জালাল উদ্দিন কার কাছে বিচার চাইবে?

৩ সপ্তাহ আগে
সত্তোরোর্ধ্ব শেখ মো. জালাল উদ্দিন। মুখে বয়সের বলিরেখা স্পষ্ট। বসে আছেন বাগেরহাট সোনালী ব্যাংক কার্যালয়ের সামনে। এ দৃশ্য মোটামুটি নিয়মিত। সরকারি চাকরির পেনশনের টাকায় স্বাচ্ছন্দ্যে জীবনের শেষ দিন কাটানোর কথা থাকলেও ব্যাংকের প্রতারণায় পরিবার নিয়ে অর্ধাহার-অনাহারে দিন কাটছে তার। তাই তো প্রতিনয়ত টাকা ফেরত পাবার আশায় ঘুরে ফিরেন ব্যাংকের দ্বারে দ্বারে।

বাগেরহাট সদর উপজেলার কাড়াপাড়া গ্রামের উত্তর পাড়ার বাসিন্দা তিনি। গত সপ্তাহে একাধিক বার কথা হয় ব্যাংকের সামনে। 


শেখ মো. জালাল উদ্দিন বলেন, সেনাবাহিনীর একজন কর্মচারী হিসেবে ২০১১ সালে অবসরে যাই। ২০১২ সালের সেপ্টেম্বরে সোনালী ব্যাংকের বাগেরহাট শাখায় মাসে ৫ হাজার টাকা লভ্যাংশ পাওয়ার শর্তে ৫ লাখ টাকা ৫ বছরের জন্য জমা রাখেন। পরবর্তীতে জরুরি প্রয়োজনে ২০১৩ সালে চার লাখ টাকা ঋণ নেন এবং ২০১৪ ও ২০১৫ সালে সর্বমোট ৪ লাখ ৮৮ হাজার ৬০১ টাকা দিয়ে সুদসহ ঋণ পরিশোধ করি। কিন্তু ২০১৭ সালে হিসাবের মেয়াদ পূর্ণ হলে টাকা উত্তোলন করতে গিয়ে দেখি জমা রাখা সব টাকা তুলে নেওয়া হয়েছে আগেই। ব্যাংকের লোকরাই আমারে ভুল বুঝিয়ে আমার টাকা তুলে নিয়েছে। আমি পথে পথে ঘুরি, ব্যাংকে বসে থাকি, না খেয়ে থাকি। ওরা আমার সমাধান দেয় না। কাঁদতে কাঁদতে তিনি বলেন, শেষ বয়সে আমি আর পেরে উঠছি না। আমার টাকা ব্যাংক ফেরত দিক, ওদের চুরির দায় আমি কেন টানবো। আমি কার কাছে বিচার চাইব।


জালাল উদ্দিনের এলাকায় খোঁজ নিতে গেলে স্থানীয় বাসিন্দা তুষার চন্দ্র কর বলেন, ‘একজন সেনাসদস্য যদি এভাবে প্রতারিত হয় তবে সাধারণ মানুষ কিভাবে নিরাপদে টাকা রাখবে। আমরা দেখছি বছরের পর বছর ঘুরে বেড়াচ্ছেন তিনি। অথচ ব্যাংক কোনো সমাধান দিচ্ছে না।’

আরও পড়ুন: আসন পুনর্বহালের দাবিতে বাগেরহাটে নির্বাচন অফিস ঘেরাও, উচ্চ আদালতে রিট

শেখ হাসান আলী বলেন, ‘এ ধরনের ঘটনার কারণে মানুষের ব্যাংকের প্রতি আস্থা নষ্ট হচ্ছে। আদালতের প্রক্রিয়া দীর্ঘ হওয়া, ব্যাংকের অনীহা এবং ভুক্তভোগীদের প্রতি সহমর্মিতার অভাব সবকিছু মিলে জালাল উদ্দিনের মতো প্রবীণরা মানবেতর জীবনযাপন করছেন। সরকার ও সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের উচিত দ্রুত পদক্ষেপ নিয়ে তার টাকা ফেরত দেওয়া এবং দোষীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি নিশ্চিত করা।’


জালাল উদ্দিনের স্ত্রী কান্নাজড়িত কণ্ঠে বলেন, ‘আমাদের শেষ ভরসার টাকাও তারা খেয়ে ফেলেছে। এখন স্বামী-সন্তান নিয়ে খেয়ে না খেয়ে দিন কাটাতে হচ্ছে। কত মানুষের কাছে গিয়েছি, কোথাও কোনো বিচার পাইনি। স্বামীর বয়স হয়েছে, শরীরও ভালো নেই। এখন আর লড়াই করার শক্তি নেই। সরকার যদি সহায়তা না করে তাহলে অনাহারেই মরতে হবে আমাদের।’


সোনালী ব্যাংক বাগেরহাট শাখার এসিস্ট্যান্ট জেনারেল ম্যানেজার মো. হুমায়ুন কবির বলেন, ‘সেসময় অসাধু কর্মকর্তাদের যোগসাজশে চুরির ঘটনা ঘটে। এ ঘটনায় একাধিক মামলাও আদালতে চলমান রয়েছে। মামলার রায় না হওয়া পর্যন্ত টাকা দেওয়া সম্ভব নয়।’

আরও পড়ুন: বাগেরহাটে ৪টি আসন বহাল প্রশ্নে হাইকোর্টের রুল

উল্লেখ্য, ২০১২ সালের ২ আগস্ট থেকে ২০১৫ সালের ৩ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত সোনালী ব্যাংকের বাগেরহাট শাখায় প্রায় ৫ কোটি টাকার দূর্নীতি সংঘটিত হয়। এ ঘটনায় দুটি মামলায় একাধিক ব্যাংক কর্মকর্তা কারাগারে ছিলেন। মাহফুজুর রহমান বাবু নামে একজন ব্যাংক কর্মকর্তা কিছু টাকা ব্যাংককে ফেরতও দিয়েছেন। মামলা দুটি চলমান রয়েছে।

]]>
সম্পূর্ণ পড়ুন