ময়মনসিংহ নগরীর বাঁশবাড়ি কলোনির বাসিন্দা ময়না আক্তার। কলের মুখে টিস্যু ব্যাগ পেঁচিয়ে ছেঁকে নিচ্ছেন সাপ্লাই পানি। কয়েক সেকেন্ড পর ব্যাগ খুলতেই বেরিয়ে এলো ভয়াবহ চিত্র। জমে আছে কালচে কাদা, পোকামাকড়। আর ছড়াচ্ছে দুর্গন্ধও।
প্রতি মাসে নিয়মিত বিল পরিশোধ করলেও চাহিদা মতো পানি তো মিলছেই না, বরং যা আসছে সেটিও এমন ব্যবহার অনুপযোগী। হাজারো পরিবার প্রতিদিনই একই ভোগান্তির শিকার।
১৮৬৯ সালে গঠিত হয় ময়মনসিংহ পৌরসভা। ২০১৮ সালে সেটি সিটি করপোরেশনে উন্নীত হলেও শত বছরের পুরানো সাপ্লাই পানির ব্যবস্থা আজও মানসম্মত হয়নি। বরং প্রতিদিনই পরিস্থিতি হচ্ছে আরও নাজুক।
বাসিন্দা ময়না আক্তার বলেন, ‘প্রতি মাসেই বিল আসে কিন্তু আমরা পানি পাই না। যাও আসে এক বালতি-আধা বালতি। আর পানি অনেক পচা, কোনো কাজ করতে পারি না। খাওয়া তো দূরের কথা, এই পানি টয়লেটেও ব্যবহার উপযোগী না।’
রহিমা নামে আরেক নারী বলেন, ‘ময়লা পানি তো আসেই, পোকামাকড়ও আসে। খুবই দুর্গন্ধ ছড়ায়। এই পানি দিয়ে কোনো কাজ করলে হাতে চুলকায়।’
সিটি করপোরেশনের তথ্য মতে, নগরীর ৩৩টি ওয়ার্ডের মধ্যে পানির সংযোগ আছে মাত্র ১৬টিতে। বর্তমানে সংযোগের সংখ্যা ৭ হাজার ৫৫৬টি। গত অর্থবছরে পানি বিভাগের আয় হয়েছে দেড় কোটি টাকা। আর ব্যয় হয়েছে প্রায় তিন কোটি টাকা। ভর্তুকি দিয়েই চালাতে হচ্ছে পানি বিভাগ।
আরও পড়ুন: তিস্তায় পাথর সিন্ডিকেটের ভয়ংকর থাবা, মানবিক বিপর্যয় ঠেকাবে কে?
তবে নাগরিকদের হোল্ডিং ট্যাক্সের বিলেই দেখা গেছে ‘পানি রেট’ নামে প্রতি মাসে আদায় করা হচ্ছে মোট টাকার তিন শতাংশ। শুধু এই খাত থেকেই গত বছর আয় হয়েছে ৪ কোটি ২০ লাখ টাকা। তবে এটি পানি বিভাগে ব্যয় না করে ভর্তুকি দিয়ে সিটি করপোরেশনের পানি বিভাগ চালানো হচ্ছে। এতে পানির মান ও প্রাপ্যতা নিশ্চিত হয়নি এখনো।
সুশাসনের জন্য নাগরিকের (সুজন) ময়মনসিংহ মহানগরের সম্পাদক আলী ইউসুফ বলেন, ‘সুপেয় পানির ব্যবস্থা অবশ্যই করতে হবে। এটি যদি না করে তাহলে নগরভবন সমস্ত নগরবাসীর কাছে প্রশ্নবিদ্ধ হয়ে যাবে। তাই এই বিষয়টিকে অধিকতর গুরুত্ব দিতে হবে।’
বাসিন্দাদের অভিযোগের অসহায় স্বীকারোক্তি দিয়ে সিটি করপোরেশনের ভারপ্রাপ্ত প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা সুমনা আল মজীদ বলেন, ‘পানি সরবরাহের ক্ষেত্রে যে সক্ষমতা এবং উন্নতকরণের প্রয়োজন ছিল, সেটি হয়নি। তাই পানির সেবাটা সেভাবে পৌঁছে দিতে পারছি না। নাগরিকদের অভিযোগের বিষয়টি সত্য।’
তিনি আরও বলেন, ‘লাইন দীর্ঘদিনের পুরোনো হওয়ায় ময়লাযুক্ত পানি আসে মাঝেমধ্যে। হয়তো এক্ষেত্রে আমাদের কিছু কিছু ক্ষেত্রে অব্যবস্থাপনাও রয়েছে। তবে গ্রাহকদের আমরা প্রতিনিয়ত পানি সরবরাহ করে যাচ্ছি। সিটি করপোরেশন হওয়ার পর এখনো পানি শাখায় নতুন কোনো প্রকল্প নেয়া হয়নি। এক্ষেত্রে প্রকল্প পেলে সমস্যা সমাধানে কাজ করা হবে।’
]]>