বর্তমানে বাংলাদেশ দলের প্রধান খেলোয়াড় হলেন ইংলিশ প্রিমিয়ার লিগে খেলা হামজা চৌধুরী। তিনি দেশে আসলেই যেন হুমড়ি খেয়ে পড়েন ফুটবলপ্রেমীরা। তার সঙ্গে আছেন শমিত সোম, ফাহামেদুলরাও। যে কারণে জয়ের আশায় বুক বাঁধছেন সমর্থকরা।
‘সি’ গ্রুপে সিঙ্গাপুর এবং হংকয়ের পয়েন্ট সমান ৪ করে। ১ গোলে এগিয়ে থাকায় সিঙ্গাপুর আছে টেবিলের শীর্ষে, আর হংকং আছে দুইয়ে। বাংলাদেশ ও ভারতের পয়েন্টও সমান ১ করে। এখানেও গোল ব্যবধানে এগিয়ে থাকায় বাংলাদেশ আছে তিনে। কাল যদি ৩ পয়েন্ট নিতে পারে বাংলাদেশ, তাহলে তারা দুইয়ে উঠে আসবে। আর ড্র করলে হংকং উঠবে শীর্ষে, বাংলাদেশের অবস্থান থাকবে অপরিবর্তিত।
হংকংয়ের বিপক্ষে যদি পয়েন্ট হারায় বাংলাদেশ, তাহলে এশিয়ান কাপের রেস থেকে এক প্রকার ছিটকে যাবে তারা। যদিও কাগজে-কলমে একটা সম্ভাবনা থাকবে, তবে সেটি নামমাত্র। কাজেই হংকং চায়নার বিপক্ষে যেকোনো মূল্যেই হোক হাজমা-শমিতদের পয়েন্ট পেতেই হবে।
তবে জয় তো আর মুখের কথায় নয়, তার জন্য তো মাঠের পারফরম্যান্সও থাকতে হবে। বাংলাদেশে আসার আগে হংকং চায়না প্রস্তুতি নিয়েছে বড় দলের বিপক্ষে ম্যাচ খেলে। আর বাংলাদেশের ভারসা ঐ নেপাল-ভুটান। হংকং চায়নার মতো দলের বিপক্ষে খেলার আগে জামালরা প্রস্তুতি নিয়েছেন নেপালের বিপক্ষে একটি প্রীতি ম্যাচ খেলে, তাও আবার সে ম্যাচটি ড্র হয়েছে গোলশূন্য।
মাঠের খেলায় যা-ই হোক না কেন, প্রস্তুতির দিক থেকে বাংলাদেশ যে অনেক পিছিয়ে, সে নিয়ে অবশ্য কোনো সন্দেহ নেই। অন্যদিকে হংকং চায়না প্রস্তুতির কোনো কমতি রাখেনি। গত ১৫ জুলাই ইস্ট এশিয়ান কাপের ফাইনাল রাউন্ডে চীনের কাছে ১-০ গোলে হেরেছে হংকং।
আরও পড়ুন: ইতিহাসের প্রথম বিলিয়নিয়ার ফুটবলার রোনালদো, মেসির সম্পদের পরিমান কত
এর আগের ম্যাচে হংকং খেলেছে দক্ষিণ কোরিয়ার বিপক্ষে। ২০১৮ বিশ্বকাপে জার্মানির মতো দলকে কোরিয়া হারিয়েছিল ২-০ গোলে। আর সেই দক্ষিণ কোরিয়ার বিপক্ষে হংকং হেরেছে মাত্র ২-০ ব্যবধানে। এতেই স্পষ্ট যে, হংকং চায়নার রক্ষণ ঠিক কতটা শক্তিশালী।
তার আগে গত ৮ জুলাই শক্তিশালী জাপানের বিপক্ষে ৬-১ গোলে হেরেছে হংকং। যে জাপানকে বলা হয় এশিয়ার ফুটবলের পাওয়ার হাউজ। জাপানের বিপক্ষে হংকংয়ের হয়ে একমাত্র গোলটি করেছিলেন ম্যাট অর। ৬ ফিট ২ ইঞ্চি উচ্চতার এই ফরোয়ার্ড যে বাংলাদেশের ডিফেন্ডারদের বেশ ভালোই পরীক্ষা নেবে, তা বলাই বাহুল্য।
এ বছর ম্যাট অর হংকংয়ের হয়ে এখন পর্যন্ত খেলেছেন ৭ ম্যাচ, গোল করেছেন ২টি। গত বছর ১৬ ম্যাচে তার গোল ছিল ৬টি। ২০২৩ সালে ৬ ম্যাচ খেলে কোনো গোলের দেখা পাননি। তার আগের বছর ৭ ম্যাচে তার গোলসংখ্যা ২টি। সব মিলিয়ে এখন পর্যন্ত নামের পাশে আছে ১১ গোল।
ক্লাব ক্যারিয়ারেও তার পারফরম্যান্স খুব একটা খারাপ নয়। ২০২২ সাল থেকে তিনি খেলছেন চীনের ক্লাব শেনজেন পেং সিটির হয়ে। এর আগে কিচি এসসিতে তিনি খেলেছেন ৩ আসর। তার আগে তিনি ছিলেন সান ফ্রান্সিসকো ডোনস ক্লাবে।
সবশেষ জাপানের বিপক্ষে হংকং চায়নার ম্যাচের চিত্রটা যদি একটু দেখেন, তাহলে বুঝতে পারবেন তারা কতটা শক্তিশালী দল। এবং বাংলাদেশ তাদের ঠিক কতটা চ্যালেঞ্জ জানাতে পারবে।
জাপান ম্যাচে বল দখলের লড়াইয়ে অনেকটাই পিছিয়ে ছিল হংকং। জাপান বল দখলে রেখেছিলো ৬৯ শতাংশ। বিপরীতে হংকংয়ের দখলে বল ছিল মাত্র ৩১ শতাংশ। তবে পাস অ্যাকুরেসির দিক থেকে তারা জাপানের থেকে কিছুটা পিছিয়ে ছিল। জাপানের পাস অ্যাকুরেসি ৮৫ শতাংশ, আর হংকংয়ের ৬৩ শতাংশ।
আরও পড়ুন: ফিফার দুই কমিটিতে তাবিথ ও কিরণ
জাপান যেখানে ৮ টি কর্নার আদায় করে নিয়েছিল, হংকং সেখানে ৩টি কর্নার পেয়েছিল। এবং সে ম্যাচে হংকং পাস দিয়েছিলো ২৩১টি, আর জাপানের পাস ছিল ৪৯১টি। জাপান গোলের জন্য শট নিয়েছিল ২২টি, তার মধ্যে লক্ষ্যে ছিল ১০টি। অন্যদিকে হংকং জাপানের পোস্ট লক্ষ্য করে শট নিয়েছিল ৭টি, তার মধ্যে ২টি ছিল লক্ষ্যে।
এসব পরিসংখ্যান দেখে আপনার মনে হতেই পারে যে হংকং এ ম্যাচে কোনো পাত্তায় পায়নি। তবে প্রতিপক্ষ তো আপনাকে দেখতে হবে, জাপানকে বলা হয় এশিয়ার ফুটবলের পাওয়ার হাউজ। সেই জাপানের বিপক্ষে এমন পারফরম্যান্স দক্ষিণ এশিয়ার যেকোনো দলের জন্যই যে রীতিমতো ভয়ের কারণ।
অন্যদিকে গত এক সপ্তাহ ধরে কঠোর অনুশীলন করেছে বাংলাদেশ দল। শেষ মুহূর্তে দলের সঙ্গে যোগ দিয়েছেন শমিত সোম। তার আগের দিন অনুশীলন করেছেন হামজা চৌধুরী। তবে জয়ের ব্যাপারে আশাবাদী এই ফুটবলার। জাতীয় স্টেডিয়ামে অনুশীলন চলাকালীন হামজা বলেন, ‘যদিও আমার নিজের প্রতি কিছু প্রত্যাশা আছে, ফুটবলে সাফল্য একক প্রচেষ্টা নয়; এটি সম্মিলিত। হংকং ম্যাচের জন্য প্রস্তুতি পুরোদমে চলছে এবং কোচিং স্টাফ আমার সঙ্গে কিছু বিষয়ে আলোচনা করে গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত নিচ্ছেন। ইনশাল্লাহ, পরিকল্পনা ঠিক আছে।’
হাভিয়ের কাবরেরা খুব সম্ভবত কালকের ম্যাচে ৪-৩-৩ ফরমেশনেই পরিকল্পনা সাজাতে পারেন। গোল পোস্টের নিচে হয়তো থাকবেন মিতুল মারমা। রক্ষণে সাদউদ্দিন, তারেক কাজী, শাকিল আহাদ তপু এবং তপু বর্মনের ওপরেই ভরসা রাখবেন কাবরেরা। কিংবা জায়ান আহমেদ শুরুর একাদশে না থাকলেও বদলি হিসেবে হয়তো তিনি মাঠে নামবেন।
মাঝমাঠে হামজা চৌধুরী ও শমিত সোম নিশ্চিতভাবেই থাকবেন। জামাল ভূঁইয়াকে শুরুর একাদশে কোচ রাখবেন কি না, সে ব্যাপারে অবশ্য নিশ্চিত করে কিছু বলা যাচ্ছে না। এবং ফরোয়ার্ড লাইনে থাকতে পারেন রাকিব হোসেন, ফাহামেদুল ইসলাম এবং ফয়সাল আহমেদ ফাহিম।
]]>