শুক্রবার (১৯ সেপ্টেম্বর ) সন্ধ্যা সাড়ে ৬টার দিকে জেলার সদরপুর উপজেলার কৃষ্ণপুর ইউনিয়নের পূর্বকান্দি গ্রামে ঘটনাটি ঘটে। এদিকে শনিবার (২০ সেপ্টেম্বর) সকালে সুমাইয়ার স্বামী রমজান মুন্সীকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য আটক করেছে পুলিশ।
নিহত ছেলে শিশুর নাম হুজাইফা (৪) এবং তার মা সুমাইয়া আক্তার (২২)। পারিবারিক সূত্রে জানা গেছে, সুমাইয়া অন্তঃসত্ত্বা ছিলেন এবং তার সিজারিয়ান ডেলিভারির তারিখ নির্ধারিত ছিল আগামী ২৬ সেপ্টেম্বর।
২০২০ সালে সুমাইয়ার সঙ্গে সদরপুর উপজেলার পূর্বকান্দি গ্রামের মোতালেব মুন্সির ছেলে রমজান মুন্সির বিয়ে হয়। হুজাইফা ছিল তাদের একমাত্র ছেলে সন্তান।
আরও পড়ুন: সিগন্যাল অমান্য করে রেলপথে অটোরিকশা, ট্রেনের ধাক্কায় প্রাণ গেল মা-ছেলের
জানা গেছে, রমজান মুন্সি কয়েক বছর সিঙ্গাপুরে প্রবাসে ছিলেন। তবে দুই বছর আগে দেশে ফিরে আসেন এবং বর্তমানে আবার বিদেশে যাওয়ার প্রস্তুতি নিচ্ছিলেন।
তবে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একাধিক প্রতিবেশী জানান, দাম্পত্য জীবনে রমজান ও সুমাইয়ার মধ্যে প্রায়ই ঝগড়ার শব্দ তারা শুনতেন।
তবে স্থানীয়দের ধারণা, পারিবারিক কলহের জেরে নিজ সন্তানকে হত্যা করে মা নিজে আত্মহত্যা করেছেন।
এদিকে শনিবার সকালে মা ও ছেলের মরদেহ উদ্ধার করে ময়নাতদন্তের জন্য ফরিদপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের মর্গে প্রেরণ করেছে পুলিশ।
অপরদিকে শনিবার সকালে পূর্বকান্দি গ্রামে গিয়ে পরিবারের সদস্যদের কাউকেই পাওয়া যায়নি। ঘরটি তালাবদ্ধ অবস্থায় রয়েছে। বাড়ির বাইরে প্রতিবেশী ও আত্মীয়-স্বজনরা ভিড় করছেন।
খবর পেয়ে গতকাল রাতে অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (ভাঙ্গা সার্কেল) আসিফ ইকবাল ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেন। তিনি জানান, শিশুটিকে গলাকাটা অবস্থায় কম্বল প্যাঁচানো মৃত অবস্থায় ঘরের ভেতর পাওয়া গেছে। আর তার মাকে ঝুলন্ত অবস্থায় উদ্ধার করে হাসপাতালে নেয়া হলে চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন।
তিনি আরো জানান, শিশুটির মরদেহ উদ্ধার করে থানায় আনা হয়েছে। সকালে ময়না তদন্তের জন্য ফরিদপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের মর্গে পাঠানো হয়েছে। এদিকে শিশুটির মাকে ফরিদপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেয়া হলে কর্তব্যরত চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন। মরদেহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে রয়েছে সেখান থেকেই তার ময়নাতদন্ত সম্পন্ন শেষে গ্রামের বাড়িতে আনা হবে।
এদিকে ঘটনাটি নিয়ে এলাকায় শোকের ছায়া নেমে এসেছে। এমন একটি হৃদয়বিদারক ঘটনার পেছনে কী কারণ লুকিয়ে রয়েছে তা জানতে পরিবার ও স্থানীয়দের মধ্যে তৈরি হয়েছে নানা প্রশ্ন।
তবে পুলিশ বলছে, প্রাথমিকভাবে ধারণা করা হচ্ছে, পারিবারিক কলহের জের নিজ সন্তানকে গলা কেটে হত্যা করে আত্মহত্যা করেছেন মা। হত্যাকান্ডের বিষয়ে অন্য কোনো বিষয় আছে কি না সেটা তদন্তে কাজ শুরু করেছে পুলিশ।
আরও পড়ুন: ঝালকাঠিতে একই রশিতে ঝুলছিল মা-ছেলের মরদেহ
সদরপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) সুকদেব রায় জানান, মা ও ছেলের মরদেহ উদ্ধার করে ময়নাতদন্তের জন্য ফরিদপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের মর্গে পাঠানো হয়েছে। এছাড়া সুমাইয়ার স্বামী রমজান মুন্সীকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য আটক করা হয়েছে।
তিনি আরো জানান, প্রাথমিকভাবে ধারণা করা হচ্ছে পারিবারিক কলহের জেরে ছেলেকে হত্যা করে মা আত্মহত্যা করেছে। তবে এর পেছনে অন্য কোনো কারণ আছে কিনা সেটি খতিয়ে দেখছে পুলিশ। এরইমধ্যেই তদন্ত কার্যক্রম শুরু করা হয়েছে। মামলার বিষয়টি প্রক্রিয়াধীন রয়েছে।