বিশ্ববিদ্যালয়ের জনসংযোগ দফতর সূত্রে জানা যায়, বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনে হামলাসহ বিশ্ববিদ্যালয়ের শৃঙ্খলা পরিপন্থী কর্মকাণ্ডে জড়িত থাকার কারণে অপরাধের ধরণ ও মাত্রাভেদে ৬ জনকে স্থায়ী বহিষ্কার (তবে ছাত্রত্ব না থাকলে সনদ বাতিল), পাঁচ জনকে দুই বছরের জন্য, চার জনকে ১ বছরের, দুই জনকে ৬ মাসের বহিষ্কার, এক জনকে ৬ মাসের জন্য বহিষ্কার ও পাঁচ হাজার টাকা জরিমানা, এক জনকে পাঁচ হাজার টাকা জরিমানা এবং ১৩ জনের আবাসিকতা বাতিল করা হয়েছে।
শাস্তি পাওয়া শিক্ষার্থীদের তালিকা বিশ্লেষণ করে দেখা গেছে, স্থায়ী বহিষ্কৃতদের ছয় জনই ছাত্রলীগের নেতাকর্মী। তারা হলেন- বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি গোলাম কিবরিয়া, সাবেক সাধারণ সম্পাদক ফয়সাল আহমেদ রুনু, বর্তমান সভাপতি মোস্তাফিজুর রহমান বাবু, সাধারণ সম্পাদক আসাদুল্লা-হিল-গালিব, বিশ্ববিদ্যালয়ের মাদার বখ্শ হল শাখা ছাত্রলীগের সাবেক যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক জয়ন্ত কুমার রায় ও ছাত্রলীগ কর্মী মিশকাত হাসান।
আরও পড়ুন: আওয়ামী লীগ-ছাত্রলীগ নেতাদের গ্রেফতার দাবিতে এসপি অফিস ঘেরাও
দুই বছরের জন্য বহিষ্কার করা হয়েছে পাঁচ জনকে। তাদের মধ্যে চার জনই ছাত্রলীগের নেতাকর্মী। তারা হলেন- বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান হল শাখা ছাত্রলীগের সাবেক দফতর সম্পাদক মিনহাজুল ইসলাম, নবাব আব্দুল লতিফ হলের সাবেক সাংগঠনিক সম্পাদক শামীম রেজা, ছাত্রলীগের কর্মী আব্দুল্লাহ আত তাসরিফ ও মুজাহিদ আল হাসান। এছাড়া আরবি বিভাগের ২০১৮-১৯ শিক্ষাবর্ষের আরিফুল ইসলামকেও দুই বছরের জন্য বহিষ্কার করা হয়েছে।
এক বছরের জন্য বহিষ্কার হওয়া ৪ জনের তিনজনই ছাত্রলীগের নেতাকর্মী। তারা হলেন, রোকেয়া হল শাখা ছাত্রলীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক আলফি শাহরিন আরিয়ানা, মাদার বখ্শ হলের সাবেক যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক কিশোর পাল ও ছাত্রলীগ কর্মী জারিফা আহনাফ ইলমা। অপর শিক্ষার্থী হলেন প্রাণিবিদ্যা বিভাগের ২০২১-২২ শিক্ষাবর্ষের আহসানুল হক মিলন।
ছয় মাসের জন্য বহিষ্কার হয়েছেন ছাত্রলীগ কর্মী আনিকা আলম ঊষা ও মরিয়ম আক্তার শান্তা। এছাড়া ৬ মাসের জন্য বহিষ্কার ও ৫ হাজার টাকা জরিমানা করা হয়েছে বিশ্ববিদ্যালয়ের মার্কেটিং বিভাগের চতুর্থ বর্ষের শিক্ষার্থী অন্তর বিশ্বাসকে। একই বিভাগের শিক্ষার্থী নাজমুল হোসেন নাবিলকে ৫ হাজার টাকা আর্থিক জরিমানা করা হয়েছে।
আরও পড়ুন: ছাত্রীকে উত্ত্যক্ত করায় নিষিদ্ধ ছাত্রলীগের শিশু সম্পাদককে গণপিটুনি
অন্যদিকে ১৩ শিক্ষার্থীর হলের আবাসিকতা বাতিল করা হয়েছে। তাদের মধ্যে ১০ জনই ছাত্রলীগ নেতাকর্মী। তারা হলেন, বঙ্গমাতা শেখ ফজিলাতুন্নেছা হল ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি তাজরীন আহমেদ খান মেধা, সাবেক যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আশা খাতুন ও নবনীতা বিশ্বাস, সাংস্কৃতিক সম্পাদক নুসরাত জাহান পাপড়ি, মুক্তিযুদ্ধ ও গবেষণা সম্পাদক নুর ই জান্নাত কথা, গ্রন্থণা ও প্রকাশনা সম্পাদক ফারিনা জামান মিম, সহ-সম্পাদক লিমা খাতুন, উপ-প্রচার সম্পাদক বাবলি আক্তার, দফতর সম্পাদক জাফরিন খান প্রিয়া ও সাংগঠনিক সম্পাদক রাইতাহ ইসলাম।
এছাড়া চারুকলা অনুষদের ২০১৯-২০ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থী বাবলী ইসলাম নিঝুম, সমাজকর্ম বিভাগের ২০২০-২১ শিক্ষাবর্ষের কাজী উর্বি ইয়াসমিন রুপ এবং ভূগোল ও পরিবেশবিদ্যা বিভাগের ২০২১-২২ শিক্ষাবর্ষের আফরিদা বিনতে ইকবালের আবাসিকতাও বাতিল করা হয়েছে।
এ বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক সালেহ্ হাসান নকীব বলেন, ‘শাস্তি পাওয়া শিক্ষার্থীদের একটা বড় অংশ একটি রাজনৈতিক দলের। তবে তাদেরকে রাজনৈতিক বিবেচনায় কোনো শাস্তি দেয়া হয়নি; বরং সুনির্দিষ্ট অভিযোগের ভিত্তিতে শাস্তি দেয়া হয়েছে। এ জায়গায় বার্তা থাকবে ভবিষ্যতে এ ধরনের অপরাধের সঙ্গে কেউ জড়িত থাকলে তাকে দল-মত নির্বিশেষে শাস্তি পেতে হবে।’
]]>