রোববার (২২ জুন) সরেজমিনে ফরিদপুর জেনারেল হাসপাতালে গিয়ে দেখা যায়, বিছানায় বসে রয়েছেন ওই প্রবাসীর বাবা নূর ইসলাম বিশ্বাস।
এ সময় তিনি কেঁদে কেঁদে নিজ ছেলের বিরুদ্ধে অনুযোগ করে বলেন ‘ওরে যে কষ্ট করে, ফইর্যাত (অন্যের জমিতে শ্রম) দিয়ে বড় করছি, জমিজমা বেইচ্যা, দেনা হয়ে বিদেশে পাঠায়ছি। ও আমারে এহন চিনেই না। বউর কথা শুনে ওর শ্বশুরবাড়ির মানুষ আইন্যা আমারে হাতড়ি দিয়্যা মাইরছে (মারধর)।’
জানা যায়, দুই ছেলে ও তিন মেয়ের জনক তিনি। বড় ছেলে পরিবার নিয়ে অন্যত্র থাকেন। অসুস্থ স্ত্রী রিজিয়া বেগমকে নিয়ে অন্যের জমিতে দিনমজুরি করে চলে তার সংসার। বয়সের ভাড়ে অনেকটা নুয়ে পড়েছেন।
আরও পড়ুন: সম্পত্তি লিখে নিতে বৃদ্ধ বাবাকে ৮ দিন তালাবদ্ধ ঘরে রাখলেন মেয়েরা
বৃদ্ধ নূর ইসলাম বিশ্বাসের অভিযোগ, ছোট ছেলে সিঙ্গাপুর প্রবাসী সজিব বিশ্বাসের (২৮) বিরুদ্ধে। বসতবাড়ির জমি লিখে না দেয়ায় গত বৃহস্পতিবার (১৯ জুন) সকালে ছোট ছেলে ও ছেলের শ্বশুরবাড়ির লোকজনের নির্যাতনে গুরুত্বর আহত হন তিনি। এ ঘটনায় তিনি ওইদিন বিকেলে থানায় অভিযোগ দেন। এজাহারে ছেলে সজিব বিশ্বাস, স্ত্রী তানজিলা, শ্যালক জিহাদ শেখ, শ্বশুর হালিম শেখ ও স্থানীয় মানিক মণ্ডলসহ ৬ জনের নাম উল্লেখ করেন।
তিনি জানান, জমি বিক্রি করে ২০১৬ সালের দিকে ছোট ছেলেকে সিঙ্গাপুর পাঠিয়ে দেন। এরমধ্যে বাড়িতে এসে পরিবারের নিষেধ অমান্য করে একই গ্রামের এক তালাকপ্রাপ্ত নারীকে বিয়ে করেন। পরে প্রবাসে গিয়ে বাবা-মায়ের সঙ্গে যোগাযোগ বন্ধ করে দেন। ৬ বছর পর গত ২৯ মে দেশে ফিরে শ্বশুরবাড়িতে অবস্থান নেন। এরমধ্যে বাড়িতে এসে বসতভিটার জমি লিখে দেয়ার জন্য চাপ সৃষ্টি করেন। বাবা রাজি না হওয়ায় শ্বশুরবাড়ির লোকজনকে ডেকে এনে বাবাকে মারধর করেন।
তিনি বলেন, ‘আমার জমিই এইটুকু। আমি যদি এই জমি লিখে দেই, তাইলে আমারে কালকেই ঘেটি (ঘাড়) ধরে বাইর কইর্যা দিবে। আমি কোথায় যাব, আমারেতো পথে ফেলায় দিবে। জমি লেখা ছাড়াইতো বাড়ি থাকতে পারি না। আমি সুষ্ঠু বিচার চাই। আর কোনো বাবার সঙ্গে এরকম যেন না হয়।’
আরও পড়ুন: অবসরপ্রাপ্ত স্কুল শিক্ষককে হাত-পা বেঁধে ছেলে ও পুত্রবধূর নির্যাতন!
নির্যাতনের বর্ণনা দিয়ে ওই বৃদ্ধ বাবা বলেন, ‘ছেলের বউ এসে আমাকে গালিগালাজ করে। জমি লিখে না দিলে আমারে গলা টিপে মাইর্যা ফেলবে। তহন (তখন) ফোন দিয়ে লোকজন আনে। তারা আমার বুকের পাশে হাতড়ি দিয়ে বাড়ি দেয়, আমার ঘাড়ে কিলায় (কিলঘুষি)। আমার ছেলেই সবকিছু করাইছে। আমি হাসপাতালের আসার পরে ট্রাক এনে আমার গরুও নিতে গেছিলো। তহন মাইনষে (প্রতিবেশীরা) ঠেকায় রাখে (বাধা দেন)।’
এ বিষয়ে সজীব বিশ্বাসের ব্যবহৃত মোবাইল ফোনে একাধিকবার ফোন দিলেও সেটি বন্ধ পাওয়া যায়। এ ছাড়া বাড়িতে গিয়েও কাউকে না পাওয়ায় বক্তব্য জানা যায়নি।
জানতে চাইলে ফরিদপুর কোতোয়ালি থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. আসাদউজ্জামান জানান, বিষয়টি নিয়ে অভিযোগ পেয়েছি এবং আইনগত ব্যবস্থা প্রক্রিয়াধীন রয়েছে। যতটুকু জেনেছি, এটা পারিবারিক বিরোধ।