সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, গাছে থোকায় থোকায় ঝুলছে আঙ্গুর। আঙ্গুরের ভারে গাছ নুয়ে মাটিতে পড়লে বাঁশের খুঁটি ও মাচা দেয়া হয়েছে। পাখিসহ অন্য প্রাণীদের থেকে পাকা আঙ্গুর রক্ষা করতে গাছের ওপরে নেটের জাল দেয়া হয়েছে। বাগানে গিয়ে দেখেলে মনে হবে বিদেশের মাটিতে আঙ্গুর চাষ হচ্ছে। অসম্ভবকে সম্ভব করে তুলেছে জীবননগর উপজেলার কৃষি উদ্যোক্তারা।
আঙ্গুরের বাগান দেখতে দূর-দূরান্ত থেকে আসছেন সাধারণ মানুষ। মিষ্টি ও পুষ্টিগুণে ভরা এ ফলের দেশের বাজারে ব্যাপক চাহিদা রয়েছে। আঙ্গুর বিদেশ থেকে আমদানি করে প্রতি বছর দেশে চাহিদা মেটাতে হয়। আঙ্গুর চাষ দেশব্যাপি ছড়িয়ে দিতে পারলে আমদানি নির্ভরতা হ্রাস পাবে।
জানা যায়, চুয়াডাঙ্গার জীবননগরের পেঁয়ারাতলা গ্রামের তরুণ কৃষি উদ্যোক্তা রুহুল আমিন রিটন ২০১৯ সালে অল্প পরিসরে পরীক্ষামূলকভাবে আঙ্গুর চাষ শুরু করেন। তবে আঙ্গুরের ফলন ভালো হত না। আঙ্গুর গাছের জাত পরিবর্তন করেও সফলতা পাচ্ছিলেন না কৃষি উদ্যোক্তারা। সবশেষ বাইকুনুর জাতের আঙ্গুর চাষ করে সফলতা পান তারা। এরপর বেশ কয়েক জন কৃষক উপজেলার বিভিন্ন গ্রামে ছোট-বড় পরিসরে আঙ্গুর বাগান গড়ে তোলেন বাণিজ্যিকভাবে চাষ করার জন্য।
আরও পড়ুন: সুপার ফুড কিনোয়া চাষে সাবেক সেনাসদস্যের অভাবনীয় সাফল্য
২০২৪ সালে আঙ্গুর বাগানে ফুল আর ফল আসে। বাগান মালিকরা আশাবাদী হয়ে ওঠেন এ এলাকার আবহাওয়া ও মাটিতে আঙ্গুর চাষ করে সফলতা পাওয়া যাবে। এ বছর সবগুলো আঙ্গুর বাগানে ফুল আসে অনেক। ফুল থেকে ফলে পরিণত হয়। বাগানজুরে ফল আর ফল থোকায় থোকায় ঝুলছে। বেশ কয়েকটি বিদেশি জাতের আঙ্গুর গাছ রোপণ করেন বাগান মালিকরা। এ বছর বাইকুনুর জাতের আঙ্গুর বাগানে মার্চ মাসের শুরু থেকে গাছে ফুলে ভরে যায়। ফুল আসার ২০-২৫ দিনের মধ্য ফলে রূপ নেয়। ২০-৩০ দিনের মধ্য আঙ্গুর পাকতে শুরু করবে।

আঙ্গুর চাষ সহজ ও লাভজনক হওয়ায় কৃষকরা আগ্রহ দেখান। নিয়মিত পরিচর্যায় সার, কীটনাশক, সেচ দিতে হয়। এক বিঘা জমিতে ২০০টি আঙ্গুর গাছ রোপণ করতে হয়।
আঙ্গুর চাষি আশরাফুল ইসলাম জানান, ছোট বেলা থেকেই আঙ্গুর গাছ লাগানোর শখ ছিল। বাজার থেকে যতবার চারা কিনেছি গাছ বড় হয়েছে, কিন্তু ফল আসেনি। কয়েক বছর ধরে দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে চারা সংগ্রহ করে রোপণ করলেও তাতে ফল আসেনি। ২০২৪ সালের শুরুর দিকে হাসাদহ গ্রামে সাড়ে তিন বিঘা জমিতে বাইকুনুর জাতের আঙ্গুরের ৮০০ চারা রোপণ করি। কিছু গাছ মারা যায়। গাছ লাগানোর ৫ মাস পর অল্প পরিসরে ফল আসে। পাকা ফলগুলো মিষ্টি হয়।
আরও পড়ুন: মরুর ‘সাম্মাম’ চাষ হচ্ছে পটুয়াখালীতে
তিনি আরও বলেন, ‘এ বছর বাগানে পরিপূর্ণ ফল আসে; যা দেখে আমরা প্রথমে বিশ্বাস করতে পারছিলাম না। প্রতিটি গাছে ১৫-২০ কেজি ফল ধরেছে। নিয়মিত পরিচর্যা করতে হচ্ছে। বাজারে আঙ্গুরের ব্যাপক চাহিদা রয়েছে। ৩৫ বিঘা জমি থেকে এ মৌসুমে প্রায় ৩০০ মণ আঙ্গুর উৎপাদন হবে। যার বাজার মূল্য প্রায় ৩০ লাখ টাকা।’
জীবননগর রায়পুর গ্রামের সাদ্দাম হোসেন বলেন, ‘সাত বিঘা জমিতে আঙ্গুর বাগান রয়েছে। ফলন অনেক হয়েছে। আঙ্গুর চাষ সহজ ও লাভজনক। খরচ তুলনামূলক কম। দেশের মাটিতে আঙ্গুর চাষ ছড়িয়ে দেয়া সম্ভব। এ উপজেলায় বিদেশি সব ফলের চাষ করে সফলতা পেয়েছেন কৃষকরা।’
জীবননগর উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মো. আলমগির হোসেন জানান, কয়েক বছর ধরে চাষ হলেও ফলন পাচ্ছিলেন না কৃষকরা। মিষ্টি, সিডলেস হলে সফলতা আসবে। এরপর সারা দেশে সম্প্রসারণ করতে নানামুখী উদ্যোগ গ্রহণ করা হবে। আঙ্গুর চাষিদের সব ধরনের সহযোগিতা করা হবে। এ বছর ফলন অনেক বেশি হয়েছে। ২০০ টাকা কেজি দরে বিক্রি করলেও অনেক লাভবান হবেন কৃষকরা।