মঙ্গলবার (৬ মে) শিবগঞ্জ উপজেলার কানসাট স্টেডিয়ামে ম্যাংগো ডেভেলপমেন্ট ফোরামের আয়োজনে অনুষ্ঠিত এই সম্মেলনের উদ্বোধন করেন চাঁপাইনবাবগঞ্জের জেলা প্রশাসক আব্দুস সামাদ।
সম্মেলনে আম চাষাবাদ, বাজারজাতকরণ, পরিবহন, সংরক্ষণ, রপ্তানি ও প্রক্রিয়াজাতকরণে বিদ্যমান সমস্যা ও করণীয় নিয়ে আলোচনা হয়। বক্তব্য রাখেন আম গবেষক, কৃষি কর্মকর্তা ও উদ্যোক্তারা।
আয়োজকরা জানান, দেশের এক-তৃতীয়াংশ আম উৎপাদন হয় চাঁপাইনবাবগঞ্জে। এই জেলাকে ঘিরে প্রতি মৌসুমে প্রায় ২০ হাজার কোটি টাকার আম ও আমজাত পণ্যের বাণিজ্য হয়। এতে সরাসরি কর্মসংস্থান হয় অন্তত ৪০ হাজার মানুষের।

চাঁপাইনবাবগঞ্জ কৃষি অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক মুনজের আলম মানিক বলেন, ‘প্রতি মৌসুমে ৩০-৪০ শতাংশ আম ঝরে পড়ে, যা ব্যবহৃত হয় না। অথচ এই আম প্রক্রিয়াজাত করে আচার, আমচুরসহ নানা পণ্য তৈরি করা গেলে ৬ হাজার কোটি টাকার বাজার সৃষ্টি সম্ভব।’
২০২৪ সালে বাংলাদেশ থেকে ইউরোপ, যুক্তরাজ্য, কানাডা ও মধ্যপ্রাচ্যে প্রায় ১ হাজার ৩০০ মেট্রিক টন আম রপ্তানি হয়েছে বলে জানান উদ্যোক্তারা। তবে তারা বলেন, রপ্তানির সম্ভাবনা থাকা সত্ত্বেও কীটনাশকের অবশিষ্টাংশ, আধুনিক প্যাকেজিং, হ্যান্ডলিং সমস্যা এবং শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত গুদাম ও পরিবহনের ঘাটতি বড় চ্যালেঞ্জ হয়ে আছে।
এই চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় বক্তারা রপ্তানিমুখী জোন চিহ্নিতকরণ, প্রশিক্ষিত রপ্তানিকারক তৈরি, আধুনিক প্যাকিং হাউস স্থাপন এবং সরকারি-বেসরকারি অংশীদারিত্বে অবকাঠামো উন্নয়নের ওপর জোর দেন।
আরও পড়ুন:
জিআই স্বীকৃতি পেল বদলগাছীর ‘নাক ফজলি আম’
সাতক্ষীরায় নিরাপদ ও বিষমুক্ত আম সংগ্রহ শুরু
চাঁপাইনবাবগঞ্জ চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির সভাপতি আব্দুল ওয়াহেদ বলেন, ‘আম রপ্তানির মাধ্যমে বিপুল বৈদেশিক মুদ্রা অর্জন সম্ভব। এজন্য রপ্তানি প্রক্রিয়া সহজ করতে হবে এবং চাঁপাইনবাবগঞ্জকে “আমের রাজধানী” হিসেবে সরকারিভাবে স্বীকৃতি দিতে হবে।’
ম্যাংগো ডেভেলপমেন্ট ফোরামের এডমিন শামীম খান বলেন, ‘আমের ন্যায্যমূল্য নিশ্চিত করতে প্রক্রিয়াজাতকরণ শিল্প গড়ে তোলা জরুরি। এজন্য সরকারের কাছে প্রয়োজনীয় সহায়তা চাওয়া হচ্ছে।’

সম্মেলনে আরও বক্তব্য রাখেন শিবগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ভারপ্রাপ্ত) তৌফিক আজিজ, হর্টিকালচার সেন্টারের উপপরিচালক একেএম মুনজুরে মাওলা, উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মো. নয়ন মিয়া প্রমুখ।
জেলা প্রশাসক আব্দুস সামাদ বলেন, ‘আমকে ঘিরে যে সম্ভাবনার কথা সম্মেলনে উঠে এসেছে তা সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ে জানানো হবে। সরকারিভাবে নানা প্রকল্প গ্রহণ করা হয়েছে, তবে বেসরকারি উদ্যোক্তাদেরও এগিয়ে আসতে হবে।’
চলতি মৌসুমে চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলায় ৩৭ হাজার ৫০৪ হেক্টর জমিতে ৩ লাখ ৮৬ হাজার মেট্রিক টন আম উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে।
]]>