ছেলের ‍মুখ হলো না দেখা, বাসচাপায় গেল মা-বাবা ও বোনসহ বিল্লালের প্রাণ

১ দিন আগে
ছেলে সন্তানের মুখ দেখার অপেক্ষায় ছিল পুরো পরিবার। তবে স্ত্রীর শরীর খারাপ হতে থাকলে কোনো ঝুঁকি নিতে চাননি মাওলানা বিল্লাল ফকির। স্ত্রী ও অনাগত সন্তানের সুস্থতার বিষয়টি অগ্রাধিকার দিয়ে অস্ত্রোপচারের জন্য তাদের নিয়ে ঢাকার পথে রওনা হয়েছিলেন। তবে সে যাত্রাই যে শেষ যাত্রা হবে এবং ছেলের মুখ দেখা যে এ জন্মে আর হবে না তা জানতেন না তিনি। বেপরোয়া গতির বাসের ধাক্কায় বাবা-মা ও বোনসহ পরপারে পাড়ি জমান বিল্লাল।

স্বজনরা জানান, বৃহস্পতিবার (৮ মে) সকালে অন্তঃসত্ত্বা স্ত্রী রোজিনা আক্তারকে অ্যাম্বুলেন্সে করে ঢাকায় নিয়ে যাচ্ছিলেন মাদারীপুরের মিঠাপুর এলাকার মাওলানা বিল্লাল ফকির। মাঝপথে ঢাকা-ভাঙ্গা এক্সপ্রেসওয়ের মুন্সীগঞ্জের নিমতলা এলাকায় অ্যাম্বুলেন্সের চাকা ফেটে যায়। অ্যাম্বুলেন্স থামিয়ে চাকা পরিবর্তন করছিলেন চালক। এ সময় কুষ্টিয়া থেকে ঢাকাগামী গোল্ডেন লাইন পরিবহনের যাত্রীবাহী একটি বাস চাপা দিলে ঘটনাস্থলে মারা যান বিল্লাল, তার বাবা সামাদ ফকির, মা সাহেদা বেগম ও তার ছোট বোন আফসানা আক্তার এবং অ্যাম্বুলেন্স চালক মাহবুব সরদার।

 

তবে ভাগ্যক্রমে বেঁচে যান অন্তঃসত্ত্বা গৃহবধূ রোজিনা আক্তার। পরে রাজধানীর একটি বেসরকারি হাসপাতালে অস্ত্রোপচার হলে তার কোলজুড়ে আসে এক ছেলে সন্তান।

 

এদিকে নিহতদের গ্রামের বাড়িতে নেমে এসেছে শোকের ছায়া। ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের (ঢামেক) মর্গে নিহতদের ময়নাতদন্ত হয়। পরে মরদেহ আনা হয় মাদারীপুরে। সেখানে পারিবারিক কবরস্থানে তাদের দাফন করা হবে।

 

আরও পড়ুন: এপ্রিলে সড়কে প্রাণ হারিয়েছেন ৫৮৩ জন

 

বিল্লাল-রোজিনার সংসারে আরও ৩ মেয়ে সন্তান রয়েছে। এ অবস্থায় স্বজনরা সরকারের প্রতি নিহতের পরিবারে পাশে দাঁড়ানোর আহ্বান জানিয়েছেন। নয়তো বাকি সদস্যদের জীবনধারণ কষ্টসাধ্য হয়ে পড়বে।  

 

প্রতিবেশী মুন্নি আক্তার বলেন, একসঙ্গে পরিবারের চার জন মারা যাবেন- এটা কখনো ধারণাও করতে পারিনি।  এ শোক আসলে সইবার নয়।

 

দুর্ঘটনার জন্য বাসের চালককে দায়ী করে বিল্লালের ফুফাতো ভাই মাওলানা গোলাম রহমান বলেন, সড়ক দুর্ঘটনায় প্রাণ গেছে একই পরিবারের চার জনসহ পাঁচ জনের। প্রিয়জনদের হারিয়ে পাগল প্রায় পরিবারের অন্য সদস্যরা। এ ঘটনায় দায়ী গোল্ডেন লাইন পরিবহনের চালকের ফাঁসি চাই। বেপরোয়া গতির কারণেই পাঁচটি তাজা প্রাণ ঝরে গেছে, এর বিচার হতেই হবে।

 

আরও পড়ুন: খুলনা মেডিকেলের হিমঘরের ফ্রিজ নষ্ট, বরফে শোয়ানো মরদেহ!

 

মাদারীপুর সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) ওয়াদিয়া শাবাব জানান, একই সঙ্গে পাঁচজন মারা যাওয়ার ঘটনা খুবই মর্মান্তিক। নিহতদের পরিবারকে এখন সমবেদনা জানানো ছাড়া কিছুই করার নেই। এছাড়া সরকারিভাবে যত ধরনের সহযোগিতা করা যায়, সে বিষয়ে উপজেলা প্রশাসন পাশে থাকবে বলেও আশ্বস্ত করেন তিনি।

]]>
সম্পূর্ণ পড়ুন