চায়ের দোকানে হচ্ছে বিপিএলের টিকিট সিন্ডিকেট ও ছিনতাই চক্রের নিয়ন্ত্রণ!

৩ সপ্তাহ আগে
বিপিএলের টিকিট বিক্রিকে কেন্দ্র করে সিলেটে গড়ে উঠেছে সিন্ডিকেট। সুযোগ বুঝে ছিনতাইয়ের ছকও আকাঁ হচ্ছে। সবই হচ্ছে চায়ের দোকান থেকে। দর্শকদের এমন অভিযোগের ভিত্তিতে অনুসন্ধান শুরু করে সময় নিউজ।

সংযুক্ত আরব আমিরাত প্রবাসী ফাহিম আহমেদ ও শিক্ষার্থী সাব্বির আহমেদ সৌরভ মৌলভীবাজারের বড়লেখা উপজেলা থেকে সিলেট ক্রিকেট স্টেডিয়ামে এসেছিলেন বিপিএলের ম্যাচ দেখতে। সঙ্গে ছিলেন আরও ৯ জন। স্টেডিয়ামের কাউন্টারে টিকিট না পেয়ে তারা টিকিটের দালালদের সঙ্গে যোগাযোগ করেন। সিলেট স্টেডিয়ামের প্রবেশ মুখের তথা টিকিট কাউন্টারের সামনে এক চায়ের দোকান থেকে ৭টি টিকিট পান তারা। তবে দালাল চক্রটি আশ্বাস দেয় ১১ জনকেই মাঠে প্রবেশ করাবেন। টাকা নেন সাড়ে ৪ হাজার।


সিলেট স্টেডিয়ামের দুই নম্বর গেট দিয়ে প্রবেশ করানো হয় সাতজনকে, বাকিদের প্রবেশ করানো হয় স্টেডিয়ামের স্বেচ্ছাসেবক ও নিরাপত্তা কর্মীদের সহায়তা নিয়ে এবং বিপিএল অফিসিয়াল কার্ড দিয়ে। দালাল চক্রের এই পন্থায় প্রবেশ করেন ফাহিম ও সাব্বির।


৭ জানুয়ারি। ফরচুন বরিশাল ও সিলেট স্ট্রাইকার্সের ম্যাচ দেখে বের হওয়ার পর দালাল চক্রের দুজন সহজ পথে মূল সড়কে নিয়ে যাওয়ার কথা বলেন। ভুক্তভোগী সাব্বিরের ভাষ্যমতে, দুই নম্বর গেট থেকে কীভাবে মাত্র কয়েক মিনিটের মাথায় পাহাড়ে নিয়ে আসে বুঝতে পারিনি।

No description available.কাউন্টার ফাঁকা, নেই টিকিট। সিলেট স্টেডিয়ামের সামনে সিন্ডিকেটের বিরুদ্ধে দর্শকদের বিক্ষোভ। ছবি: সময় সংবাদ


এই চক্রের খপ্পরে পড়া সাব্বির বলেন, আমার একটি আইফোন ও ফাহিমের আইফোন, একটি অ্যান্ড্রয়েড ফোনসহ নগদ টাকা ছিনিয়ে নেয়। যখন আঘাত করে তখন তেমনটা বুঝি নাই, কিন্তু প্রায় ২০০-২৫০ মিটার হাঁটার পর আমার প্যান্ট রক্তাক্ত হয় আর জুতার ভেতর রক্ত জমে যায়। তারপর বুঝতে পারি যে আমাকে অনেকটা আঘাত করা হয়েছে। ছুরি দিয়ে। আমার সঙ্গে থাকা ফাহিমের কাঁধে ভর দিয়ে এক বাড়ির দরজায় নক করি তারপর পুরোটা বলতে পারব না। আমি অজ্ঞান হয়ে পড়ি। শুধু পায়ে নয়, শরীরের অন্যান্য জায়গাতেও আঘাত করা হয়। এক জায়গায় দুটি, অন্য এক জায়গায় ৫টি, মোট ৭টি সেলায় লেগেছে।


ছিনতাইয়ের শিকার সাব্বিরের অভিযোগ, স্টেডিয়ামের গেটের চায়ের দোকানগুলোতেই গড়ে উঠেছে বিপিএলের টিকিট সিন্ডিকেট। এখান থেকেই নিয়ন্ত্রণ হচ্ছে ছিনতাই চক্র। টিকিট প্রত্যাশী সেজে সিন্ডিকেটের এক সদস্যের সঙ্গে কথা সময় সংবাদের। বাবু নামের ওই সদস্য জানান, টিকিট আছে। এসে কল দিয়েন। যখন লাগবে, এসে যখন খুশি তখনই কল দিয়েন।


অপরাধের অভয়ারণ্য তিন নম্বর গেটের পূজা গাছ তলার পাহাড়

বাদাম বাগিচা এলাকা। সিলেট স্টেডিয়ামের তিন নম্বর গেট। গেটের ভেতরেই পূজা গাছতলা পাহাড়। তবে বাহির থেকে এই পাহাড়ে প্রবেশ করা যায়, আবার এই পাহাড় থেকেই প্রবেশ করা যায় সিলেটের আউটার স্টেডিয়ামে। অবাধ্য দর্শকরা এখান দিয়ে দিনে স্টেডিয়ামে প্রবেশ করলেও রাতে রূপ নেয় অপরাধের স্বর্গরাজ্যে। অনুসন্ধানে এই পাহাড়ে গিয়ে মাদকসেবনের আলামত খুঁজে পায় সময় সংবাদ। স্থানীয়রা জানান, পাহাড়ের নিচে নীল টিনশেডের বাড়িটিই মাদক কারবারির।


 

No description available.অথবা পূজা গাছ তলার পাহাড় থেকে দেখা যাচ্ছে আউটার স্টেডিয়াম, অনুশীলন করছে খেলোয়াড়রা। ছবি: সময় সংবাদ


শুধু অবাধ মাদক সেবন নয়, ছিনতাইয়ের ঘটনা ঘটে এখানেই। সাব্বির ও ফাহিম ছিনতাইয়ের শিকার হোন এই পূজা গাছ তলার পাহাড়ে। এই পাহাড় থেকে ১ মিনিট পথ দূরত্বে কালাম আহমেদের বাড়ি। যেখানে রক্তাক্ত অবস্থায় আশ্রয় নিয়েছিলেন সাব্বির ও ফাহিম। কালাম আহমেদ বলেন, দুই ছেলের মধ্যে একজনের অবস্থা খারাপ ছিল। অঝোরে রক্ত ঝরছিল, এখনও রক্তের দাগ আছে।


স্থানীয় বাসিন্দা কালাম আহমেদ বলেন, এই পূজা গাছতলার পাহাড়ে প্রায়ই অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটে। এখানে নিরাপত্তা বেষ্টনী প্রয়োজন। অপরাধ নির্মূলে এবং নিরাপত্তা বাহিনী থাকাও দরকার। যেন এমন ঘটনা না ঘটে।


টিকিট সিন্ডিকেট নিয়ে সিলেটের দর্শকদের ক্ষোভ

 

বিপিএল এর টিকিট সিন্ডিকেটকে কেন্দ্র করে একের পর এক অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটেই চলছে। ঢাকা পর্বে বিসিবির গেট ভাঙচুর এবং টিকিট কাউন্টার জ্বালিয়ে দেয়ার ঘটনা ঘটে। সিলেটেও এর প্রভাব দেখা গেছে। সিলেট পর্বের দ্বিতীয় দিনে টিকিট না পেয়ে বিক্ষোব্ধ দর্শকরা টিকিট কাউন্টার ভাঙচুরের চেষ্টা করেন। পরে স্লোগান দিয়ে টিকিট কাউন্টার থেকে তারা স্টেডিয়ামে গেটে যান। টিকিট সিন্ডিকেট নিয়ে আওয়াজ তোলে মাঠে প্রবেশের চেষ্টা করেন বিক্ষুব্ধ দর্শকেরা। পরে সেনাবাহিনীর ও পুলিশ ধাওয়া দিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ করেন।

No description available.দর্শক ফোরামের আহবায়ক আসলাম। ছবি: সময় সংবাদ


৯ জানুয়ারি। আবারও বিপিএলের টিকিট নিয়ে বিক্ষুব্ধ হতে দেখা যায় দর্শকদের। টিকিট কাউন্টারের সামনে দুপুর ২টায় মানববন্ধন করে সিলেটের ক্রীড়াপ্রেমী দর্শক ফোরাম। এই ফোরামের আহ্বায়ক আসলাম মিয়া সময় সংবাদকে বলেন, ৫০০ টাকার টিকিট ১৫০০ টাকা নিচ্ছে। টিকিটের কথা বলে পাহাড়ে নিয়ে ছিনতাই করা হচ্ছে। এতে সিলেটের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ন হচ্ছে। আমরা শান্তিপূর্ণ মানববন্ধনের ডাক দিয়েছি, সাধারণ দর্শকরা যেন টিকিট পায় আমরা সেই ব্যবস্থা করছি।

]]>
সম্পূর্ণ পড়ুন