চবিতে নারী সংস্কার কমিশনের সুপারিশ বাতিলে সংবাদ সম্মেলন

২ সপ্তাহ আগে
নারী সংস্কার কমিশনের বিতর্কিত সুপারিশগুলো বাতিলের দাবিতে সংবাদ সম্মেলন করেছে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের নারী শিক্ষার্থীদের একাংশ।

বুধবার (২১ মে) দুপুর ২ টায় বিশ্ববিদ্যালয়ের চাকসু ভবনে সাংবাদিক সমিতির কার্যালয়ে এই সংবাদ সম্মেলনটি অনুষ্ঠিত হয়। সেখানে নারী শিক্ষার্থীদের সঙ্গে উপস্থিত ছিলেন দর্শন বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক শামসুন্নাহার মিতুল। 


সংবাদ সম্মেলনে শিক্ষার্থীরা নারী সংস্কার কমিশনের সমালোচিত সুপারিশগুলো নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন। উত্তরাধিকার আইন, যৌনকর্মীদের শ্রমিক হিসেবে স্বীকৃতি, ম্যারিটাল রেইপ, ট্রান্সজেন্ডার নারী এসব বিষয় তারা তাদের আলোচনা তুলে ধরেন। এ বিষয়ে তারা একটি বিবৃতি দেয়।


বিবৃতিতে লিখা ছিলো, ‘বাংলাদেশের সমাজ ব্যবস্থা মূলত ধর্মীয় মূল্যবোধ ও নৈতিকতার ভিত্তির উপর প্রতিষ্ঠিত। ইসলামসহ এদেশে প্রচলিত অন্যান্য ধর্মীয় বিশ্বাস অনুযায়ী LGBTQ ও non natural sexual কাজগুলো স্পষ্টভাবে নিষিদ্ধ।’

আরও পড়ুন: অবশেষে মূল ক্যাম্পাসে স্থানান্তর হচ্ছে চবির চারুকলা

বিবৃতিতে আরও লিখা ছিলো, ‘আমাদের ঐতিহ্যবাহী পরিবার কেন্দ্রিক সমাজকে হুমকির মুখে ফেলা, কিংবা গণতান্ত্রিক একটি রাষ্ট্রে সংখ্যাগরিষ্ঠ জনগোষ্ঠীর ধর্মীয় চেতনাকে অসম্মান করা অথবা ধর্ম, সংস্কৃতি, কালচার, ভ্যালুস এগুলোর প্রতি অবজ্ঞা প্রদর্শন করে কিছু চাপিয়ে দেয়ার নাম কখনোই উন্নয়ন বা সংস্কার হতে পারে না।’


ইংরেজি বিভাগের তৃতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী জান্নাতুল আদন নুসরাত বলেন, ‘নারী সংস্কার কমিশন উত্তরাধিকার আইনে ধর্মীয় আইনের পাশাপাশি আলাদা সিভিল ল চাচ্ছেন। একই পরিবারের দুই জন সন্তানের মাঝে একজন সিভিল ল আর আরেক জন ইসলামী আইনে সম্পদের ভাগ চাইলে আপনি কীভাবে সমাধান করবেন? যে দেশে প্রচলিত আইনে নারী তার সম্পত্তির উত্তরাধিকার চাইতে গেলে নেগেটিভলি নেওয়া হয়, প্রপার ইমপ্লিমেন্টেশন নেই সেদেশে এই ধরনের ধ্বংসাত্মক আইন কেন? আমরা বাংলাদেশের নারীরা কুরআন সুন্নাহ মোতাবেক সম্পদের উত্তরাধিকার চাই। আমাদের জন্য এটাই নিশ্চিত করুন। ইসলামী উত্তরাধিকার আইনের সঠিক প্রয়োগই জরুরী মনে করছি।’


শিক্ষা ও গবেষণা ইনস্টিটিউটের তৃতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী উম্মে কুলসুম বলেন, ‘এই নারী সংস্কার কমিশনের প্রস্তাবনা আমাদের নারী হিসেবে লজ্জিত করেছে। আপনারা নারীর অধিকার নিয়ে কাজ করার জন্য কমিশন গঠন করেছেন নাকি নারীকে হেয় করার জন্য কমিশন গঠন করেছেন তা ঠিক আমার বোধগম্য নয়। ম্যারিটাল রেইপের আইন পারিবারিক ব্যবস্থা ধ্বংসের এক চক্রান্তের নাম। এই আইন নারী-পুরুষের সৌহার্দ্যপূর্ণ বৈবাহিক সম্পর্কের জন্য অশনিসংকেত। একদিকে ম্যারিটাল রেইপের আইন করবেন, অন্যদিকে পতিতাবৃত্তির স্বীকৃতি দিবেন - এটা তো সরাসরি পারিবারিক ব্যবস্থা ধ্বংসের রোডম্যাপ। এই সুপরিশমালা বাস্তবায়িত হলে নারীরা বরং আরও বেশি সমস্যার সম্মুখীন হবে।’


সমাজতত্ত্ব বিভাগের প্রথম বর্ষের শিক্ষার্থী নওশিন নাওয়াল ফাতিমা বলেন, ‘সংস্কার কমিশনে শব্দের লুকোচুরিতে ট্রান্সউইমেনকেও নারী হিসেবে স্বীকৃতি প্রদানের ষড়যন্ত্র চলছে। সম্প্রতি মৈত্রী যাত্রার আড়ালে এসব ট্রান্সজেন্ডারকে আমরা সক্রিয় হতে দেখেছি। ট্রান্সজেন্ডারদের স্বীকৃতি নারীর প্রতি চরম অবমাননার শামিল।’

আরও পড়ুন: ঘুষ লেনদেনের ভিডিও ভাইরাল, চবির ডেপুটি রেজিস্ট্রার বরখাস্ত

এসময় দর্শন বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক শামসুন্নাহার মিতুল বলেন, ‘নারী বিষয়ক সংস্কার কমিশনের এমন একটি সমাজের স্বপ্ন দেখা উচিত, যেখানে নারী ও পুরুষের মধ্যে প্রকৃত ইনসাফ বিদ্যমান থাকবে। কিন্তু, উত্তরাধিকার আইনে ইসলামের সাথে সাংঘর্ষিকতা, যৌনকর্মীদের শ্রমিক স্বীকৃতি প্রদান, ম্যারিটাল রেইপ আইন, ট্রান্সজেন্ডার নারীদের স্বীকৃতির কৌশল অবলম্বন প্রভৃতি প্রস্তাবনা বাঙালি মুসলিমদের মূল্যবোধ ও চিন্তার সাথে সরাসরি সাংঘর্ষিক। তাদের এই প্রস্তাবিত মডেল কী আমাদের দেশের ট্রাডিশন, কালচার, ফেইথ, সোশ্যাল ভ্যালু, মোরালিটিটির সাথে সামঞ্জস্যপূর্ণ? এক্ষেত্রে তাদের কোনো ডেটা বা রিসার্চ ফাইন্ডিংস আছে কী?’


তিনি আরও বলেন, ‘যৌনবৃত্তির স্বীকৃতি আমাদের সমাজ ও পরিবার ব্যবস্থাকে ভঙ্গুর করে তুলবে। আপনি আপনার মা বা মেয়ের যৌনবৃত্তিতে যুক্ত হওয়া সম্মানজনক মনে না করলে কেন এর স্বীকৃতি চাচ্ছেন? পতিতাদের বড় অংশই অনিচ্ছায় বিক্রি হয়ে এই পেশায় আসে। এদের মধ্যে একটা বড় অংশ আবার অপ্রাপ্তবয়স্ক। বাংলাদেশে যৌনকর্মীর চেয়ে মাদকাসক্তের সংখ্যা বেশি। মাদকাসক্তদের পুনর্বাসনের উদ্যোগ নেওয়া সম্ভব হলে যৌনকর্মীদের পুনর্বাসন কেন সম্ভব নয়?’

]]>
সম্পূর্ণ পড়ুন