গ্রামের নামের সাথে মিল রেখে লিচুর নাম মঙ্গলবাড়িয়া। মঙ্গলবাড়িয়া লিচুর কদর আছে দেশজুড়ে। টুকটুকে লাল রঙ, রসালো, ছোট বীজ আর খেতে সুস্বাদু হওয়ায় এ লিচুর চাহিদা সব সময় বেশি। গাছে ফুল আসার পর থেকে লিচু পাকার অপেক্ষায় থাকেন মানুষ।
এবার লিচুর ফলন হয়েছে ভালো। দাম গত বছরের তুলনায় কিছুটা কম। প্রকার ভেদে ৩ থেকে ৬’শ টাকা শতে বিক্রি হচ্ছে লিচু।
তবে মঙ্গলবাড়িয়া লিচুর বিশেষত্ব হচ্ছে এ লিচু বিক্রির জন্য বাজারে যেতে হয় না। গাছের নিচ থেকেই বিক্রি হয়ে যায় সব লিচু।
এখন লিচুর ভরা মওসুম। প্রতিদিন দেশের বিভিন্ন এলাকা থেকে শত শত মানুষ মানুষ আসছেন লিচু কিনতে। তারা লিচু বাগান ঘুরে ঘুরে দেখছেন আর লিচু কিনছেন।
আরও পড়ুন: আম-লিচুর বাগানে বেড়েছে ব্যস্ততা, ন্যায্য মূল্য নিশ্চিতের দাবি
ক্রেতারা জানান, তারা এখানে এসে নিজের চোখে দেখে গাছ থেকে পছন্দ করে লিচু কেনার সুযোগ পাচ্ছেন।
মঙ্গলবাড়িয়া গ্রামের আনাচে-কানাচে চোখে পড়কে লিচু গাছ। রাস্তার দু’পাশে এমন বসতঘরের চারপাশে ছড়িয়ে-ছিটিয়ে আছে লিচু বাগান। এখানকার মানুষের প্রধান আয়ের উৎস লিচু। লিচু বিক্রির টাকায় চলে সংসারের ভরণ-পোষন, ছেলে-মেয়ের লেখাপড়া আর বিয়ে-সাদি।
গাছে মুকুল আসার পর অনেক ব্যবসায়ি লিচু গাছ কিনে নেয়। বংশ পরম্পরায় অনেকেই লিচু চাষের সাথে জড়িত।
গ্রামের লিচু চাষি মো. শাহজাহান জানান, তার বাপ-দাদারা লিচু চাষ করতেন। এখন তিনি করছেন। তাদের বাড়ির বড় বড় লিচু গাছের বয়স কতো সেটি তিনিও জানেন না।
তিনি বলেন, লিচুর আয় থেকেই আমাদের পরিবারের সারা বছরের খরচ চলে। তা ছাড়া ছেলে-মেয়েদের লেখাপড়া এমনকি বিয়ে সাদিতে এ টাকা খরচ করা হয়।
জানা গেছে, মঙ্গলবাড়িয়া গ্রামের কয়েক’শ পরিবার লিচু চাষের সঙ্গে জড়িত। মঙ্গলবাড়িয়া ছাড়াও, কুমারপুর, নারান্দী ও হোসেন্দি এলাকায় ছড়িয়ে পড়েছে মঙ্গলবাড়িয়া জাতের লিচু। লিচু চাষে কৃষকদের সব ধরনের সহযোগিতা দিচ্ছে স্থানীয় কৃষি বিভাগ। এবার মঙ্গলবাড়িয়া থেকে ১০ কোটি টাকার লিচু বিক্রি হবে বলে আশা করছে কৃষি অফিস।
আরও পড়ুন: লিচুর মুকুলে ৫০ বছরে এমন বিপর্যয় দেখেননি চাষিরা
পাকুন্দিয়া উপজেলা কৃষি অফিসার নূর-ই-আলম জানান, গাছে মুকুল আসার পর থেকে কৃষকদের গাছ পরিচর্যার বিষয়ে আমরা নানা পরামর্শ দিয়ে থাকি। যাতে তারা লিচু পাকার পর ভালো দাম পায়, একই সাথে ক্রেতারা যাতে কোন প্রকার প্রতারণার শিকার না হয় সেদিকেও আমরা নজরদারি করি।
জানা গেছে, প্রায় ২০০ বছর আগে মঙ্গলবাড়িয়া গ্রামে এক ব্যক্তি চীন থেকে একটি লিচুর চারা নিয়ে আসেন। চারাটি পাকুন্দিয়া উপজেলা সদরের মঙ্গলবাড়িয়া গ্রামে তার বাড়ির আঙ্গিনায় রোপণ করেন। এতে ভালো ফলন আসে। বেশি ফলন, রসে টসটসে ও ছোট বিচির কারণে সুস্বাদু এ লিচুর চারা দ্রুত ছড়িয়ে পড়ে গ্রামের প্রতিটি বাড়িতে। বর্তমানে ৭ হাজারেরও বেশি লিচুগাছ রয়েছে মঙ্গলবাড়িয়া গ্রামে।
]]>