চট্টগ্রাম-কক্সবাজার মহাসড়কে এত দুর্ঘটনা কেন, কী বলছে পুলিশ

২ সপ্তাহ আগে
চট্টগ্রাম-কক্সবাজার মহাসড়ক মৃত্যুফাঁদে পরিণত হয়েছে। মহাসড়কটিতে প্রায় প্রতিদিনই কোথাও না কোথাও ঝরছে প্রাণ।

পুলিশ বলছে, একাধিক কারণে এ মহাসড়কে ঘটছে দুর্ঘটনা। অপ্রশস্ত সড়ক, বিপজ্জনক বাঁক, বেপরোয়া গতি, ওভারটেকিং, লবণ পানিতে মহাসড়ক পিচ্ছিল, মহাসড়কে নিষিদ্ধ ছোট যানবাহন চলাচল ও সড়কে দুই পাশে অসমান অংশসহ কয়েকটি কারণে এ সড়কে বেশি ঘটছে দুর্ঘটনা। তবে দুর্ঘটনা কমাতে চট্টগ্রাম-কক্সবাজার মহাসড়ক চারলেনে উন্নীত করা ছাড়া বিকল্প নেই বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা।


চট্টগ্রাম-কক্সবাজার মহাসড়কের লোহাগাড়া উপজেলার চুনতি জাঙ্গালিয়া এলাকায় গত তিন দিনে তিনটি দুর্ঘটনা ঘটেছে। এতে ১৫ জন নিহতসহ কমপক্ষে ২১ জন আহত হয়েছেন। একই স্থানে পর পর তিনটি দুর্ঘটনার পর নড়েচড়ে বসেছে স্থানীয় প্রশাসন। খোঁজা হচ্ছে দুর্ঘটনার কারণ। সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, সড়কটি সরু এবং ওই এলাকায় বিপজ্জনক বাঁক রয়েছে। এছাড়া ট্রাকে লবণ পরিবহন করার কারণে সড়কটি পিচ্ছিল থাকে। এসব কারণে দুর্ঘটনা ঘটতে পারে।


চুনতি জাঙ্গালিয়া এলাকায় গত তিন দিনের দুর্ঘটনার সব কয়টি ঘটে সকাল বেলা। এর মধ্যে সোমবার (৩১ মার্চ) সকালে যাত্রীবাহী বাস ও মিনিবাসের মুখোমুখি সংঘর্ষে ৫ জন নিহত হন, আহত হন ৯ জন। মঙ্গলবার (১ এপ্রিল) দুটি মাইক্রোবাস উল্টে ৯ জন আহত হন। আর বুধবার (২ এপ্রিল) সকালে বাস-মাইক্রোবাসের মুখোমুখি সংঘর্ষে ১০ জন নিহত এবং ৩ জন আহত হয়েছেন।

আরও পড়ুন: যশোরে বাসের ধাক্কায় মোটরসাইকেল আরোহী বাবা-মেয়ে নিহত

সরেজমিনে গিয়ে এবং প্রত্যক্ষদর্শীদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, চট্টগ্রাম-কক্সবাজার মহাসড়কের চুনতি জাঙ্গালিয়া এলাকায়; একই স্থানে পরপর ৩ দিনে ঘটেছে ৩টি দুর্ঘটনা। এতে ১৫ জন নিহতসহ আহত হয়েছে কমপক্ষে ২১ জন। কক্সবাজার-চট্টগ্রাম মহাসড়কের এ অংশে রয়েছে বিপজ্জনক বাঁক। বাঁকে নেই দিকচিহ্ন-সংবলিত সাইনবোর্ড কিংবা ফলক। এ মহাসড়কের দুই পাশে রয়েছে ঘন জঙ্গল। এতে দূর থেকে বাঁক চোখে পড়ে না।


এখানেই শেষ নয়। অনুমোদন না থাকলেও এই মহাসড়কে চলাচল করে অনেক ফিটনেসবিহীন যান ও নিষিদ্ধ ব্যাটারিচালিত ইজিবাইক, সিএনজিচালিত অটোরিকশা। ঝুঁকিপূর্ণ বাঁকগুলোয় দিকচিহ্ন-সংবলিত ফলক না থাকা, সড়কে ধারণক্ষমতার অতিরিক্ত ও অবৈধ যানের বেপরোয়া চলাচল, সড়কের ওপর ও পাশে অবৈধ হাটবাজার, বেপরোয়া গতি, লবণ পরিবহনের কারণে রাস্তা পিচ্ছিল থাকে। এছাড়া মহাসড়কে রয়েছে বড়বড় খাদ। যার কারণে একের পর এক ঘটছে দুর্ঘটনা, ঝরছে প্রাণ এমনটায় জানিয়েছেন স্থানীয় প্রত্যক্ষদর্শী, পরিবহন চালক ও হাইওয়ে পুলিশ।

আরও পড়ুন:  ঈদে কক্সবাজারে বেড়াতে যাওয়াই কাল হলো দম্পতির


চুনতির স্থানীয় বাসিন্দা রশিদ আহমেদ বলেন, চট্টগ্রাম-কক্সবাজার মহাসড়কটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। গত ২০ বছরেও এ মহাসড়ক প্রশস্ত করা হয়নি। সরু এই মহাসড়কে আছে বেশ কয়েকটি বিপজ্জনক বাঁক। মহাসড়কটি চার লেন কিংবা ছয় লেন করা হলে এ ধরনের দুর্ঘটনা ঘটতো না।


দোহাজারী হাইওয়ে থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) শুভরঞ্জন চাকমা বলেন, চুনতি জাঙ্গালিয়া এলাকার যে স্থানে দুর্ঘটনা ঘটেছে সেটি অত্যন্ত ঢালু। ভোরে সড়কে যানবাহন কম থাকে। ওই সময় ফ্রি রুটে যানবাহনের গতি থাকে বেশি। যেসব চালক নতুন তাদের এ সড়ক সম্পর্কে ধারণা থাকে না। যে কারণে গতি নিয়ন্ত্রণ করতে না পেরে দুর্ঘটনা ঘটছে। জাঙ্গালিয়া এলাকায় সড়ক যে ঢালু অবস্থায় রয়েছে তা সংস্কার প্রয়োজন।


তিনি আরও বলেন, ‘দুর্ঘটনার জন্য আমরা বেশ কিছু কারণ চিহ্নিত করেছি। এ সড়কে ট্রাকে লবণ পরিবহন করা হয়। লবণ পানি সড়কে পড়ে পিচ্ছিল হয়। এ কারণে দুর্ঘটনা ঘটে। এছাড়াও ওই এলাকায় এ সড়কে আছে বিপজ্জনক বাঁক, অন্য জেলার চালকদের এ সড়কে গাড়ি চালানোর অভিজ্ঞতা না থাকাসহ নানা কারণে এখানে বারবার দুর্ঘটনা ঘটছে বলে প্রাথমিকভাবে ধারণা করা হচ্ছে।’

আরও পড়ুন: ঈদের সকালে চট্টগ্রামে দুর্ঘটনায় নিহত ৫


তবে দুর্ঘটনা কমাতে চট্টগ্রাম-কক্সবাজার মহাসড়ক চারলেন কিংবা ছয় লেনে উন্নীত করা ছাড়া বিকল্প নেই মনে করছেন পরিবহন সংশ্লিষ্টরা।


আরাকান সড়ক পরিবহন শ্রমিক ইউনিয়নের সদস্য সেলিম উদ্দিন বলেন, দীর্ঘদিনের দাবি হচ্ছে চট্টগ্রাম-কক্সবাজার মহাসড়ক চারলেন কিংবা ছয়লেনে উন্নীত করা। কিন্তু এখনো পর্যন্ত কারো নজর নেই। তাই বার বার বলছি, এই মহাসড়কে দুর্ঘটনা কমাতে অবশ্যই এ মহাসড়কটি প্রশস্ত করতে হবে।


আর সড়ক ও জনপদ বিভাগ জানিয়েছে, চট্টগ্রাম-কক্সবাজার মহাসড়কটি প্রশস্ত করার একটি প্রকল্প রয়েছে। প্রকল্পটি বর্তমানে সম্ভাব্যতা যাচাইয়ের মধ্যে আছে।

আরও পড়ুন: শার্শায় প্রাইভেটকারের ধাক্কায় মোটরসাইকেলের দুই আরোহী নিহত

চট্টগ্রাম সড়ক ও জনপদ অধিদপ্তর (দক্ষিণ) এর উপ-বিভাগীয় প্রকৌশলী মো. আব্দুল আল নোমান পারভেজ বলেন, চুনতি এলাকায় দুর্ঘটনা কমাতে আপাতত গতি নিয়ন্ত্রণ বসানো হয়েছে। একই সঙ্গে সড়কের পাশে জঙ্গলও পরিষ্কার করা হয়েছে। আর দুর্ঘটনার কারণগুলো তদন্ত করা হবে উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের নির্দেশে।


মো. আব্দুল আল নোমান পারভেজ আরও বলেন, ‘চট্টগ্রাম-কক্সবাজার মহাসড়কটি জাইকা সম্ভাব্যতা যাচাইয়ের কাজ চলছে, আমার জানা মতে এটা সেপ্টেম্বরে শেষ হবে। সম্ভাব্যতা যাচাইয়ের কাজ শেষ হলে সবকিছু ঠিক থাকলে হয়তো আগামী ১ বছর কিংবা দেড় বছরের মধ্যে ছয়লেনের কাজ শুরু হয়ে যাবে।’


সড়ক ও জনপদ অধিদপ্তর জানিয়েছে, চট্টগ্রাম-কক্সবাজার ১৫০ কিলোমিটার দূরত্বের এই মহাসড়কে প্রতিদিনই চলাচল করছে ২০ হাজারের বেশি যানবাহন।

]]>
সম্পূর্ণ পড়ুন