চলতি বছর নোবেল পুরস্কার পেয়েছেন যারা

৩ সপ্তাহ আগে
চলতি বছর অর্থনীতিতে নোবেল পুরস্কার ঘোষণার মধ্য দিয়ে ছয়টি ক্যাটাগরিতে নোবেল পুরস্কার বিজয়ীদের নাম ঘোষণা করা হয়। ২০২৪ সালে মোট ১১ জন ব্যক্তি ও ১টি প্রতিষ্ঠানকে নোবেল দেয়া হয়।

দেখে নেয়া যাক কারা ও কোন প্রতিষ্ঠান পেয়েছে এবারের নোবেল পুরস্কার-

 

অর্থনীতি

অর্থনীতিতে এ বছর নোবেল পুরস্কার পেয়েছেন যুক্তরাষ্ট্রের তিন অর্থনীতিবিদ। যুক্তরাষ্ট্রের ম্যাসাচুসেটস ইনস্টিটিউট অব টেকনোলজির অধ্যাপক তুর্কি বংশোদ্ভূত আমেরিকান ড্যারন আসেমোগলু, একই প্রতিষ্ঠানের ব্রিটিশ- আমেরিকান অর্থনীতিবিদ সায়মন জনসন এবং ইউনিভার্সিটি অব শিকাগো, ইলিনয়ের অধ্যাপক জেমস রবিনসন।


বিভিন্ন দেশের মধ্যে সম্পদের বৈষম্য নিয়ে গবেষণার জন্য তারা এই পুরস্কার পেয়েছেন।


নোবেল কমিটি জানায়, এই তিন অর্থনীতিবিদ দেখিয়েছেন, সামাজিক প্রতিষ্ঠান একটি দেশের উন্নয়নে কীভাবে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখে। তাদের গবেষণায় দেখা গেছে, যে সমাজে আইনের শাসন দুর্বল এবং যেখানে প্রাতিষ্ঠানিকভাবে শোষণ হয় সেই দেশে প্রবৃদ্ধি তেমন হয় না। কিংবা সেই সমাজ উন্নয়নের দিকে এগিয়ে যেতে পারে না।

 

আরও পড়ুন:নাম ঘোষণা আজ / অর্থনীতিতে এবার কে বা কারা পেতে পারেন নোবেল

 

ড্যারন আসেমোগলু ১৯৬৭ সালে ইস্তাম্বুলে জন্মগ্রহণ করেন। জনসন ১৯৬৩ সালে জন্মগ্রহণ করেন এবং যুক্তরাজ্যের শেফিল্ড থেকে এসেছেন। রবিনসন জন্মগ্রহণ করেছেন ১৯৬০ সালে। তিনিও একজন ব্রিটিশ আমেরিকান। পুরস্কারের সময় রবিনসন শিকাগো বিশ্ববিদ্যালয়ের অধিভুক্ত ছিলেন।


চিকিৎসা

 

চলতি বছরের চিকিৎসাবিদ্যায় নোবেল পুরস্কার পেয়েছেন দুই মার্কিন বিজ্ঞানী ভিক্টর অ্যামব্রোস ও গ্যারি রাভকুন। মাইক্রোআরএনএ এবং পোস্ট-ট্রান্সক্রিপশনাল জিন নিয়ন্ত্রণে এর ভূমিকা আবিষ্কারের জন্য সম্মানজন এ পুরস্কার দেয়া হয় তাদের।

 

তাদের গবেষণা উন্মোচিত করেছে কিভাবে এই মাইক্রোআরএনএগুলো সেলুলার আচরণকে প্রভাবিত করে এবং ক্যানসার এবং হৃদ্‌রোগসহ বিভিন্ন স্বাস্থ্য চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় অবদান রাখে। গত ৭ অক্টোবর চিকিৎসাশাস্ত্রে নোবেলজয়ীদের নাম ঘোষণা করা হয়।


ফিজিক্স

পদার্থবিদ্যায় ২০২৪ সালের নোবেল দেয়া হয়েছে মার্কিন পদার্থবিদ জন জে. হপফিল্ড এবং বৃটিশ-কানাডিয়ান জিওফ্রে ই. হিন্টনকে। কৃত্রিম নিউরাল নেটওয়ার্কের উন্নয়নে পরিসংখ্যানগত পদার্থবিজ্ঞানের ধারণা ব্যবহারের জন্য এ বছর নোবেল পেলেন তারা।

 

কৃত্রিম নিউরাল নেটওয়ার্কগুলো মেশিন লার্নিং এবং কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার ক্ষেত্রে একটি মৌলিক ভূমিকা পালন করে যা মেশিনগুলোকে অত্যন্ত বড় ডেটাসেটে প্যাটার্নগুলো খুঁজে পেতে এবং সনাক্ত করতে সাহায্য করে। বর্তমানে কৃত্রিম নিউরাল নেটওয়ার্কের মাধ্যমে তৈরি মেশিন লার্নিং বিজ্ঞান, প্রকৌশল এবং দৈনন্দিন জীবনে বিপ্লব ঘটাচ্ছে।


সাহিত্য


দক্ষিণ কোরিয়ার লেখক হান কাংকে ২০২৪ সালের সাহিত্যে নোবেল পুরস্কার দেয়া হয়েছে। নোবেল কমিটি জানায়, ঐতিহাসিক ট্রমা, ঔপনিবেশিক সহিংসতা এবং মানবতার ভঙ্গুরতা বিষয়গুলো তীব্র কাব্যময় গদ্যে প্রকাশ করার জন্য সাহিত্যে নোবেল পান কান।  

 

হান কাং প্রথম আলোচনায় আসেন ২০১৫ সালে তার 'দ্য ভেজিটেরিয়ান' উপন্যাসের জন্য। ২০১৬ সালে বইটির জন্য ম্যান বুকার পুরস্কার দেয়া হয় হানকে। হানের জন্ম ১৯৭০ সালে দক্ষিণ কোরিয়ার শহর গোয়াংজুতে। নয় বছর বয়সে তিনি পরিবারের সঙ্গে সিউলে যান। পরিবার থেকেই লেখালেখির প্রতি আগ্রহ তৈরি হয় হান কাংয়ের। তার বাবাও একজন স্বনামধন্য ঔপন্যাসিক।


রসায়ন

প্রোটিনের গঠন নিয়ে গবেষণার জন্য এ বছর রসায়নে নোবেল পুরস্কার পেয়েছেন মার্কিন বিজ্ঞানী ডেভিড বেকার, জন এম জাম্পার ও ব্রিটিশ বিজ্ঞানী ডেমিস হ্যাসাবিস।

 

ডেভিড বেকার, ডেমিস হাসাবিস এবং জন জাম্পারকে প্রোটিনের কাঠামোর ভবিষ্যদ্বাণী এবং নকশা করার জন্য রসায়নে নোবেল পুরস্কার দেয়া হয়।

 

রয়্যাল সুইডিশ একাডেমি অব সায়েন্স একটি প্রেস রিলিজে বলেছে, সম্পূর্ণ নতুন ধরণের প্রোটিন তৈরির প্রায় অসম্ভব কাজ করে সফল হয়েছেন বেকার। হ্যাসাবিস এবং জাম্পার প্রোটিনের জটিল কাঠামোগুলো নিয়ে অনুমান করে এআই মডেল তৈরি করেছেন যা  একটি ৫০ বছর পুরোনো সমস্যার সমাধান করেছে।  

 

রসায়নে নোবেলজয়ীদের জন্য পুরস্কার হিসেবে মোট ১১ লাখ ডলার (এক কোটি ১০ লাখ সুইডিশ ক্রোনার) বরাদ্দ থাকে।


শান্তি


চলতি বছর শান্তিতে নোবেল পুরস্কারের জন্য জাপানি সংস্থা নিহন হিদানকায়োকে বেছে নিয়েছে নরওয়েজিয়ান নোবেল কমিটি। সংস্থাটি হিরোশিমা এবং নাগাসাকি পারমাণবিক বোমা থেকে বেঁচে যাওয়া ব্যক্তিদের কণ্ঠস্বরকে তুলে ধরার মাধ্যমে  "পরমাণু অস্ত্র মুক্ত বিশ্ব অর্জন" করতে চেয়ে এবং এ নিয়ে কাজ করেছে।

 

নিহন হিদানকায়ো একটি পরমাণু অস্ত্র-বিরোধী সংগঠন। হিরোশিমা ও নাগাসাকির পারমাণবিক বোমা হামলায় যারা বেঁচে গেছেন, তাদেরকে নিয়ে তৃণমূল পর্যায়ে পরমাণু-অস্ত্র বিরোধী আন্দোলন শুরু করে এই সংগঠনটি।

 

সংগঠনটির অপর অর্জন হিসেবে নোবেল কমিটি উল্লেখ করে, তারা এই বিপর্যয়কে নিজের চোখে দেখে আসা মানুষদের মধ্য দিয়ে বলাতে চেয়েছেন যা থেকে বিশ্ববাসী বুঝতে পারে এ ধরনের অস্ত্র আর কখনোই ব্যবহার করা উচিত নয়।  

 

আরও পড়ুন:শান্তিতে নোবেল পেল জাপানি সংস্থা নিহন হিদানকায়ো


নোবেল পুরস্কার প্রবর্তন করেন সুইডিশ বিজ্ঞানী আলফ্রেড নোবেল। তার ইচ্ছা অনুসারে প্রতিবছর এই পুরস্কার দেয়া হয়। চিকিৎসা, পদার্থবিজ্ঞান, রসায়ন, সাহিত্য, শান্তি ও অর্থনীতিতে গবেষণা, উদ্ভাবন ও মানবতার কল্যাণে যারা অবদান রাখেন তাদেরকে দেয়া হয় এই পুরস্কার। 

 

প্রতিবছর আলফ্রেড নোবেলের মৃত্যুর দিবস ১০ ডিসেম্বর বিজয়ীদের হাতে পুরস্কারের অর্থ তুলে দেয়া হয়। প্রত্যেক ক্ষেত্রে পুরস্কার বিজয়ীরা একটি স্বর্ণপদক, প্রশংসাপত্রসহ একটি ডিপ্লোমা এবং বর্তমানে ১১ মিলিয়ন সুইডিশ ক্রোনা পান।

]]>
সম্পূর্ণ পড়ুন