বাঁকখালী নদীর তীরে দীর্ঘদিন ধরে গড়ে উঠেছে শত শত অবৈধ স্থাপনা। গত দুই দিনে যৌথ বাহিনীর সহযোগিতায় প্রায় ৭০ একর জমি উদ্ধার করে প্রশাসন।
বুধবার (৩ সেপ্টেম্বর) বেলা ১২টার দিকে কস্তুরাঘাটের পেশকারপাড়া অংশে উচ্ছেদ অভিযানে যায় প্রশাসন। এক্সকাভেটর নিয়ে অবৈধ স্থাপনা গুড়িয়ে দেয়ার প্রস্তুতি নেয়া হলে শুরুতেই বাধা দেন স্থানীয়রা। নারীরা রাস্তায় বসে পড়লে শেষ পর্যন্ত পিছু হটে প্রশাসন। এক্সকাভেটর ফিরিয়ে নেয়ার পর কিছুটা স্বস্তি ফিরে আসে এলাকায়। তবে স্থানীয়দের দাবি, অনেক কষ্টে তৈরি করা বসতি ছেড়ে কোথাও যাবেন না তারা।
বাসিন্দা ছবিরা খাতুন (৫৫) বলেন, ‘আমরা নিরীহ মানুষ। অনেক কষ্টে বসতি করেছি। টাকা-পয়সা নেই, অসহায় মানুষ আমরা। উচ্ছেদ করলে যাওয়ার জায়গা নেই।’ আরেকজন বাসিন্দা রহিমা বেগম (৫০) বলেন, ‘আমরা যেমন মানুষ, আপনারাও মানুষ। আমাদের ঘরবাড়ি উচ্ছেদ করবেন না। আমরা খুবই অসহায়।’
দুপুর ১টার দিকে নদীর অংশ দিয়ে উচ্ছেদ চালাতে গেলে শত শত নারী-পুরুষ জড়ো হয়ে স্লোগান দিতে থাকেন। অনেকেই প্রশাসনের সামনে গিয়ে এক্সকাভেটরের ওপর উঠে পড়েন। তারা জানান, ‘প্রাণ দেব, উচ্ছেদ হতে দেব না।’
বাসিন্দা মনির (৩৭) বলেন, ‘এসব জমির বৈধ কাগজ ও খতিয়ান রয়েছে। প্রাণ দেব তবে উচ্ছেদ হতে দেব না।’
ঘটনাস্থলে বিপুল সংখ্যক পুলিশ, র্যাব ও সেনাবাহিনীর উপস্থিতিতে নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট জনতাকে বারবার সরে যাওয়ার আহ্বান জানালেও তারা সরেননি। ফলে বিকেল ৪টা পর্যন্ত অভিযান শুরু করা সম্ভব হয়নি।
আরও পড়ুন: উচ্ছেদ কার্যক্রমে পুলিশের ওপর হামলা, ২৫০ জনের বিরুদ্ধে মামলা
বিআইডব্লিউটিএর পরিচালক একেএম আরিফ উদ্দিন বলেন, ‘স্বার্থন্বেষী মহল বারবার উচ্ছেদে বাধা সৃষ্টি করেছে। তাই পরিস্থিতি বিবেচনা করে অভিযান চালানো যায়নি। বিষয়টি নিয়ে সেনাবাহিনী, পুলিশ, র্যাব ও জেলা প্রশাসনের সমন্বয়ে বৃহস্পতিবার বৈঠক হবে। এরপর সিদ্ধান্ত নেয়া হবে।’
অভিযানের দ্বিতীয় দিন মঙ্গলবার অবৈধ দখলদারদের ছোড়া ইটের আঘাতে পুলিশের এক সদস্য আহত হন। এ ঘটনায় পুলিশ চারজনকে আটক করে। পরে সরকারি কাজে বাধা ও পুলিশের ওপর হামলার অভিযোগে মামলা করে তাদের আদালতে পাঠানো হয় বলে জানিয়েছেন কক্সবাজার সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) ইলিয়াস খান।
বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌপরিবহন কর্তৃপক্ষ সূত্র জানায়, বান্দরবানের নাইক্ষ্যংছড়ি থেকে উৎপত্তি হয়ে ৮১ কিলোমিটার দীর্ঘ বাঁকখালী নদী রামু ও কক্সবাজার সদর হয়ে বঙ্গোপসাগরে মিশেছে। নুনিয়ারছড়া থেকে মাঝিরঘাট পর্যন্ত ছয় কিলোমিটারে সবচেয়ে বেশি দখল হয়েছে। গত ১০ থেকে ১২ বছরে এখানে এক হাজারের বেশি অবৈধ স্থাপনা নির্মিত হয়। ভূমি অফিস ও বিআইডব্লিউটিএর তৈরি তালিকায় প্রায় সাড়ে ৩০০ জন প্রভাবশালী দখলদারের নাম রয়েছে।
২০১০ সালের ৬ ফেব্রুয়ারি প্রজ্ঞাপনের মাধ্যমে সরকার বিআইডব্লিউটিএকে বাঁকখালী নদীবন্দরের সংরক্ষক নিযুক্ত করে এবং নদীর তীরের ৭২১ একর জমি বুঝিয়ে দেয়ার নির্দেশ দেয়। তবে জেলা প্রশাসন জমি বুঝিয়ে না দেয়ায় দখল অব্যাহত থাকে।
এরই ধারাবাহিকতায় ২০২৩ সালের ২৮ ফেব্রুয়ারি ও ১ মার্চ যৌথ অভিযান চালিয়ে ছয় শতাধিক অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদ করা হয়। তখন ৩০০ একরের বেশি জমি দখলমুক্ত করা হয়েছিল। কিন্তু পরে সেখানে ফের দুই শতাধিক ঘরবাড়ি ও দোকানপাট গড়ে ওঠে।
সম্প্রতি হাইকোর্টের নির্দেশনায় বাঁকখালী নদীর সীমানা নির্ধারণ, সব দখলদারের তালিকা তৈরি এবং চার মাসের মধ্যে উচ্ছেদ ও দূষণ নিয়ন্ত্রণে পদক্ষেপ নিতে বলা হয়েছে।
গত শনিবার কক্সবাজার সফরে এসে নৌপরিবহন উপদেষ্টা অবসরপ্রাপ্ত ব্রিগেডিয়ার জেনারেল ড. এম সাখাওয়াত হোসেন জানান, বাঁকখালী নদীর দখলদারদের সমন্বিত তালিকা করে উচ্ছেদ করা হবে। এর ধারাবাহিকতায় সোমবার শুরু হয় উচ্ছেদ অভিযান।
]]>