চাঁপাইনবাবগঞ্জের আমবাগান পরিদর্শনে চীনা রাষ্ট্রদূত

১ সপ্তাহে আগে
গত মাসে চীনে বাংলাদেশের প্রধান উপদেষ্টার সফরের সময়ে রাষ্ট্রপতি শি জিং পিং বাংলাদেশের আম আমদানির বিষয়ে আগ্রহ প্রকাশ করেন। এরই ধারাবাহিকতায় সম্প্রতি চীনের আমদানিকারকরা চাঁপাইনবাবগঞ্জের কয়েকটি আমবাগান পরিদর্শন করেন। সবকিছু ঠিক থাকলে চলতি মৌসুমেই শুরু হবে আম রফতানি। এছাড়াও আম আমদানির আগে চাষ পদ্ধতি ও বিভিন্ন কার্যক্রম দেখতে চাঁপাইনবাবগঞ্জের নাচোলে একটি আমবাগান পরিদর্শন করেছেন চীনা রাষ্ট্রদূত।

সোমবার (২৮ এপ্রিল) দুপুরে নাচোল উপজেলার নেজামপুর ইউনিয়নের ঘাসুড়া গ্রামে রফিকুল ইসলামের আমবাগান পরিদর্শন করেন ঢাকায় নিযুক্ত চীনা রাষ্ট্রদূত ইয়াও ওয়েন। পরিদর্শনের সময় তার সাথে ছিলেন চীনের আমদানিকারকরা।


আমবাগান পরিদর্শন শেষে চীনা রাষ্ট্রদূত জানান, দেশে যে পরিমাণ আম উৎপাদন হয়, সেই তুলনায় আম রপ্তানির পরিমাণ অনেক কম। সবচেয়ে কম খরচে বাংলাদেশের আম আমদানি করতে চাই চীন। পাশাপাশি চীনের অনেক কোম্পানী আম আমদানি-রপ্তানি ও আম শিল্পে বিনিয়োগে আগ্রহী বলেও জানান চীনা রাষ্ট্রদূত।


এদিকে, চীনের আম আমদানিতে আগ্রহের বিষয়টি বিবেচনায় নিয়ে রপ্তানিতে সেসব সংকট ও সমস্যা রয়েছে তার দূর করতে কাজ করা হচ্ছে বলে জানায় কৃষি বিভাগ।


জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের উপ-পরিচালক ড. মো. ইয়াছিন আলী জানান, গত কয়েক বছর ধরে চাঁপাইনবাবগঞ্জের আম বিশ্বের বিভিন্ন দেশে রপ্তানি হচ্ছে। তবে এবছরের শুরু থেকেই যাতে বেশি পরিমাণে আম রফতানি করা যায়, সেই লক্ষ্যে কাজ করছে কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর। রপ্তানিযোগ্য আম উৎপাদন প্রকল্পের মাধ্যমে রপ্তানির মাধ্যমে উত্তম কৃষি চর্চার মাধ্যমে আম উৎপাদন করা হয়েছে। নিরাপদ আম উৎপাদনের কৃষকদেরকেও নানারকম প্রশিক্ষণ দেয়া হয়েছে।


নাচোল উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা সলেহ আকরাম বলেন, আজকে নাচোল উপজেলার একটি আমবাগান পরিদর্শন করেছেন চীনের রাষ্ট্রদূত৷ তিনি বাগান ঘুরে সার্বিক কার্যক্রম দেখে সন্তুষ্টি প্রকাশ করেছেন। শেষে তিনি বলেছেন, চীন বাংলাদেশ থেকে আম আমদানি করার জন্য প্রস্তুত রয়েছে৷ আমরা আশা করছি, চলতি মৌসুম থেকেই চীনে আমরা বিপুল পরিমাণ আম রপ্তানি করতে পারব৷ তারা প্রচুর পরিমাণে আম নিতে আগ্রহ দেখিয়েছেন।


আরও পড়ুন: আশীর্বাদের বৃষ্টি আমবাগানে, লক্ষ্যমাত্রা পূরণ হবে কি?


আম আমদানি ও বিনিয়োগে চীনা রাষ্ট্রদূতের আগ্রহে খুশি আমচাষীরা। তাদের দাবি, ইউরোপ ও মধ্যপ্রাচ্যের পর চীনের মতো বড় বাজারে রফতানির প্রতিবন্ধকতা দূর করতে পারলে বৈদেশিক মুদ্রার নতুন দুয়ার খুলে দিতে পারে আম। এতে নিশ্চিত হবে আমের ন্যায্যমূল্য এবং চাষিরা পাবে আম রফতানির নতুন বাজার। আমচাষী রফিকুল ইসলাম জানান, বাগান পরিদর্শনের পর চীনা রাষ্ট্রদূতসহ আগত চীনা নাগরিকদের এখানকার আম খেতে দেয়া হয়েছিল। তারা এসব আমের স্বাদ ও মিষ্টতা অনেক পছন্দ করেছেন। চীনের মতে বড় বাজার আমাদের দেশের আমচাষীদের বিরাট সম্ভাবনার দ্বার খুলবে।


তিনি আরও বলেন, উত্তম কৃষি চর্চা ব্যবহার করে আম উৎপাদন, আম প্রক্রিয়াজাতকরণ শিল্পে তারা বিনিয়োগে আগ্রহী। এটি অত্যন্ত আশার বিষয়, একেবারে প্রান্তিক কৃষকের আমবাগানে চীনা রাষ্ট্রদূতের আগমনের ফলে আমরা অনেক আশাবাদী। এর আগে আমরা ইউরোপে আম রপ্তানি করেছি, সেখানে পরিবহণ খরচ ৪৮০ থেকে ৫২০ টাকা কেজি প্রতি। অথচ তারা বলছে, বাংলাদেশ থেকে চীনে আম আমদানি করতে কেজি প্রতি খরচ হবে ৮০ থেকে ৯০ টাকা।


চীনা রাষ্ট্রদূতের পরিদর্শনের সময় আরও উপস্থিত ছিলেন- কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক ড. মো. ইয়াছিন আলী, উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা নিলুফা সরকার, নাচোল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মনিরুল ইসলাম, উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা সলেহ আকরামসহ কৃষি বিভাগের বিভিন্ন স্তরের কর্মকর্তারা।


প্রসঙ্গত, চলতি মৌসুমে জেলায় ৩৭ হাজার ৫০৪ হেক্টর জমিতে আম উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে ৩ লাখ ৮৬ হাজার মেট্রিক টন। জেলা থেকে ইউরোপ ও মধ্যপ্রাচ্যে গত বছর ১৩৩ মেট্রিক টন আম রফতানি হয়েছে। এর আগের বছর ২০২৩ সালে আম রফতানি হয় ৩৭৬ মেট্রিক টন।

]]>
সম্পূর্ণ পড়ুন