জমকালো আয়োজনে মৌলভীবাজার পাহাড়ে খাসিয়াদের বর্ষবরণ উৎসব

১৮ ঘন্টা আগে
নানা আয়োজনে মৌলভীবাজারের কমলগঞ্জ উপজেলার মাগুরছড়া পানপুঞ্জি মাঠে খাসিয়া নৃ-গোষ্ঠীর বর্ষ বিদায় ও বর্ষ বরণ উৎসব সফলভাবে সম্পন্ন হয়েছে। খাসিয়া সম্প্রদায় তাদের ঐতিহ্যবাহী এ উৎসবকে ‘খাসি সেং কুটস্নেম’ নামে অভিহিত করে।

শনিবার (২২ নভেম্বর) সকাল থেকেই পুঞ্জির ঘরে ঘরে ছিল উৎসবের আলাদা আবেশ। শিশু থেকে শুরু করে সব বয়সী মানুষ নানা রঙের ঐতিহ্যবাহী পোশাকে আনন্দ-উল্লাসে মেতে ওঠেন।


দুপুরের মধ্যে সবাই বর্ষবরণের মাঠে জড়ো হন। বাঁশের খুঁটি, সুপারি গাছের পাতা ও বুনোলতা পাতা দিয়ে প্রাকৃতিকভাবে নির্মিত হয় মূল মঞ্চ। মঞ্চের চারপাশে বসে মেলা। মেলার স্টলগুলোতে ছিল খাসিয়া সম্প্রদায়ের ঐতিহ্যবাহী খাবার, পোশাক ও শিশুদের খেলনা সামগ্রী।


বৃহত্তর সিলেট অঞ্চলের প্রায় ৭০টি খাসিয়া পুঞ্জি থেকে আসা নারী-পুরুষ ও শিশু-কিশোররা নিজস্ব পোশাকে মেলায় অংশ নেন। চলে নতুন বছরের কেনাকাটা। এ উৎসবে নরওয়ে ও পোল্যান্ডের কয়েকজন নাগরিকও অংশগ্রহণ করেন, ফলে বর্ষবরণ উৎসবটি পরিণত হয় এক আন্তর্জাতিক মিলনমেলায়।


উৎসবের সবচেয়ে আকর্ষণীয় পর্ব ছিল ঐতিহ্যবাহী খাসি পোশাকে মেয়েদের নাচ-গান, তৈলযুক্ত বাঁশে ওঠার প্রতিযোগিতা, পান গুছানো, তীর-ধনুক খেলা এবং নানা সাংস্কৃতিক আয়োজন। পাশাপাশি বিভিন্ন ধর্মের বন্ধু-বান্ধবদের অংশগ্রহণে চলে মিলনমেলা ও আপ্যায়ন।


আয়োজক সংস্থার কর্মকর্তা জি.পি. সুছিয়াং জানান, খাসি সম্প্রদায়ের সংস্কৃতি ও ঐতিহ্য ধরে রাখতেই প্রতিবছর এ ধরনের আয়োজন করা হয়ে থাকে। উন্মুক্ত মঞ্চে আলোচনা সভার পাশাপাশি চলে ঐতিহ্যবাহী খাসি নৃত্য ও সংগীতানুষ্ঠান, যেখানে সিলেটসহ বিভিন্ন স্থান থেকে আগত খাসি নারী-পুরুষরা অংশ নেন।


আরও পড়ুন: রাঙ্গামাটিতে বর্ষবরণে মাতলেন কারাবন্দিরাও


খেলার আয়োজনে প্রথমেই নির্ধারিত সীমারেখা থেকে তীর-ধনুক নিক্ষেপ প্রতিযোগিতা অনুষ্ঠিত হয়, এতে একাধিক খাসি যুবক অংশ নেন। এরপর অনুষ্ঠিত হয় তৈলাক্ত বাঁশে ওঠার প্রতিযোগিতা, যেখানে সম্পূর্ণ তেল মাখানো বাঁশে যে সবচেয়ে উপরে উঠতে পারেন তাকেই বিজয়ী ঘোষণা করা হয়।


এরপর খাসি তরুণীদের অংশগ্রহণে অনুষ্ঠিত হয় পান গুছানো প্রতিযোগিতা। এখানে যে প্রতিযোগী সবচেয়ে বেশি পান গুছাতে সক্ষম হন, তাকেই বিজয়ী হিসেবে নির্বাচিত করা হয়। প্রাকৃতিক পরিবেশে এসব আয়োজন সন্ধ্যা পর্যন্ত চলে। পরে বিজয়ীদের হাতে পুরস্কার তুলে দেয়া হয়।


জানা গেছে, ব্রিটিশ শাসনামল থেকে ভারতের মেঘালয় রাজ্যে ২৩ নভেম্বর খাসি বর্ষবিদায় ‘খাসি সেং কুটস্নেম’ পালন করা হলেও, এর পরদিন ২৪ নভেম্বর থেকে শুরু হয় বর্ষবরণ উৎসব। এই বর্ষবরণকে ঘিরে লাউয়াছড়া সংলগ্ন মাগুরছড়া পানপুঞ্জি এলাকা কয়েকদিন ধরেই উৎসবমুখর পরিবেশে সজ্জিত হয়ে ওঠে।


পাহাড়ি জনপদের খাসিয়া নৃ-গোষ্ঠী অধ্যুষিত মৌলভীবাজারে খাসি সোশ্যাল কাউন্সিলের উদ্যোগে বৃহত্তর সিলেটের বিভিন্ন অঞ্চল থেকে আসা কয়েক শতাধিক নারী-পুরুষের অংশগ্রহণে কমলগঞ্জের মাগুরছড়া পানপুঞ্জি মাঠে নতুন বর্ষকে স্বাগত জানানো এবং পুরনো বর্ষকে বিদায় জানানো হয়।


উৎসব উপলক্ষে পুরো মাগুরছড়া এলাকাকে খাসি সম্প্রদায়ের ঐতিহ্য, জীবনধারা ও সংস্কৃতির আদলে সাজানো হয়।


উল্লেখ্য, খাসিদের ‘খাসি সেং কুটস্নেম’ উৎসব ২০১২ সাল থেকে মৌলভীবাজারের কমলগঞ্জ উপজেলার মাগুরছড়া পানপুঞ্জিতে প্রথমবারের মতো উদযাপন করা শুরু হয়।

]]>
সম্পূর্ণ পড়ুন