ভুক্তভোগী ছাত্রীর মা মারা গেছেন চার বছর আগে। বাবা ঢাকায় দুই টাকার পণ্যের ব্যবসা করেন। সৎ মা তেমন খোঁজখবর রাখেন না। এই সুযোগে প্রতিবেশী যুবক তুষার শেখ (২০) বিয়ের প্রলোভন দেখিয়ে প্রায় দেড় বছর আগে মেয়েটির সঙ্গে প্রেমের সম্পর্ক গড়ে তোলে এবং একাধিকবার শারীরিক সম্পর্কে লিপ্ত হন।
গত ১০ জুন রাতে তুষার ছাত্রীটির ঘরে ঢুকে ফের সম্পর্ক স্থাপন করলে ছাত্রীর বাবা বিষয়টি জানতে পারেন। পরদিন ১১ জুন স্থানীয় ফার্মেসি থেকে গর্ভ পরীক্ষার কিট এনে পরীক্ষা করে ফল পজিটিভ পান তিনি। এরপর বিষয়টি এলাকায় ছড়িয়ে পড়ে।
১৬ জুন বিয়ের আশ্বাস দিয়ে তুষারের স্বজনরা মেয়েটিকে একটি বেসরকারি ক্লিনিকে নিয়ে যান। সেখানেই মেয়েটির গর্ভপাত করানো হয় বলে দাবি তার বাবার। এরপর ১৯ জুন বৃহস্পতিবার সকাল ১০টার দিকে স্থানীয় ইউপি সদস্য আব্দুর রাজ্জাকের নেতৃত্বে একটি সালিশ বসে। তাতে উভয় পক্ষ ও স্থানীয় গণ্যমান্য ব্যক্তিরা উপস্থিত থাকলেও তুষার বিয়ে করতে অস্বীকৃতি জানিয়ে পালিয়ে যান।
এ ঘটনায় ওইদিন সন্ধ্যায় ছাত্রীর বাবা কুমারখালী থানায় লিখিত অভিযোগ দেন। তবে থানার দায়িত্বরত কর্মকর্তা মামলা না নিয়ে আদালতে যেতে বলেন বলে অভিযোগ পরিবারটির।
আরও পড়ুন: ধর্ষণের অভিযোগে শাবিপ্রবির দুই শিক্ষার্থী গ্রেফতার
ভুক্তভোগী ছাত্রীর বাবা বলেন, মেয়ের মা নেই, আমি ঢাকায় থাকি। তুষার সুযোগ নিয়ে আমার মেয়েকে একাধিকবার ধর্ষণ করেছে। এখন অন্তঃসত্ত্বা হয়ে পড়েছে। বিয়ের আশ্বাসে ক্লিনিকে নিয়ে গর্ভপাত করানো হয়েছে। বৃহস্পতিবার সকালে রাজ্জাক মেম্বার গ্রামে সালিশ বসায়। কিন্তু সালিশে তুষার বিয়ে না করে পালিয়ে যায়। সন্ধায় থানায় মামলা করতে গেলে ওসি সাহেব মামলা না নিয়ে আদালতে যেতে বলেন।
তিনি আরও বলেন, 'গরীব মানুষ বলে কোথাও বিচার পাচ্ছিনা। মা মরা মেয়েকে নিয়ে দ্বারেদ্বারে ঘুরেও বিচার পাচ্ছিনা। মান সম্মান সব শেষ। মরা ছাড়া আর কোনো গতি নেই।'
ভুক্তভোগী ছাত্রী বলে, 'তুষার বিয়ের কথা বলে অনেকবার সম্পর্ক করেছে। আমি এখন অন্তঃসত্ত্বা। আমি তার শাস্তি চাই।'
আরু পড়ুন: প্রেমিককে খুঁজতে গিয়ে সংঘবদ্ধ ধর্ষণের শিকার তরুণী, অটোরিকশাচালকসহ গ্রেফতার ৩
সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, অভিযুক্ত তুষার শেখ ও তার বাবা বাড়িতে নেই। তার মা সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা না বলে বাড়ির গেট বন্ধ করে দেন।
স্থানীয় ইউপি সদস্য আব্দুর রাজ্জাক বলেন, 'অন্তঃসত্ত্বার বিষয়টি জানার পর সালিশ বসিয়ে বিয়ের উদ্যোগ নিয়েছিলাম। কিন্তু তুষার রাজি না হওয়ায় সালিশ ভেঙে দেয়া হয়।' ধর্ষণের মতো ঘটনায় সালিশের বৈধতা নিয়ে প্রশ্ন করলে তিনি বলেন, 'অনেক কিছু সামাজিকতার জন্য করতে হয়।' এরপর তিনি ফোন কেটে দেন।
কুমারখালী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. সোলাইমান শেখ বলেন, 'ঘটনাটি মৌখিকভাবে শুনেছি। এখন পর্যন্ত কেউ লিখিত অভিযোগ দেয়নি। লিখিত অভিযোগ পেলে আইনগত ব্যবস্থা নেয়া হবে।'