রোববার (৭ সেপ্টেম্বর) রাত থেকে চন্দ্রগ্রহণটি শুরু হয়ে সোমবার (৮ সেপ্টেম্বর) ভোর পর্যন্ত চলবে।
আরও পড়ুন: পূর্ণগ্রাস চন্দ্রগ্রহণ শুরু (লাইভ)
চন্দ্রগ্রহণকে আরবিতে ‘খুসুফ’ বলা হয়। গ্রহণ লাগলে সূর্য যেমন অন্ধকার ছায়ার আবর্তে পতিত হয়ে অন্ধকার হয়ে যায়, তেমনি চন্দ্রও বছরে দুবার কক্ষপথে অন্ধকারের ছায়ায় আচ্ছাদিত হয়ে থাকে। তার আংশিক রূপ কখনো দৃশ্যমান হয়। আবার কখনো সার্বিক রূপ দেখা যায়। চন্দ্রের এ কালো রং বা অন্ধকারের হাতছানিকেই চন্দ্রগ্রহণরূপে আখ্যায়িত করা হয়।
চন্দ্র-সূর্য মহান আল্লাহর অনন্য এক সৃষ্টি। পৃথিবীতে প্রাণের অস্তিত্ব টিকিয়ে রাখতে তিনি সূর্যকে মাধ্যম বানিয়েছেন। চাঁদের মধ্যেও রেখেছেন মানুষের নানা উপকার। চাঁদের নিজস্ব কোনো আলো নেই; সূর্য থেকে আলো গ্রহণ করেই পৃথিবীতে সে স্নিগ্ধ আলো ছড়ায়। সেদিকে ইঙ্গিত করেই আল্লাহ তাআলা বলেন, ‘তিনিই সত্তা, যিনি সূর্যকে কিরণোজ্জ্বল ও চাঁদকে স্নিগ্ধ আলোয় আলোকিত করেছেন।’ (সুরা: ইউনুস, আয়াত ৫)
চন্দ্রগ্রহণের সময় ৪ আমল
হজরত মুগিরা ইবনে শুবা রা. থেকে বর্ণিত রসুলুল্লাহ (স.) বলেন, ‘সূর্য ও চন্দ্র আল্লাহর নিদর্শনসমূহের মধ্যে দুটি নিদর্শন। কারো মৃত্যু বা জন্মের কারণে সূর্যগ্রহণ ও চন্দ্রগ্রহণ হয় না। কাজেই যখন তোমরা তা দেখবে তখন ১. তোমরা আল্লাহর কাছে দোয়া করবে; ২. তার মহত্ব ঘোষণা করবে, তাকবির বলবে; ৩. নামাজ আদায় করবে এবং ৪. সদকা প্রদান করবে।’ (বোখারি ১০৪০, আবু দাউদ ১১৭৭)
আরও পড়ুন: যেভাবে আল আকসা বিজয় করেছিলেন সালাহউদ্দীন আইয়ুবি রহ.
কোরআনে আল্লাহ তাআলা বলেন, ‘যখন দৃষ্টি চমকে যাবে, চন্দ্র জ্যোতিহীন হয়ে যাবে, তখন সূর্য ও চন্দ্রকে একত্রিত করা হবে।’ (সুরা: কিয়ামাহ আয়াত ৭-৯) কোরআনে বর্ণিত আয়াতে ‘চন্দ্র জ্যোতিহীন হয়ে পড়া’র বাস্তব রূপই হচ্ছে চন্দ্রগ্রহণ।
চন্দ্রগ্রহণ সম্পর্কে নবীজির (সা.) নির্দেশনা
অন্ধকার যুগে মানুষ মনে করত দুনিয়ায় বড় বড় ব্যক্তিত্বের অধিকারী লোকদের জন্য কোনো অঘটন ঘটলে চন্দ্র বা সূর্যগ্রহণ হয়। রসুলুল্লাহর (স.) ছেলে ইবরাহিম ইবনে মুহাম্মদের মৃত্যুর দিনে সূর্যগ্রহণ হলে সাহাবায়ে কেরাম তা বলাবলি করছিলেন। শুনে রসুল (স.) চন্দ্রগ্রহণ ও সূর্যগ্রহণ সম্পর্কে তাদের সুস্পষ্ট বর্ণনা দেন।
চন্দ্রগ্রহণের নামাজ
হাদিসে সূর্যগ্রহণের নামাজের মতো চন্দ্রগ্রহণের নামাজও প্রমাণিত। রসুল (স.) এ নামাজ আদায় করেছেন। এ নামাজ আদায় করা সুন্নাত। ‘চন্দ্রগ্রহণের সময় ঘরে নামাজ আদায় করা হবে। কেননা সুন্নাহ হচ্ছে, তখন একাকি নামাজ পড়া।’ (বাদায়েউস সানাঈ ১/২৮২)
সূর্য ও চন্দ্রগ্রহণের সময় মোমিনদের আল্লাহর ইবাদতে মগ্ন থাকতে বলেছেন রসুল (স.)। আয়েশার (রা.) হাদিস থেকে জানা যায়, এ সময় আল্লাহর রসুল (স.) নামাজে দাঁড়িয়ে যেতেন। আল্লাহর কাছে দোয়া করতেন। আবু বকর (রা.) বর্ণনা করেন, ‘আমরা রসুল (স.)-এর কাছে ছিলাম। এমন সময় সূর্যগ্রহণ শুরু হয়। রসুল (স.) তখন উঠে দাঁড়ালেন। নিজের চাদর টানতে টানতে মসজিদে প্রবেশ করেন। আমরাও প্রবেশ করি। তিনি আমাদের নিয়ে সূর্য প্রকাশিত হওয়া পর্যন্ত দুরাকাত নামাজ আদায় করেন। এর পর তিনি বলেন,
‘কারও মৃত্যুর কারণে কখনো সূর্যগ্রহণ কিংবা চন্দ্রগ্রহণ হয় না। তোমরা যখন সূর্যগ্রহণ দেখবে, তখন এ অবস্থা কেটে যাওয়া পর্যন্ত নামাজ আদায় করবে এবং দোয়া করতে থাকবে।’ (বোখারি হাদিস ৯৮৩)
আরু পড়ুন: ঘূর্ণিঝড়ে নবীজির শেখানো যে দোয়া পড়বেন
অন্য হাদিসে আবু মুসা (রা.) বলেন, রসুল (স.)-এর যুগে সূর্যগ্রহণ হয়েছিল। তখন তিনি এ আশঙ্কায় উঠে দাঁড়ালেন, কিয়ামতের মহাপ্রলয় বুঝি সংঘটিত হবে। তিনি দ্রুত মসজিদে চলে আসেন। এরপর অত্যন্ত দীর্ঘ কিয়াম, দীর্ঘ রুকু ও দীর্ঘ সেজদার সঙ্গে নামাজ আদায় করেন। আমি আর কোনো নামাজে কখনো এমন (দীর্ঘ) দেখিনি। (মুসলিম হাদিস ১৯৮৯)
]]>