গত তিন ধরেই সাবেক ভূমিমন্ত্রী সাইফুজ্জামান চৌধুরীর মালিকানাধীন আরামিট গ্রুপের বিভিন্ন ডকুমেন্টস ও দেশ-বিদেশের বিভিন্ন সম্পত্তি সংক্রান্ত রেকর্ড উদ্ধারে বিভিন্ন জায়গায় অভিযান চালাচ্ছিল দুদক। তবে, মিলছিল না সফলতা। আরামিট গ্রুপের শিল্প প্রতিষ্ঠান থেকে লুকানোর উদ্দেশ্যে ইউসিবিএল এর চেয়্যারম্যান রুকমীলা জামানের গাড়ি চালকের বাড়িতে বিভিন্ন রেকর্ডপত্র লুকানো রয়েছে এমন তথ্য ছিল দুদকের কাছে।
শনিবার (২০ সেপ্টেম্বর) দিনগত রাত ৩টায় কালুরঘাট এলাকায় অভিযান চালানো হয়। এ সময় রুকমীলা জামানের গাড়িচালক কাগজপত্র নিজ বাড়িতে না রেখে পাশের ওসমান তালুকদারের বাড়িতে রাখেন। রাতভর অভিযান চালিয়ে এ সময় তালাবদ্ধ ঘর থেকে ২৩ বস্তা নথি উদ্ধার করা হয়।
দুদক জানায়, বিভিন্ন দেশে সম্পদ কেনার তথ্য, টেক্সের কাগজ, বাড়ি ভাড়ার ভাউচারহ বিভিন্ন ধরনের তথ্য পেয়েছে দুদক। অভিযান কারিরা প্রাথমিকভাবে ধারণা করছে কয়েক হাজার কোটি টাকার সম্পদের তথ্য এসব নথিতে আছে। যা সাইফুজ্জামান চৌধুরীর ট্যাক্স ফাইলে দেখানো নেই। সেই সঙ্গে কম্বোডিয়া, ভিয়েতনাম, থাইল্যান্ড, মালয়েশিয়া ও ভারতে ক্ষমতাচ্যুত আওয়ামী লীগ সরকারের পলাতক ভূমিমন্ত্রী সাইফুজ্জামান চৌধুরীর বিপুল পরিমাণ সম্পদের তথ্য পাওয়া গেছে বলে জানিয়েছে দুদক।
আরও পড়ুন: সাবেক ভূমিমন্ত্রী সাইফুজ্জামানসহ ২০ জনের বিরুদ্ধে আরও ৩ মামলা
দুদকের প্রধান কার্যালয়ের উপ-পরিচালক মশিউর রহমান জানান, সাবেক ভূমিমন্ত্রীর ঘনিষ্ঠ দুই সহযোগীর পাঁচ দিনের রিমান্ড চলছে। জিজ্ঞাসাবাদে জানা গেছে, অনেক নথিপত্র গায়েব করা হয়েছে। এগুলো জাবেদের স্ত্রী রুকমিলা জামানের গাড়িচালক ইলিয়াসের বাসায় রাখা ছিল। গত শুক্রবার সেখানে অভিযান চালায় দুদক। কিন্তু আগেই তথ্য পেয়ে বস্তাগুলো সরিয়ে ফেলা হয়। ওই দিন ওই বাসার সিসিটিভি ফুটেজ পর্যালোচনা করে দেখা যায়, দুদকের দল যাওয়ার আধা ঘণ্টা আগে আলামতগুলো সরিয়ে ফেলা হয়।
মশিউর রহমান বলেন, পরে আমরা একটি ছোট বাসা থেকে ২৩ বস্তা আলামত জব্দ করেছি। কয়েকটি বস্তা খুলে দেখা গেছে, বিদেশে সম্পদ অর্জনের ক্রয় সংক্রান্ত পেমেন্ট, বাড়ি ভাড়া আদায়ের তথ্য, বিভিন্ন বিল পরিশোধ, কোর্টের আদেশসংক্রান্ত ডকুমেন্টস রয়েছে। এখনও সবগুলো বস্তার আলামত পর্যালোচনা করার সুযোগ হয়নি। কাজ চলছে।
এদিকে, গত ২৪ জুলাই দুদকের প্রধান কার্যালয়ের উপপরিচালক মশিউর রহমান সাবেক ভূমিমন্ত্রী ও তাঁর স্ত্রীসহ ৩১ জনের বিরুদ্ধে নাম সর্বস্ব প্রতিষ্ঠানের নামে ইউসিবিএল থেকে ২৫ কোটি টাকা আত্নসাতের অভিযোগে মামলা করেন। এই টাকা বিদেশে পাচার করা হয় বলে মামলায় উল্লেখ করা হয়। এই প্রেক্ষাপটে তিনদিন আগে সাইফুজ্জামান চৌধুরী জাবেদ ও তার স্ত্রীর বিরুদ্ধে ইন্টারপোলে রেড নোটিশ জারির জন্য আদালতের কাছে আবেদন করা হয়। সেই মামলায় সাবেক ভূমিমন্ত্রী সাইফুজ্জামান চৌধুরী জাবেদের বিরুদ্ধে রেড নোটিশ জারির জন্য দুদকের করা আবেদন মঞ্জুর করেছেন আদালত।
আরও পড়ুন: ৫২ কোটি টাকা ঘুষ নেয়ার অভিযোগে সাবেক ভূমিমন্ত্রীসহ ১০ জনের বিরুদ্ধে মামলা
এর আগে বুধবার রাতে চট্টগ্রাম নগরীর আগ্রাবাদ থেকে সাইফুজ্জামানের অর্থ পাচারের সহযোগী আব্দুল আজিজ ও তার দেশের সম্পদ দেখাশোনার দায়িত্বপ্রাপ্ত আরামিট গ্রুপের এজিএম উৎপল পালকে গ্রেফতার করে দুদক। তাদের কাছে পাওয়া নথিতে সিঙ্গাপুর, সংযুক্ত আরব আমিরাত, যুক্তরাজ্য ও যুক্তরাষ্ট্রে সম্পদের তথ্য পেয়েছিল দুদক।আদালতের আদেশে তাদের রিমান্ডে জিজ্ঞাসাবাদ করা হলে ২৩ বস্তা নথির সন্ধান পায়।