মালয়েশিয়ার দুর্নীতি দমন কমিশন (এমএসিসি) সম্প্রতি জালিয়াতির অভিযোগে দেশটির বর্ডার কন্ট্রোল অ্যান্ড প্রোটেকশন এজেন্সির ১৮ জন কর্মকর্তাকে গ্রেফতার করে।
এই ধরনের অনিয়ম মোকাবিলায় সরকার কোনো পদক্ষেপ নিয়েছে কিনা- বুধবার পার্লামেন্টে এক সাংসদের এমন প্রশ্নের জবাবে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী সাইফুদ্দিন নাসুশন ইসমাইল জানান, আইনপ্রয়োগকারী কর্মকর্তাদের নানা অনিয়ম রোধে কুয়ালালামপুর আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরসহ প্রবেশপথগুলোতে ফরেন ডিজিটাল আইডেন্টিটি ব্যবস্থা বসানো হবে।
মন্ত্রী জানান, এই উদ্যোগে মালয়েশিয়ায় প্রবেশ করতে ইচ্ছুক প্রত্যেক বিদেশি নাগরিকের জন্য একটি ডিজিটাল আইডি তৈরি করা হবে। এই ডিজিটাল আইডি একটি কেন্দ্রীয় বায়োমেট্রিক সিস্টেমের সঙ্গে যুক্ত থাকবে, যার মাধ্যমে ওই নাগরিকের তিনটি মূল শনাক্তকারী বৈশিষ্ট্য যথা আঙুলের ছাপ, চোখ স্ক্যান ও ফেসিয়াল রিকগনিশন যাচাই করা হবে।
আরও পড়ুন: অনুপ্রবেশের অভিযোগ, ইন্দোনেশিয়ায় ৪ বাংলাদেশি আটক
মন্ত্রীর মতে, এই তিনটি বায়োমেট্রিক শনাক্তকারীর মাধ্যমে প্রত্যেক ব্যক্তির একটি আলাদা ফাইল বা নথি তৈরি হবে যা জাল করা বা কারসাজি করা অত্যন্ত কঠিন হবে।
তিনি আরও জানান, দুর্নীতি রোধে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় কেবল এফডিআই এর ওপর নির্ভর করছে না, বরং একটি সমন্বিত প্রযুক্তিনির্ভর কৌশল গ্রহণ করেছে। এই কৌশলের অংশ হিসেবে বেশ কিছু অত্যাধুনিক প্রযুক্তি বাস্তবায়ন করা হচ্ছে:
অগ্রিম যাত্রী স্ক্রিনিং সিস্টেম: এই সিস্টেম যাত্রীরা দেশে পৌঁছানোর আগেই তাদের তথ্য যাচাই-বাছাই ও স্ক্রিনিং করবে।
ঝুঁকি মূল্যায়ন ইঞ্জিন: স্ক্রিনিংয়ের কার্যকারিতা ও নির্ভুলতা নিশ্চিত করতে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা (এআই) এবং মেশিন লার্নিং প্রযুক্তি দ্বারা চালিত এই ইঞ্জিন কার্যকর করা হবে।
আরও পড়ুন: যুক্তরাষ্ট্রে ১৭ বছরে পাইলট হলেন বাংলাদেশি কিশোর
অটোগেটের সম্প্রসারণ: ‘কাউন্টার-সেটিং’ বা জালিয়াতির বিরুদ্ধে প্রধান বাধা হিসেবে অটোগেট মেশিনের ব্যবহার বাড়ানো হবে। বর্তমানে ৬৩টি দেশের দর্শনার্থী এবং দীর্ঘমেয়াদি পাসধারীরা এই সুবিধা পাচ্ছেন।
মন্ত্রী জানান, যেসব ম্যানুয়াল কাউন্টার চালু থাকবে, সেখানে ডিজিটাল নজরদারি এবং তথ্যের অখণ্ডতা জোরদার করার জন্য বিশেষ ব্যবস্থা নেয়া হচ্ছে। এর মধ্যে অন্যতম হলো:
বডি-ওর্ন ক্যামেরা: ম্যানুয়াল ডকুমেন্ট চেকিং কাউন্টারে কর্মরত ইমিগ্রেশন ডিপার্টমেন্টের সকল কর্মকর্তাকে বডি-ওয়র্ন ক্যামেরা পরতে হবে, যা দর্শনার্থীদের সাথে তাদের প্রতিটি কথোপকথন রেকর্ড করবে।
স্মার্ট সিসিটিভি: ম্যানুয়াল কাউন্টারগুলো এআই ভিত্তিক ভিডিও অ্যানালিটিক্সসহ স্মার্ট সিসিটিভি সিস্টেম দ্বারা পর্যবেক্ষণ করা হবে।
আরও পড়ুন: যুক্তরাষ্ট্রে প্রবাসী বাংলাদেশিদের ভোটার নিবন্ধন শুরু
তিনি বলেন, আমি মনে করি, এই কঠোর প্রযুক্তিনির্ভর পদ্ধতির মাধ্যমে সন্দেহজনক আচরণ এবং অবৈধ লেনদেনের প্রচেষ্টা আগেভাগে সনাক্ত করা যাবে, যা অনৈতিক অনুশীলনের সুযোগ বন্ধ করবে এবং কর্মকর্তাদের জবাবদিহিতা বাড়াবে।
তিনি আরও বলেন, সরকার দৃঢ়ভাবে বিশ্বাস করে যে কঠোর প্রয়োগ, সমন্বিত পর্যবেক্ষণ, আধুনিক প্রযুক্তি এবং সততার সংস্কৃতি এই সবকিছুর সমন্বয়ে দেশের প্রবেশদ্বারগুলোতে দুর্নীতি আরও কার্যকরভাবে মোকাবিলা করা সম্ভব হবে। এটি জননিরাপত্তা নিশ্চিত করতে এবং জাতীয় সার্বভৌমত্ব রক্ষায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করবে।
]]>