২০২৪ সালে দেশের ১৬৯টি চা বাগানে চা উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছিল এক কোটি ৮০ লাখ কেজি। কিন্তু প্রকৃত উৎপাদন হয়েছে মাত্র ৯ কোটি ৩০ লাখ কেজি, যা লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে দেড় কোটি কেজি কম। চলতি মৌসুমে উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে ১০ কোটি ৩০ লাখ কেজি, তবে এপ্রিল মাস পর্যন্ত উৎপাদন হয়েছে মাত্র তিন কোটি ৯৫ লাখ কেজি।
খরায় পুড়ছে দেশের বিভিন্ন চা বাগান। অনাবৃষ্টির কারণে সবুজ চা বাগানের দৃশ্যপট এখন অনেক জায়গায় ধুসর। যেসময়ে বৃষ্টি হওয়ার কথা, সেসময় আকাশ থাকে নীল, শুষ্ক। ফলে চা গাছের কুঁড়ি ও পাতার স্বাভাবিক বৃদ্ধি ব্যাহত হচ্ছে। তদুপরি, গরম ও আর্দ্র পরিবেশে ছত্রাক ও পোকামাকড়ের আক্রমণ বেড়ে গেছে। চা পাতার গায়ে দেখা দিচ্ছে বিভিন্ন রোগবালাই।
বাংলাদেশ চা বোর্ডের তথ্য অনুযায়ী, দেশের কিছু অঞ্চলে উৎপাদন ১৫ থেকে ২০ শতাংশ পর্যন্ত কমে গেছে। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এই ধারা অব্যাহত থাকলে চা শিল্পে দীর্ঘমেয়াদি সংকট দেখা দিতে পারে।
আবহাওয়াবিদ শাহ মো. সজিব হোসাইন বলেন, 'গেলো বছরের তুলনায় চলতি বছরের প্রথম ছয় মাসে দেশে বৃষ্টিপাত কমেছে প্রায় ৪৯ শতাংশ। গড় তাপমাত্রাও বেড়েছে। মৌসুমি বৃষ্টিপাতের ধরণে ব্যাপক পরিবর্তন এসেছে।'
আরও পড়ুন: চা শিল্পাঞ্চলে ব্রিটিশদের সেই লাল ডাকঘরে কাজ চলে এখনও
এই পরিবর্তনের ফলে শুধু উৎপাদন কমছে না, একই সঙ্গে চায়ের গুণগত মানেও নেতিবাচক প্রভাব পড়ছে বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা।
শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের ফুড ইঞ্জিনিয়ারিং অ্যান্ড টি টেকনোলজি বিভাগের অধ্যাপক ড. ইফতেখার আহমদ বলেন, 'এই সংকট থেকে উত্তরণে প্রয়োজন সরকারি সহায়তায় দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনা এবং অভিযোজনমূলক কৌশল। বিশেষ করে বাগানগুলোতে সেচ ব্যবস্থার উন্নয়ন অপরিহার্য।'
ম্যাকসন ব্রাদার্স বাংলাদেশ লিমিটেডের পরিচালক মো. আজহারুজ্জামান সোহেল বলেন, চা শিল্প আজ টিকে থাকার লড়াইয়ে। আমরা সরকারের সহযোগিতা চাই, যেন প্রাকৃতিক দুর্যোগ মোকাবেলা করে উৎপাদন ধরে রাখতে পারি।