মার্কিন সংবাদমাধ্যম ওয়াল স্ট্রিট জার্নালের এক প্রতিবেদনেও বলা হয়েছে, শুল্ক নিয়ে চীনের সঙ্গে চলমান উত্তেজনা প্রশমনের চেষ্টা হিসেবে দেশটির পণ্যের ওপর শুল্ক হ্রাসের কথা বিবেচনা করছে হোয়াইট হাউস। পরিকল্পনার অংশ হিসেবে বর্তমানে চীনা পণ্যের ওপর আরোপিত ১৪৫ শতাংশ শুল্ক ৫০ থেকে ৬৫ শতাংশে নামিয়ে আনা হতে পারে।
অবশ্য গত মঙ্গলবারই (২২ এপ্রিল) চীনের সঙ্গে চলমান শুল্কযুদ্ধে ট্রাম্পের পিছু হটার স্পষ্ট ইঙ্গিত মেলে। মার্কিন প্রেসিডেন্ট বলেন, চীন থেকে আমদানি করা বেশিরভাগ পণ্যের ওপর অতিরিক্ত যে শুল্ক আরোপ করা হয়েছে, তা ‘উল্লেখযোগ্যভাবে কমবে, তবে শূন্যে নামবে না’।
হোয়াইট হাউসে এক সংবাদ সম্মেলনে মার্কিন অর্থমন্ত্রী স্কট বেসেন্টের আগের মন্তব্যের প্রতিক্রিয়ায় চীনের ওপর শুল্ক নিয়ে এ কথা বলেন ট্রাম্প। এর আগে মার্কিন অর্থমন্ত্রী বেসেন্ট বলেন, উচ্চ শুল্কারোপ টেকসই নয় এবং তিনি বিশ্বের দুটি বৃহত্তম অর্থনীতির দেশের মধ্যে শুল্কযুদ্ধের চলমান উত্তেজনা হ্রাস পাবে আশা করছেন।
আরও পড়ুন: চীনের সঙ্গে শুল্কযুদ্ধে পিছু হটলেন ট্রাম্প
ডোনাল্ড ট্রাম্প দ্বিতীয় মেয়াদে ক্ষমতায় নেয়ার পর থেকে চীনের সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের কূটনৈতিক সম্পর্ক তলানির দিকে। দু’দেশের শুল্ক সংঘাতের আবহে তা আরও বৃদ্ধি পায়। চলতি বছরের শুরুর দিকেই চীনা পণ্যের ওপর ২০ শতাংশ শুল্ক চাপায় ওয়াশিংটন।
এরপর চলতি মাসের শুরুর দিকে (২ এপ্রিল) বিশ্বের বহু দেশের পাশাপাশি চীনা পণ্যের ওপর আরও একবার ৩৪ শতাংশ শুল্ক চাপান ট্রাম্প। চীন পাল্টা শুল্ক চাপালে ট্রাম্প আরও ৫০ শতাংশ শুল্ক বৃদ্ধির ঘোষণা দেন। এতে মোট শুল্কের পরিমাণ দাঁড়ায় ৮৪ শতাংশ। তার সঙ্গে পূর্বের ২০ শতাংশ শুল্ক যুক্ত করলে মোট শুল্ক দাঁড়ায় ১০৪ শতাংশে।
এরপরও থামেননি ট্রাম্প। আরও এক দফায় শুল্ক বাড়িয়ে ১২৫ শতাংশ করেন। গত বৃহস্পতিবার (১০ এপ্রিল) সেই শুল্কের পরিমাণ বাড়িয়ে ১৪৫ শতাংশ করা হয়। পরদিন শুক্রবার (১১ এপ্রিল) শুল্ক বৃদ্ধি করে পাল্টা জবাব দেয় বেইজিংও। দেশটির কর্মকর্তারা ঘোষণা করেন, ৮৪ নয়, এবার থেকে মার্কিন পণ্যের ওপর ১২৫ শতাংশ আমদানি শুল্ক ধার্য করা হচ্ছে।
জবাবে চীনা পণ্যের ওপর শুল্ক আরও ১০০ শতাংশ বাড়ায় যুক্তরাষ্ট্র। গত ১৫ এপ্রিল হোয়াইট হাউস এক বিবৃতিতে জানায়, ‘প্রতিশোধমূলক পদক্ষেপের ফলে চীনা পণ্য এখন থেকে যুক্তরাষ্ট্রে ২৪৫ শতাংশ পর্যন্ত শুল্কের মুখোমুখি হবে।’
আরও পড়ুন: শুল্ক ইস্যুতে এবার ট্রাম্পের সুর নরম!
ডোনাল্ড ট্রাম্পের শুল্কারোপের ঘোষণা পুরো বিশ্বকে নাড়িয়ে দেয়। শুরু হয় আলোচনা-সমালোচনা ও বিতর্ক। কয়েকদিনের উত্তাপের পর শুল্ক ইস্যুতে সুর নরম করে মার্কিন প্রেসিডেন্ট। চীনের সঙ্গে পাল্টাপাল্টি শুল্ক বৃদ্ধির লড়াই অবসানের ইঙ্গিত দেন তিনি।
গত বৃহস্পতিবারই (১৭ এপ্রিল) হোয়াইট হাউসে এক সংবাদ সম্মেলনে ট্রাম্প বলেন, ‘শুল্ক আর না বাড়ুক। কারণ শুল্ক বাড়তে থাকলে মানুষ আর পণ্য কিনবে না।’ তিনি আরও বলেন, ‘সুতরাং, আমি হয়তো আরও বাড়াতে চাই না, এমনকি ওই স্তর পর্যন্তও যেতে চাই না। আমি হয়তো কমাতে চাইতে পারি।’
এরপর গত মঙ্গলবার চীনের ওপর আরোপিত শুল্ক কমানোর স্পষ্ট ইঙ্গিত দিলেন ট্রাম্প। এদিন ওভাল অফিসে বসে দেয়া এক বক্তব্যে ট্রাম্প বলেন, তিনি বেইজিংয়ের সঙ্গে আসন্ন আলোচনায় অনেক সদয় হবেন। একই সঙ্গে তিনি জোর দিয়ে এটাও বলেন যে, শেষ পর্যন্ত চীনকে বাধ্য হয়েই কোনো না কোনো চুক্তিতে আসতে হবে, অন্যথায় তারা আর যুক্তরাষ্ট্রের বাজারে ব্যবসা করতে পারবে না।
তার ভাষায়,
শেষ পর্যন্ত তাদের একটা চুক্তি করতেই হবে। না করলে তারা যুক্তরাষ্ট্রে ব্যবসা করতে পারবে না। আমরা চাই তারা ব্যবসায় যুক্ত থাকুক, কিন্তু তাদের ও অন্য দেশগুলোকেও একটা চুক্তি করতে হবে। তারা যদি তা না করে, তাহলে আমরাই চুক্তির শর্ত ঠিক করব।
আরও পড়ুন: চীন থেকে যুক্তরাষ্ট্রে ফেরত গেল বোয়িং বিমান
তিনি এ সময় জোর দিয়ে বলেন, ‘আমরাই চুক্তির শর্ত নির্ধারণ করব এবং সেটা সবার জন্য ন্যায্য হবে। পুরো প্রক্রিয়াটা খুব দ্রুতই এগোবে।’ এ সময় চীনা পণ্যের ওপর আরোপিত শুল্ক কমানো হবে কি না, এমন প্রশ্নের জবাবে ট্রাম্প বলেন, ‘হ্যাঁ, এটা অনেক কমে আসবে। তবে শূন্য হবে না।’
তবে হোয়াইট হাউসের পক্ষ থেকে ২৪৫ শতাংশ শুল্কের ঘোষণা দেয়া হলেও ট্রাম্প এদিন সেটাকে ১৪৫ শতাংশ বলে উল্লেখ করেন। তিনি বলেন,
১৪৫ শতাংশ শুল্ক খুবই বেশি এবং এটা এতটা বেড়েছে কারণ আমরা তখন ফেন্টানিল নিয়ে আলোচনা করছিলাম। তবে এই শুল্ক কমে আসবে অনেকটাই, যদিও তা একেবারে শূন্য হবে না।
]]>