জনপ্রশাসন ও বিচার বিভাগ সংস্কার কমিশনের প্রস্তাবনা নিয়ে মিশ্র প্রতিক্রিয়া

৪ সপ্তাহ আগে
প্রাদেশিক শাসন এবং আন্তঃক্যাডার বৈষম্য নিরসনে প্রস্তাবনা দিয়েছে জনপ্রশাসন সংস্কার কমিশন। অন্যদিকে বিচারক নিয়োগে আলাদা কমিশন গঠন, বিভাগীয় পর্যায়ে হাইকোর্টের স্থায়ী বেঞ্চ প্রতিষ্ঠা, রাষ্ট্রপতির ক্ষমা প্রদর্শনে আলাদা বোর্ডসহ বিচার বিভাগের সংস্কারে সুপারিশ করেছে বিচার বিভাগ সংস্কার কমিশন। এ নিয়ে বিশেষজ্ঞ মহলে রয়েছে মিশ্র প্রতিক্রিয়া।

আন্তঃক্যাডার বৈষম্য কমাতে নানা উদ্যোগের প্রস্তাবনাকে স্বাগত জানালেও প্রাদেশিক শাসনের প্রস্তাবকে অযৌক্তিক বলছেন অনেকে।

 

ছাত্র-জনতার রক্তক্ষয়ী গণ-অভ্যুত্থানের পর জোরেশোরে আলোচিত হতে থাকে বিভিন্ন খাতের আমূল সংস্কারের। সেই আকাঙ্ক্ষা বাস্তবায়নে ধারাবাহিকভাবে ১১টি সংস্কার কমিশন গঠন করে অন্তর্বর্তী সরকার। রাজনৈতিক দলগুলোর প্রস্তাবনা এবং সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে আলাপ-আলোচনা শেষে বুধবার (৫ ফেব্রুয়ারি) সংস্কার প্রস্তাবনা জমা দেয় জনপ্রশাসন এবং বিচার বিভাগীয় সংস্কার কমিশন।

 

মুয়ীদ চৌধুরীর নেতৃত্বে গঠিত জনপ্রশাসন কমিশন আমূল সংস্কারের প্রস্তাবনা দিয়েছে প্রশাসনে। আন্তঃক্যাডার বৈষম্য দূর করতে একটির বদলে তিনটি পাবলিক সার্ভিস কমিশন গঠন এবং উপ-সচিব পর্যায়ে পদোন্নতির ক্ষেত্রে প্রশাসনিক সার্ভিসের জন্য বরাদ্দ ৭৫ শতাংশ কোটা কমিয়ে ৫০ শতাংশ করার প্রস্তাবনা দিয়েছে কমিশন। প্রাদেশিক সরকার ব্যবস্থা, ক্যাপিটাল সিটি সরকার, মন্ত্রণালয়ের কলেবর কমিয়ে আনা, সরকারি সেবার প্রাপ্যতা নিয়ে গণশুনানির আয়োজনসহ একগুচ্ছ নতুন সুপারিশ করা হয়েছে।

 

এসব প্রস্তাবনা নিয়ে মিশ্র প্রতিক্রিয়া রয়েছে বিশেষজ্ঞদের। রাষ্ট্রবিজ্ঞানী অধ্যাপক সাব্বির আহমেদ মনে করেন, আয়তনে ছোট বাংলাদেশে প্রাদেশিক ব্যবস্থা চালু করলে আঞ্চলিকতার বিষবাষ্প বাড়তে পারে। তবে আন্তঃক্যাডার বৈষম্য দূর করতে অন্যান্য প্রস্তাবনাকে স্বাগত জানালেন তিনি।

 

আরও পড়ুন: সংস্কার শেষ না করে নির্বাচন দিলে প্রশ্নবিদ্ধ হবে: মুফতি ফয়জুল করীম

 

অধ্যাপক সাব্বির আহমেদ সময় সংবাদকে দেয়া সাক্ষাৎকারে বলেন, 

প্রদেশ করলে মানুষের মধ্যে নোয়াখালী ইজম, চট্টগ্রাম ইজম বা এ জাতীয় আঞ্চলিকতার বিষবাষ্প আরও শক্তিশালী হবে। তখন এটা আমাদের জন্য বুমেরাং হয়ে যেতে পারে।

 

এদিকে আলাদা বিচার বিভাগীয় সচিবালয় প্রতিষ্ঠা, প্রধান বিচারপতি ছাড়া অন্য বিচারক নিয়োগে আলাদা কমিশন গঠন, দেশের সব প্রশাসনিক বিভাগে হাইকোর্টের স্থায়ী বেঞ্চ প্রতিষ্ঠা, জেলা পর্যায়ে বাণিজ্যিক আদালত প্রতিষ্ঠার মতো সুপারিশ করেছে বিচার বিভাগীয় সংস্কার কমিশন।

 

বিচার বিভাগের স্বাধীনতা নিশ্চিতে আলাদা বিচার বিভাগীয় সচিবালয় প্রতিষ্ঠা এবং স্থায়ী অ্যাটর্নি সার্ভিস গঠনের মতো সুপারিশে একমত বেশির ভাগ আইনজীবী।

 

তবে রাজধানীর বাইরে বিভাগীয় শহরে হাইকোর্টের স্থায়ী বেঞ্চ স্থাপন, বিচারক নিয়োগে কমিশন এবং রাষ্ট্রপতির ক্ষমা প্রদর্শনে আলাদা বোর্ড করা নিয়ে একমত নন অ্যাডভোকেট আহসানুল করিম এবং অ্যাডভোকেট শিশির মনির।

 

শিশির মনির বলেন, 

যেহেতু কোনো গাইডলাইন নেই, তাই কী করে রাষ্ট্রপতির ক্ষমতা অনুশীলন করা হবে? যখন যার যেভাবে ইচ্ছা, সেভাবেই ব্যবহার করা হয়েছে। বিভাগীয় পর্যায়ে গিয়ে মানুষের দোরগোড়ায় বিচারকে হাজির করা উচিত, ভোগান্তি কমানো উচিত।

 

আরও পড়ুন: সংস্কারের নামে ষড়যন্ত্র হচ্ছে কিনা দেখতে হবে: তারেক রহমান

 

আর আহসানুল করিম বলেন, ‘যিনি রাষ্ট্রপতি হবেন, তার মানসিকতা পরিবর্তন করতে হবে। বিভাগীয় পর্যায়ে হলে বিচারকরা প্রভাবিত হবেন। বিচারপতিরা আরও বিতর্কিত হবেন।’

 

সংস্কার বাস্তবায়নে শুধু রাজনৈতিক দল নয়, সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের ঐকমত্যের ওপর জোর বিশেষজ্ঞদের।

 

এ বিষয়ে অধ্যাপক সাব্বির আহমেদ বলেন, ‘এই প্রতিষ্ঠানগুলো যেন দলীয় প্রভাবমুক্ত রাখা যায়, সেটা হলো সংস্কারের মূল উদ্দেশ্য।’

 

সংস্কার কমিশনের পূর্ণাঙ্গ প্রতিবেদন ও সুপারিশমালা রাজনৈতিক দল ও গণ-অভ্যুত্থানের পক্ষের শক্তির কাছে পাঠাবে সরকার। আলোচনায় ঐকমত্যের ভিত্তিতে তৈরি হবে ‘জুলাই সনদ’।

]]>
সম্পূর্ণ পড়ুন