মঙ্গলবার (১৪ জানুয়ারি) রাতে রাজধানীর বসুন্ধরা আবাসিক এলাকা থেকে তাদের গ্রেফতার করা হয় বলে জানান ডিএমপির উপকমিশনার (মিডিয়া ও পাবলিক রিলেশনস) মুহাম্মদ তালেবুর রহমান। তবে কোন মামলায় তাদের গ্রেফতার করা হয়েছে তা স্পষ্ট করেননি তিনি।
গত বছর ঈদুল আজহার আগে মতিউর রহমানের ছেলে মুশফিকুর রহমান ইফাতের ১৫ লাখ টাকায় একটি ছাগল কেনার ভিডিও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ভাইরাল হয়। এর পরিপ্রেক্ষিতেই এনবিআরের এই কর্মকর্তার সম্পদের উৎস নিয়ে প্রশ্ন ওঠে।
আরও পড়ুন: ছাগলকাণ্ডের মতিউর ও তার পরিবারের সদস্যদের নামে ৩ মামলা
যদিও প্রথমে ছেলের পরিচয় ‘অস্বীকার’ করেন মতিউর রহমান। সময় সংবাদের এক প্রশ্নের জবাবে তিনি দাবি করেন, মুশফিকুর রহমান ইফাত নামে কেউ তার ছেলে বা আত্মীয় নয়, এমন নামে কাউকে চেনেন না পর্যন্ত। তার একটিই ছেলে, তার নাম তৌফিকুর রহমান।
এরপর ইফাতের পরিচয় নিয়ে ফেসবুকে নানা তথ্য আসতে থাকে। ইফাতের সঙ্গে মতিউর রহমান এবং পরিবারের অন্যদের ছবিও প্রকাশিত হয়।
এক পর্যায়ে সামনে আসেন ফেনী-২ আসনের সাবেক সংসদ সদস্য নিজাম উদ্দিন হাজারী। তিনি দাবি করেন, ইফাত এনবিআর কর্মকর্তা মতিউর রহমানের দ্বিতীয় পক্ষের (স্ত্রীর) ছেলে। মতিউর রহমানের প্রথম স্ত্রী লায়লা কানিজ লাকি ছিলেন শিক্ষা ক্যাডারের সাবেক কর্মকর্তা। সরকারি চাকরি ছেড়ে তিনি নাম লেখান রাজনীতিতে। তিনি নরসিংদীর রায়পুরা উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান।
এরপর আলোচনা চলে মতিউর রহমান ও তার পরিবারের সদস্যদের কোথায় কী পরিমাণ সম্পদ রয়েছে এসব নিয়ে। একের পর এক বেরিয়ে আসতে থাকে মতিউর পরিবারের বিপুল বিত্তবৈভবের চাঞ্চল্যকর তথ্য।
আরও পড়ুন: পরিবারের সদস্যসহ বেনজীর ও মতিউরের বিরুদ্ধে ৬ মামলা
পরে গত বছরের ৪ জুন মতিউর ও তার পরিবারের সদস্যদের জ্ঞাত আয়বহির্ভূত সম্পদের অনুসন্ধানের নামে দুর্নীতি দমন কমিশন। অনুসন্ধানে মতিউর ও তার পরিবারের সদস্যদের নামে ৬৫ বিঘা জমি, ৮টি ফ্ল্যাট, দুটি রিসোর্ট ও পিকনিক স্পট এবং তিনটি শিল্পপ্রতিষ্ঠানের তথ্য পায় দুদক। মতিউর রহমান ও তার পরিবারের সদস্যদের নামে থাকা ব্যাংক হিসাব, মোবাইল ফোনে আর্থিক সেবার হিসাব ও শেয়ারবাজারের বিও হিসাব জব্দ করা হয়।
এরপর ২৪ জুন মতিউর ও তার প্রথম পক্ষের স্ত্রী এবং সন্তানের বিদেশযাত্রায় নিষেধাজ্ঞা দেন আদালত। গত ২ জুলাই মতিউর রহমান ও তার পরিবারের সদস্যদের সম্পদ বিবরণী চেয়ে পৃথক নোটিশ পাঠায় দুদক।
দুর্নীতির অভিযোগ নিয়ে আলোচনার মধ্যে মতিউরকে এনবিআরের দায়িত্ব থেকে সরিয়ে অভ্যন্তরীণ সম্পদ বিভাগে সংযুক্ত করে অর্থ মন্ত্রণালয়। বাদ পড়েন সোনালী ব্যাংকের পরিচালক পর্ষদ থেকেও। এরপর ৩১ জুলাই মতিউর রহমানের আবেদনের ভিত্তিতে তাকে স্বেচ্ছা অবসরে পাঠানো হয় বলে প্রজ্ঞাপন জারি করে অভ্যন্তরীণ সম্পদ বিভাগ (আইআরডি)।
এদিকে দুদকের নোটিশের পরিপ্রেক্ষিতে ২৯ আগস্ট দুই স্ত্রী এবং ছেলে-মেয়েসহ পাঁচজনের সম্পদ বিবরণী দুদকে জমা দেন মতিউর।
আরও পড়ুন: ছাগলকাণ্ডের সেই মতিউরের স্ত্রী-সন্তানসহ দেশত্যাগে ফের নিষেধাজ্ঞা
সবশেষ চলতি বছরের ৬ জানুয়ারি, অবৈধভাবে সম্পদ অর্জনের অভিযোগে মতিউর, লায়লা কানিজ, তাদের মেয়ে ফারজানা রহমান ইপ্সিতা এবং অর্ণবের বিরুদ্ধে আলাদা মামলা করে দুদক।
]]>