জামালপুরে ১৪ বছর ধরে বন্ধ পৌর বাস টার্মিনাল, চরম দুর্ভোগ

৩ সপ্তাহ আগে
জামালপুর-ময়মনসিংহ মহাসড়কে যাত্রী সেবার মান উন্নয়নে নির্মিত জেলার পৌর বাস টার্মিনালটি ১৪ বছর ধরে পরিত্যক্ত তালাবদ্ধ অবস্থায় পড়ে আছে। টার্মিনালটি বর্তমানে পুরনো বাস ও ট্রাক পার্কিংয়ের কাজে ব্যবহার করছেন ইজারাদাররা।

চালক ও হেলপারদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, টার্মিনালটি পরিত্যক্ত থাকায় যাত্রীরা যেমন দুর্ভোগে পড়েছেন পাশাপাশি তাদের পড়তে হচ্ছে নানা সমস্যায়। ফলে টার্মিনালে জায়গা না পেয়ে বাসের মধ্যে থাকতে হচ্ছে তাদের। আর টার্মিনালের এই অবস্থার জন্য পৌরসভা ও বাস মালিক সমিতি একে অপরকে দোষারোপ করছেন।


জামালপুর শহরের যানজট নিরসনে এবং জামালপুর-ময়মনসিংহ-ঢাকা রোডের যাত্রীদের সেবার মান উন্নয়নে পৌরসভা ২০০১ সালে পুরনো ফেরিঘাট এলাকায় এ টার্মিনালটি নির্মাণ করা হয়। ২০০২ সালে টার্মিনালের যাত্রা শুরু হয়। কিন্তু ২০০৯ সাল থেকেই এটি বন্ধ হয়ে যায়। দীর্ঘ ১৫ বছর ধরে টার্মিনালটি তালাবদ্ধ অবস্থায় থাকায় ভবনের ভেতরের চারদিকে বিভিন্ন ময়লা-আবর্জনার স্তূপে পরিণত হয়েছে। মূলফটকে তালা ঝুলিয়ে রাখা হয়েছে। ভেতরে কেউ উঁকি মেরেও দেখে না। আর গাড়িচালক হেলপাররা দূরদূরান্ত থেকে এসে বাইরে এবং গাড়ির ভেতরেই থাকছেন।


টার্মিনাল রেখে ভাড়া জায়গা থেকে জামালপুরের বাস চলাচল করার কারণে এই অবস্থার প্রধান কারণ বলে জানিয়েছেন পরিবহন শ্রমিকরা। তাদের অভিযোগ, মালিক সমিতির নিয়ন্ত্রণে শহরের ভোকেশনাল এলাকায় জায়গা ভাড়া নিয়ে অস্থায়ী বাস টার্মিনাল পরিচালনা করছেন। সেখানে গাড়ি প্রতি সাড়ে ৫০০ টাকা নেয়া হয়। এই টাকা কার পকেটে যাচ্ছে। বিগত সরকারের সময় এটা চালু করা হয়। ৫ আগস্টের পর শুধু নেতা পরিবর্তন হয়েছে। নিয়মকানুন সব আগের মতোই চলছে।


আরও পড়ুন: বেনাপোল রুটে অনির্দিষ্টকালের বাস ধর্মঘট, ভোগান্তিতে পাসপোর্টধারীরা


এই রুটে প্রতিদিন ৭০/৮০টি গাড়ি চলে। এ ছাড়া রাত ২টার পর থেকে যে সব গাড়ি রাজধানীতে যায়, সেটাও অতিরিক্ত টাকার বিনিময়ে।


সকাল থেকে রাত পর্যন্ত শহরের ভোকেশনাল এলাকার গুরুত্বপূর্ণ এই মহাসড়কে প্রতিনিয়ত যানজটের সৃষ্টি হয়। বিশেষ করে রেলপথে যাতায়াতকারী সাধারণ মানুষদের চরম দুর্ভোগে পড়তে হয়।


জামালপুর পৌর বাস টার্মিনালটি বর্তমানে জনশূন্য অবস্থায় পড়ে আছে। এই সুযোগে টার্মিনালের ইজারাদার বাস-ট্রাক প্রতি ৪০ টাকা নিয়ে টার্মিনালটি পরিচালনা করে আসছেন বলে স্থানীয়রা জানিয়েছেন।

 

সরেজমিনে ঘুরে দেখা গেছে, টার্মিনাল ভবনের কাউন্টারসহ বিভিন্ন কক্ষে ফাটল ও পলেস্তারা খসে পড়ছে।


চালক মো. সুমন মিয়া জানিয়েছেন, টার্মিনালটি চালুর পর থেকে রজনীগন্ধা, যমুনা ও মুক্তি রাজিব বাস চলাচল করতো। অনেক ধরণের গাড়ি ছিল। প্রতিদিন ৭০ থেকে ৮০টি গাড়ি চলাচল করতো টার্মিনাল। রাজিব গাড়িগুলো টার্মিনালে না এসে শহরের বিভিন্নস্থান থেকে চলাচল করায় এখন আর টার্মিনালে কোনো গাড়ি না আসায় গাড়িশূন্য হয়ে পড়েছে।


আরও পড়ুন: ২১ বছর পরিত্যক্ত থাকা বাস টার্মিনাল এখন মাদকের আখড়া!


জামালপুর সম্মিলিত সামাজিক আন্দোলনের সভাপতি জাহাঙ্গীর সেলিম বলেন, ‘টার্মিনালটি শিয়াল-কুকুরের আখড়ায় পরিণত হয়েছে। বর্তমানে মাদকসেবীদের আস্তানা হিসেবে ব্যবহৃত হচ্ছে।’


জামালপুর বাস-ট্রাক মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক সাখায়াত হোসেন শুভ বলেছেন, ‘টার্মিনাল দুরবস্থার জন্য পৌর কৃর্তপক্ষ দায়ী। পৌর টার্মিনালটি পৌরসভার নিয়ন্ত্রণে। দীর্ঘ দিন ধরে বন্ধ রয়েছে। সেখান থেকে রাজিব বাস সার্ভিস চলার কথা থাকলেও বাথরুম এবং সংস্কারের কোনো ব্যবস্থা না থাকায় ভাড়া জায়গা নিয়ে বাস চলাচল করছে।’


এ বিষয়ে পৌরসভার নির্বাহী কর্মকর্তা হাফিজুর রহমান বলেন, ‘যানজটসহ জনগণের ভোগান্তি যাতে না হয়, সেই জন্য পৌর বাস টার্মিনাল নির্মাণ করা হয়। প্রতি বছর এটি ইজারা দেয়া হয়। কিন্তু বাস মালিকদের অসহযোগিতার জন্য টার্মিনালটি পরিত্যক্ত অবস্থায় রয়েছে। রাজিব বাস কাউন্টার অন্যত্র সরিয়ে দূরে নিয়ে আসছে। বাস মালিকদের সহযোগিতা পেলে টার্মিনালটি দ্রুত চালু করা হবে।’


প্রায় দেড় একর জমির ওপর নগর পরিচালনা ও উন্নতকরণ অবকাঠামো প্রকল্পের আওতায় টার্মিনালটির নির্মাণ ব্যয় হয় এক কোটি ৫ লাখ টাকা।
 

]]>
সম্পূর্ণ পড়ুন