতার মান ধরে রেখে তাঁতিরা ফুটিয়ে তোলেন নানা জ্যামিতিক নকশা। সপ্তাহভর কিংবা নকশাভেদে কয়েক মাসও কাজ করেন একেকটি জামদানি তৈরিতে। কারিগরা জানান, কোনো কোনো জামদানি শাড়ি তৈরিতে ৪ থেকে ৫ মাস পর্যন্তও সময় লাগে। আবার কোনো কোনো শাড়ি ৪-৫ সপ্তাহেও তৈরি করা হয়।

 

বাজারেও বেশ চড়া দামেই বিক্রি হয় জামদানি। মূলত নকশা, সুতার কাউন্ট আর মানের ওপর নির্ভর করে শাড়ির দাম। চিকন সুতার জামদানির কদর বেশি, দামও বেশি পান কারিগররা। তারা বলেন, সুতির সুতায় জামদানি বেশি ভালো হয়।

 

জামদানি শাড়ি তৈরি করছেন কারিগররা। ছবি: সময় সংবাদ

 

তবে সংকট রয়েছে দক্ষ কারিগরের। তারা বলেন, দীর্ঘসময় ধরে কাজ করতে হয়। সকাল ৬ টা থেকে রাত ৯টা পর্যন্ত কাজ চলে। তবে মজুরি তেমন মিলে না।

 

শুধু কী কারিগর সংকট? কাঁচামালের বাড়তি দামে বেড়েছে উৎপাদন খরচ। এছাড়া দোকান ভাড়া, বিদ্যুৎ বিল, অবকাঠামোগত ব্যয়, মজুরি তো আছেই। তাই প্রান্তিক পর্যায়ে মেলে না জামদানির ন্যাযমূল্য। কারিগরা বলেন, মহাজনরা ন্যায্যমূল্য পেলেও কারিগররা পায় না। এতে সংসার চালাতে হিমশিম খেতে হয়।

 

জামদানি ব্যবসায়ী সাইফুল ইসলাম বলেন, শ্রমিকদের মজুরি তেমন বাড়েনি। তবে কাঁচামালের দাম অনেক চড়া। তারওপর অন্যান্য আনুষঙ্গিক খরচ রয়েছে।

 

জামদানি পল্লী থেকে এবার এবার চোখ ফেরাবো শাড়ির হাটে। রাজধানীর অদূরে ডেমরায় শীতলক্ষ্যার পাড় ঘেঁষে বসে জামদানি শাড়ির হাট। প্রতি শুক্রবার ভোরের আলো ফোটার আগেই শুরু হয় বেচাকেনা। চলে সকাল ৯টা পর্যন্ত।

 

প্রযুক্তির যুগে শুধু হাটেই সীমাবদ্ধ নেই জামদানি শাড়ি বিক্রি। এখন, অনলাইন প্লাটফর্মেও বেচাকেনা তুঙ্গে। এরপরও শ্রমের ভালো মজুরি না মেলায় নতুন করে আর কেউ আসছেন না জামদানি শাড়ি তৈরির পেশায়।

 

আরও পড়ুন: নারায়ণগঞ্জ / ভোরেই জমজমাট জামদানির বেচাকেনা, ঈদে ২৫ কোটি টাকা ব্যবসার আশা

 

সাধ আছে সাধ্য নেই, এমন অনেক ক্রেতাই ঝুঁকছেন দেখতে আসল জামদানির মতো মেশিনে তৈরি পলিয়েস্টার বা নাইলনের নকল জামদানির দিকে। তাঁতিরা বলেন, ভারতীয় জামদানি এসে আসল জামদানির মান কমিয়ে দিয়েছে। কম দাম হওয়ায় ক্রেতারাও সেদিকে ঝুঁকছেন। কারণ বেশি দাম দিয়ে আসল জামদানি কেনার সামর্থ্যও সবার নেই।

 

জামদানি শাড়ি বুনছেন একজন নারী কারিগর। ছবি: সময় সংবাদ

 

জ-দ্য স্টোরি অব হ্যান্ডলুম জামদানির কর্ণধার অভিক জামিল বলেন, তাঁতিরা যে রেশম সুতায় জামদানি শাড়ি তৈরি করে সেটির দাম বেশি হয়। তবে এটিই নাইলনের সুতায় তৈরি করলে দাম অনেক কমে যায়। এটিই ক্রেতাদের বোঝানো যায় না। মান বজায় রাখতে গেলে, দামও একটু বেশি হওয়াটাই স্বাভাবিক।

 

২০২০ সালের ২৮ ডিসেম্বর বাংলাদেশের জামদানিকে ভৌগোলিক নির্দেশক পণ্য হিসেবে স্বীকৃতি দেয় ইউনেস্কো। এ শিল্পকে বাঁচাতে দরকার সরকারি পৃষ্ঠপোষকতা। কারিগরদের দক্ষতা বাড়ানো এবং পাইকারদের দৌরাত্ম্য কমাতে পারলে এ শিল্প আরও এগিয়ে যাবে। পাশাপাশি বাংলার এই জামদানি বিশ্বব্যাপী সমাদৃত হবে বলে প্রত্যাশা সংশ্লিষ্টদের।

]]>
সম্পূর্ণ পড়ুন