গ্রামবাসীদের বোকা বানিয়ে কয়েক কোটি টাকা নিয়ে লাপাত্তা শাহীন!

২ সপ্তাহ আগে
প্রতিমাসে এক লাখ টাকায় ১৬-১৮ হাজার টাকা লাভের প্রতিশ্রুতি দেয়া হয়। বিশ্বাস অর্জন করতে গ্রাহককে লিখিত দেয়া হয় তিনশ’ টাকার নন জুডিশিয়াল স্ট্যাম্পেও। এমন অভিনব কায়দায় কয়েকটি গ্রামের ৫০০-৬০০ মানুষের কাছ থেকে কয়েকশ’ কোটি টাকা সংগ্রহ করে লাপাত্তা পঞ্চম শ্রেণি পর্যন্ত পড়ুয়া এক প্রতারক।

এমনই প্রতারণার শিকার হয়েছেন মাদারীপুরের শিবচর পৌরসভার ৯নং ওয়ার্ডের নলগোড়া গ্রামের বাচ্চু হাওলাদার, রুহি ঢালী, সরাফ উদ্দিন মৃধা, রাসেল মোল্লা। এদের কেউ ভ্যানচালক-কৃষক, কেউবা সরকারি চাকরিজীবী আবার কেউবা ব্যবসায়ী।

 

এই ঘটনার বিচার চেয়ে জেলা প্রশাসক ও পুলিশ সুপারের কাছে লিখিত দিয়েছেন ভুক্তভোগীরা।

 

ভুক্তভোগীদের অভিযোগ, শিবচর পৌরসভার নলগোড়া গ্রামের হবি জমাদ্দারের ছেলে শাহীন জমাদ্দার ইটের ব্যবসায় বিনিয়োগের লোভ দেখিয়ে কয়েকটি গ্রামের ৫০০-৬০০ মানুষের কাছ থেকে সংগ্রহ করেন কোটি কোটি টাকা। প্রথম দুই থেকে তিন মাস এক লাখ টাকায় ১৬-১৮ হাজার টাকা লাভ দেন শাহীন। বিশ্বাস অর্জন করতে স্ট্যাম্পে সবাইকে লিখিতও দেন। এরপর শুরু করেন টালবাহানা।

 

একপর্যায়ে গত ২৭ নভেম্বর রাতের আঁধারে স্ত্রী-সন্তান নিয়ে লাপাত্তা অভিযুক্ত শাহীন। বিষয়টি জানতে পেরে শাহীনের ঘরবাড়ি ঘেরাও করেন বিক্ষুব্ধরা।

 

আরও পড়ুন: শিল্পাঞ্চলে সেনা পরিচয়ে প্রতারণা করলে অভিযোগ দায়েরের আহ্বান

 

পরে বিচারের পাশাপাশি পাওনা টাকা আদায়ে জেলা প্রশাসক ও পুলিশ সুপারের কাছে লিখিত দিয়েছেন কয়েকজন ভুক্তভোগী।

 

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, ইটের ব্যবসায়ী না হলেও পঞ্চম শ্রেণি পর্যন্ত পড়ুয়া শাহীন জমাদ্দার গত ৪ বছর বিভিন্ন মানুষের কাছ থেকে অভিনব কায়দায় হাতিয়ে নেন কোটি কোটি টাকা। এই প্রতারণার হাত থেকে বাদ যায়নি শাহীনের বন্ধু-বান্ধব, আত্মীয়-স্বজনও। এক একজন মানুষের কাছ থেকে লাখ টাকা থেকে শুরু করে ৭০ থেকে ৮০ লাখ টাকাও সংগ্রহ করেন তিনি। এমন বড় অঙ্কের টাকা দেয়া মানুষের সংখ্যাও অনেক বেশি।

 

ভুক্তভোগী রুহি ঢালী বলেন, ‘আমি আমার মেয়ের কাছ থেকে এনে এবং ব্যক্তিগতভাবে ৯ লাখ টাকা শাহীনের হাতে তুলে দেই। লাভসহ আমার ১৮ লাখ টাকা হয়। এখন টাকা পরিশোধের সময় এসেছে অথচ ঘরবাড়ি ছেড়ে শাহীন পালিয়ে গেছে।’

 

সরাফ উদ্দিন মৃধা নামে আরেক ভুক্তভোগী বলেন, ‘দুই-তিন বছর ধরে শাহীন এভাবেই এলাকায় ব্যবসা করে আসছিলেন। এলাকার মানুষকে প্রথম কয়েক মাসে লাভের কিছু অংশ দিয়েছে, সেই লোভে পড়েই আমাদের এই দশা। আমাদের বলেছে প্রতি লাখে ৬ মাস পর পর ৯০ হাজার টাকা করে লাভ দেবে। আমার মেয়ের টাকা, আমার ভাগ্নের টাকাসহ মোট ৩০ লাখ টাকা দেই। তারপর আর কোনো খবর নেই শাহীনের।’


আরেক ভুক্তভোগী রাসেল মিয়া বলেন, কাউকে ইটের ব্যবসা দেখাইছে, কাউকে কয়লার ব্যবসায় বিনিয়োগের কথা বলছে। প্রথমে কয়েকজনকে এই লাভের টাকা দিয়েছে। পরে বিশ্বাস করে বহু মানুষ শাহীনের ইটের ব্যবসায় লাখ লাখ টাকা বিনিয়োগ করে। গ্রামের মানুষগুলোকে নিঃস্ব করে দিয়ে চলে গেছে শাহীন।

 

নলগোড়া গ্রামের বাচ্চু হাওলাদার বলেন, ‘আমার মেয়ের জামাই সৌদি আরবে দুর্ঘটনায় মারা যায়, সৌদি আরব থেকে আর্থিক সহযোগিতার পাওনা টাকা ও আমার টাকাসহ মোট ৭০ লাখ টাকা দেই। লাভের জন্য আমি এতোগুলো টাকা দিয়ে এখন পথের ফকির। শাহীনের বিচার দাবি করছি, সেই সাথে আমাদের সবার পাওনা টাকাও ফেরত চাচ্ছি।’

 

আরও পড়ুন: ‘অভাবের তাড়নায়’ কোর্ট-টাই পরে প্রতারণা করেন স্মৃতি!

 

একই গ্রামের নুর ইসলাম গাজীর স্ত্রী এলাচী বেগম বলেন, ‘আমার কাছ থেকে দেড় কোটি টাকা নিয়েছে শাহীন। আমার বাড়িতে এসে অনেক অনুরোধ করে এই টাকা নিয়েছে সে। আমার ছেলে ও জামাই বিদেশে থাকে। তাদের পাঠানো এই বিদেশি টাকা শাহীন জমাদ্দারের হাতে তুলে দেই। এমন হবে সেটা আগে বুঝতে পারি নাই।’

 

এ বিষয়ে মাদারীপুরের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (প্রশাসন ও অর্থ) ভাস্কর সাহা বলেন, প্রতারণার মাধ্যমে কোটি কোটি টাকা নিয়ে লাপাত্তা অভিযুক্ত শাহীন জমাদ্দার। তার ব্যাপারে খোঁজখবর নেয়া হচ্ছে। ভুক্তভোগীরা এখনো কোনো মামলা করেননি। মামলা রেকর্ডভুক্ত হলে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়া হবে।

 

মাদারীপুরের জেলা প্রশাসক (ডিসি) মোছা. ইয়াসমিন আক্তার বলেন, গ্রামের সহজসরল মানুষ লোভে পড়ে এমন প্রতারণার শিকার হয়েছেন। টাকা লেনদেনের আগে অবশ্যই ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠানের গুরুত্ব বিবেচনা করা উচিত। তা হলে এমন প্রতারিত হওয়ার সম্ভবনা কম থাকবে।

]]>
সম্পূর্ণ পড়ুন