মঙ্গলবার (১৮ নভেম্বর) ব্রাজিলের বেলেমে কপ৩০–এর মধ্যবর্তী সংবাদ সম্মেলনে পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব ও বাংলাদেশের প্রতিনিধি দলের উপপ্রধান নাভিদ শফিউল্লাহ বলেন, ‘অচলাবস্থার কারণে উন্নয়নশীল দেশগুলোর মধ্যে হতাশা বাড়ছে—যারা ইতোমধ্যে বাড়তি জলবায়ু ক্ষতি, ঋণের চাপ ও ঘনঘন দুর্যোগের মুখোমুখি।’
তিনি বলেন, ‘অনুচ্ছেদ ৯.১–কে আলাদা এজেন্ডা আইটেম হিসেবে অন্তর্ভুক্ত করা নিয়েও এখনো ঐক্যমত্য হয়নি। এটি উন্নত দেশগুলোর আর্থিক দায় কমানোর বড় ধরনের প্রবণতারই অংশ। প্যারিস চুক্তির অনুচ্ছেদ ৯.১–এ উন্নত দেশগুলোর ওপর প্রশমন ও অভিযোজন-দুই ক্ষেত্রেই-উন্নয়নশীল দেশগুলোকে অর্থায়নের বাধ্যবাধকতা আরোপ করা হয়েছে।’
সংবাদ সম্মেলনে পরিবেশ অধিদফতরের অতিরিক্ত মহাপরিচালক জিয়াউল হক বলেন, ‘কেউ কি আলোচনায় বাধা দিচ্ছে? বাংলাদেশ কোনো দেশকে আপত্তিকারী হিসেবে চিহ্নিত করছে না। মূল মতপার্থক্য হলো-৯.১-এর জন্য আলাদা এজেন্ডা প্রয়োজন কি না। আমাদের মনে হয়, বিস্তারিত আলোচনার জন্য আলাদা জায়গা থাকা জরুরি।’
অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগের অতিরিক্ত সচিব ও জাতিসংঘ উইং প্রধান একেএম সোহেল বলেন, ‘কপ২৯–এ বার্ষিক প্রায় ৩০০ বিলিয়ন ডলার সংগ্রহে সিদ্ধান্ত হলেও উন্নয়নশীল দেশগুলো এখনও বেলেম কপ৩০–এ পৌঁছাতে ১.৩ ট্রিলিয়ন ডলারের লক্ষ্যের রোডম্যাপ নিয়ে আলোচনা করছে। তবে বাংলাদেশ আশাবাদী। আমরা এ বিষয়ে নিষ্ঠার সঙ্গে আলোচনা করতে চাই।’
আরও পড়ুন: কপ সম্মেলন থেকে কি খালি হাতে ফিরতে হবে বাংলাদেশকে?
নাভিদ শফিউল্লাহ জানান, অনুচ্ছেদ ৯.১ নিয়ে জটিলতা ক্ষতি ও ক্ষতিপূরণ তহবিল এবং গ্লোবাল গোল অন অ্যাডাপটেশন (জিজিএ)–সহ গুরুত্বপূর্ণ আলোচনাকে আড়াল করে দিচ্ছে।
কপ৩০–এর দ্বিতীয় সপ্তাহে বাংলাদেশের অগ্রাধিকারগুলোর মধ্যে রয়েছে-নতুন জলবায়ু অর্থায়ন লক্ষ্যমাত্রার বাস্তবায়নের সুস্পষ্ট রোডম্যাপ, ২০৩০ সালের মধ্যে অভিযোজন অর্থায়ন তিনগুণ বাড়িয়ে ১২০ বিলিয়ন ডলারে উন্নীত করা, এবং অনুদানভিত্তিক সরকারি অর্থায়ন নিশ্চিত করা।
শফিউল্লাহ বলেন, অভিযোজনের জন্য ঋণ শুধুই ঝুঁকিপূর্ণ দেশগুলোর ভঙ্গুরতা বাড়ায়। তাই তিনি পূর্বানুমানযোগ্য, দেশ–অনুকূল এবং এলডিসি ও এসআইডিএস–কে অগ্রাধিকার দেয়া অভিযোজন অর্থায়নের ওপর গুরুত্ব দেন।
বাংলাদেশ প্রতিনিধিরা জানান, তিন বছর ধরে জিজিএ নিয়ে আলোচনা চলছে। কপ৩০–এর সিএমএ৭–এ লক্ষ্য, সূচক ও বাস্তবায়ন কাঠামো গ্রহণ করা এখন জরুরি। অর্থায়ন কাঠামো যুক্ত করার আলোচনা পরবর্তী সিএমএ সেশনগুলোতেও চলতে পারে।
আরও পড়ুন: কপ সম্মেলন: ঋণ নয়, অনুদান চায় বাংলাদেশ
বাংলাদেশ ক্ষতি–ক্ষতিপূরণ তহবিলকে আরও কার্যকর করার দাবি জানায় বলে উল্লেখ করে বক্তারা বলেন, এক্ষেত্রে দ্রুত অর্থ ছাড়, সরাসরি জাতীয় প্রবেশাধিকার এবং বৃহত্তর জলবায়ু অর্থায়ন কাঠামোর সঙ্গে শক্তিশালী সংযোগ নিশ্চিত করতে হবে।
জলবায়ু প্রশমন আলোচনা সম্পর্কে বাংলাদেশ প্রতিনিধিরা জানান, ১.৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস লক্ষ্য, আইপিসিসি–এর ভূমিকা এবং প্রশমন কর্মসূচির ভবিষ্যৎ নিয়েও মতপার্থক্য রয়ে গেছে। বাংলাদেশ আবারও স্পষ্ট করে বলেছে, ‘বিজ্ঞানের সঙ্গে দরকষাকষি করা যাবে না’-১.৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস লক্ষ্যকে জলবায়ু আলোচনার কেন্দ্রবিন্দুতে রাখতেই হবে।
বাংলাদেশ প্রতিনিধি দল আশা প্রকাশ করে, নতুন জলবায়ু অর্থায়ন লক্ষ্যমাত্রার একটি বিশ্বাসযোগ্য রোডম্যাপ, কার্যকর জিজিএ এবং শ্রমিক ও ঝুঁকিপূর্ণ জনগোষ্ঠীকে সুরক্ষা দেবে এমন একটি ন্যায়সঙ্গত রূপান্তর কর্মসূচি-কপ৩০-এ নিশ্চিত করতে হবে।

১ সপ্তাহে আগে
৪






Bengali (BD) ·
English (US) ·