ছিন্নমূল মানুষকে মূলধারায় নিয়ে আসার দাবি সমাজকর্মীদের

১ মাস আগে
ঢাকায় ২২ হাজারের বেশি ছিন্নমূল মানুষ রয়েছে বলে জানা যায় ২০২২ সালের সরকারি পরিসংখ্যানের হিসাবে। যদিও বেসরকারি সংস্থার হিসাবে ছাড়িয়েছে ৫০ হাজার। আর সারা দেশে শুধু পথশিশুর সংখ্যাই ১০ থেকে ১৫ লাখ। তারা ন্যূনতম নাগরিক অধিকার থেকে বঞ্চিত, তাদের নিরাপত্তাহীনতাও চরম। এসব ছিন্নমূল মানুষকে মূলধারায় নিয়ে আসার দাবি সমাজকর্মীদের।

৮০ বছরের পারভীন। ৩৪ বছর আগে ভারত থেকে স্বামীর সঙ্গে আসেন বাংলাদেশে। স্বামীর মৃত্যুর পর রাজধানীর কমলাপুর রেলওয়ের প্ল্যাটফর্মেই কাটছে তার জীবন। আপনজন বলতে নেই কেউই।

 

সময় সংবাদকে তিনি বলেন, ‘স্বামী মারা যাওয়ার পর ভারতে আর যাইনি। বসে থাকি। কেউ টাকা দিলে সেগুলো দিয়ে ভাত-রুটি খাই।’

 

কথা হয় ১০ বছরের মীমের সঙ্গে। মেয়ে বলে পরিবারের কাছ থেকেই সইতে হয়েছে অবহেলা-নির্যাতন। বাবার অত্যাচারের কারণে চার বছর ধরে পরিবারছাড়া।

 

আরও পড়ুন: বস্তা, পলিথিন, পুরানো কাপড়ে কোনোমতে বাঁচার চেষ্টা অসহায় মানুষের

 

সে বলে, ‘আমার ভিক্ষা করা লাগে। ভিক্ষার টাকা দিয়ে ভাত কিনে খাই।’  

 

কংক্রিটের এই নগরীতে ফুটপাতই ছিন্নমূল মানুষের বসতি। বেশির ভাগই আশ্রয় খোঁজে বিভিন্ন পার্ক, রেলস্টেশন, বাসস্টেশন, ফেরিঘাট, লঞ্চঘাট, ফুটওভারব্রিজের মতো খোলা জায়গায়। নামমাত্র সাহায্যও জোটে না সবার কপালে।

 

তারা বলছেন, ঘরবাড়ি নেই। বাধ্য হয়েই থাকতে হয় রাস্তায়। সাহায্য যা আসে, তা দিয়ে কিছুই হয় না। কিছু করারও নেই। বাচ্চাদেরকেও মানুষ করা যায় না।  

 

২০২২ সালের জনশুমারি অনুযায়ী, সারা দেশে ২২ হাজার ১১৯ জন ছিন্নমূল বা গৃহহীন মানুষ রয়েছে। আবার ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষণা বলছে, শুধু ঢাকা শহরেই প্রায় ৫০ হাজার ছিন্নমূল মানুষের বসবাস। আর বেসরকারি বিভিন্ন সংস্থার মতে, সারা দেশে শুধু পথশিশুর সংখ্যাই ১০ থেকে ১৫ লাখ। তাদের অনেকেই জড়িয়ে পড়ছে নানা অপরাধে। তবে লেখাপড়া করানোর পাশাপাশি প্রশিক্ষণ দিয়ে তাদের অনেকেরই কাজের ব্যবস্থা করছে দেশি-বিদেশি বিভিন্ন উন্নয়ন সংস্থা।

 

লিডো-আন্ডার দ্য স্কাইয়ের সামাজিক সংগঠক মো. সুজন মিয়া বলেন, ‘এখানে প্রায় সাড়ে চারশোর মতো বাচ্চা আছে। আমাদের স্কুলে আছে ৩০ জন।’  

 

আরও পড়ুন: অসহায়ের বিপদে পাশে দাঁড়ানোর ফজিলত

 

ছিন্নমূল মানুষদের নেই কোনো স্থায়ী ঠিকানা, তাই দেয়া হয় না কোনো পরিচয়পত্র। রাষ্ট্রের দায়িত্ব থমকে থাকে বিভিন্ন প্রকল্প গ্রহণ ও কিঞ্চিত বাস্তবায়নের মধ্যে। তবে সম্প্রতি অন্তর্বর্তী সরকার ছিন্নমূল মানুষ বা বস্তিবাসীদের নাগরিক সুরক্ষাসেবা নীতিমালায় আনতে পারে বলে জানান সমাজকর্মীরা।

 

কোয়ালিশন ফর আন্ডার পোভার্টির ব্যবস্থাপনা পরিচালক খন্দকার রেবেকা সেরনিয়াবাত বলেন, 

ছিন্নমূলদের স্বাবলম্বী করার জন্য বাস্তবধর্মী পদক্ষেপ নিতে হবে। তাদেরকে নাগরিকত্ব দিতে হবে। তাদেরকে জাতীয় পরিচয়পত্র দিতে হবে। তাদেরকে সামাজিক সুরক্ষা সেবা দিতে কার্ড দিতে হবে। তারা ওয়ার্ডভিত্তিক সেবা নেবেন।  

 

সমন্বিত নীতিমালা বাস্তবায়ন করে ছিন্নমূলদের স্বাবলম্বী করার পরামর্শ সমাজবিজ্ঞানীদের।

]]>
সম্পূর্ণ পড়ুন