রোববার (১৮ মে) বিকেলে রাজধানীর শাহবাগ মোড়ে প্রতিবাদ সমাবেশ থেকে এই হুঁশিয়ারি দেন ছাত্রদলের সভাপতি।
তিনি বলেন, ‘বিগত সাড়ে ১৫ বছরে ছাত্রদলের জ্যেষ্ঠ নেতাকর্মী গুম-খুনের শিকার হয়েছেন, নির্যাতিত হয়েছেন, সেই সব পরিবারের প্রতি অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রধান ড. মুহাম্মদ ইউনূসের সামান্যতম সহানুভূতি দেখিনি।’
‘এই সরকারের নয় মাস অতিবাহিত হয়েছে, পারভেজ-সাম্য খুন হয়, ছাত্রদলের নেতাকর্মীরা এখনো খুন হয় কিন্তু সরকারের শীর্ষ পর্যায় থেকে কোনো বক্তব্য বা সদিচ্ছা লক্ষ্য করিনি।’
তিনি বলেন, ‘আমরা স্পষ্ট ভাষায় বলে দিতে চাই, যদি ছাত্রদল মনে করে, এই শাহবাগ চত্বর থেকে যমুনায় আমরা পদযাত্রা শুরু করি সেই পদযাত্রা রোখার ক্ষমতা কারো নেই।’
সরকারকে উদ্দেশ করে তিনি বলেন, ‘যদি তাদের ষড়যন্ত্রমূলক এবং সদিচ্ছার অভাব ভবিষ্যতে লক্ষ্য করি তাহলে ছাত্রদলের যাত্রা হবে যমুনায়। আমরা আমাদের দাবি-দাওয়া আদায় করে বাসায় ফিরবো। আমরা যতক্ষণ চাইবো যমুনা অবরোধ করে রাখবো।’
আরও পড়ুন: সাম্য হত্যা / ঢাবির ভিসি-প্রোক্টর পদত্যাগ না করলে বৃহৎ আন্দোলনের হুঁশিয়ারি ছাত্রদলের
প্রতিবাদ সভায় ছাত্রদলের সাধারণ সম্পাদক নাসির উদ্দিন নাসির বলেন, ‘আমরা দেখেছি, গণঅভ্যুত্থান পরবর্তী সময়ে যমুনাতে একদল আন্দোলন সংগ্রাম করলে তাদেরকে পানি ছিটিয়ে স্বাগত জানানো হয় কিন্তু জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের যৌক্তিক আন্দোলনে পুলিশ হামলা চালিয়ে আন্দোলন নস্যাৎ করার অপচেষ্টা করেছে।’
সাম্যর প্রকৃত হত্যাকারীদের গ্রেফতার করার কোনো নমুনা এখনো পর্যন্ত দেখা যাচ্ছে না দাবি করে তিনি বলেন, ‘খুব দ্রুত সময়ের মধ্যে যদি সাম্যর প্রকৃত হত্যাকারীদের গ্রেফতার করা না হয় তাহলে বাংলাদেশের প্রতিটি শিক্ষাঙ্গনে ছাত্রদল অবস্থান গ্রহণ করবে এবং সাধারণ শিক্ষার্থীদের সঙ্গে নিয়ে আন্দোলন-সংগ্রামের মধ্যে সাম্যর প্রকৃত হত্যাকারীদের বিচার প্রক্রিয়া শুরু করবে বলে আমরা ঘোষণা করছি।’
এর আগে বিকেল পৌনে ৪টার দিকে সাম্য হত্যা মামলার তদন্তে গাফিলতির প্রতিবাদে ও মূল হত্যাকারীদের গ্রেফতারের দাবিতে রাজধানী ঢাকার শাহবাগ মোড় অবরোধ করেন ছাত্রদলের নেতাকর্মীরা। এতে প্রায় দুই ঘণ্টা যান চলাচল বন্ধ থাকে।
আরও পড়ুন: সাম্য হত্যার তদন্ত ডিবির কাছে হস্তান্তরের আশ্বাস স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টার
শাহবাগ অবরোধ করে ছাত্রদলের নেতাকর্মী সাম্য হত্যার বিচার দাবিতে বিভিন্ন স্লোগান দেন। নেতাকর্মীরা শাহবাগ মোড়ের সড়কে বসে পড়েন এবং ছাত্রদলের কেন্দ্রীয় সভাপতি রাকিবুল ইসলাম ও সাধারণ সম্পাদক নাছির উদ্দীন মেট্রোরেল স্টেশনের কাছে অবস্থান নিয়ে বক্তব্য দেন।
এর আগে দুপুর ১২টার দিকে শাহরিয়ার হত্যার ‘প্রকৃত’ আসামিদের গ্রেপ্তারের দাবিতে শিক্ষার্থীরা মিছিল নিয়ে শাহবাগ থানা ঘেরাও করেন।
শনিবার সংবাদ বিজ্ঞপ্তি দিয়ে কেন্দ্রীয় ছাত্রদল শাহবাগে জাতীয় জাদুঘরের সামনে প্রতিবাদ সমাবেশের ঘোষণা দেয়। তারা জানিয়েছিল, শাহরিয়ার আলম সাম্যর হত্যা মামলার তদন্তে গাফিলতির প্রতিবাদে এবং মূল হত্যাকারীসহ সব আসামিকে অবিলম্বে গ্রেফতার, সুষ্ঠু বিচার এবং নিরাপদ ক্যাম্পাসের দাবিতে এই সমাবেশ হবে। পাশাপাশি দেশের সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানেও প্রতিবাদ কর্মসূচি পালন করা হবে।
গত ১৩ মে রাতে সোহরাওয়ার্দী উদ্যানের মুক্ত মঞ্চের পাশে দুর্বৃত্তের ছুরিকাঘাতে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী সাম্য নিহত হন। তিনি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষা ও গবেষণা ইনস্টিটিউটের ২০১৮-১৯ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থী এবং স্যার এ এফ রহমান হল শাখা ছাত্রদলের সাহিত্য ও প্রকাশনাবিষয়ক সম্পাদক ছিলেন।
এ ঘটনায় গত বুধবার সকালে নিহত শাহরিয়ারের ভাই শরীফুল আলম বাদী হয়ে শাহবাগ থানায় মামলা করেন। গ্রেপ্তার করা হয় তিনজনকে। গ্রেপ্তার তিনজনকে ছয় দিনের রিমান্ডে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করার অনুমতি দিয়েছেন আদালত।