গোপালগঞ্জে বেড়িবাঁধ কাটায় দুর্ভোগে বাসিন্দারা

২ সপ্তাহ আগে
গোপালগঞ্জের টুঙ্গিপাড়ায় আওয়ামী লীগ নেতাদের বিরুদ্ধে বেড়িবাঁধ কাটার অভিযোগ উঠেছে। বেড়িবাঁধ কাটার ফলে বন্যার সময় লোকালয়ে পানি ঢোকায় ক্ষতির সম্মুখীন হচ্ছে এবং পাশাপাশি যাতায়াতে ভোগান্তির শিকার হচ্ছেন এলাকার বাসিন্দারা। ইটভাটার ফলে চলাচলের রাস্তা বন্ধ করে দেওয়ায় বেড়িবাঁধ এলাকায় বসবাসকারী পরিবারগুলো চরম ভোগান্তির শিকার হচ্ছেন।

আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় থাকাকালীন তাদের বিরুদ্ধে মুখ খুলতে সাহস পায়নি স্থানীয়রা। এদিকে দায় এড়াতে পানি উন্নয়ন বোর্ড বলছে, স্থানীয়দের বাধায় ওই অংশটুকুর কাজ সম্পন্ন করা যায়নি।


গোপালগঞ্জ জেলার দক্ষিণাঞ্চলকে সুরক্ষিত রাখতে ২০১০ সালে ৩০৫কোটি টাকা ব্যয়ে তারাইল-পাঁচুড়িয়া বন্যা নিয়ন্ত্রণ প্রকল্পের আওতায় সোয়া ১৬ কিলোমিটার বেড়িবাঁধ নির্মাণ কাজ শুরু হয় এবং প্রায় ১৯০ কোটি টাকা ব্যয়ে ২০১৬ সালে ১৫ কিলোমিটার বেড়িবাঁধ নির্মাণ কাজ করা হয়। এরপর ভূমি অধিগ্রহণের টাকা না পাওয়ায় জমির মালিকদের বাধার কারণে শেষ প্রান্তের সোয়া ১ কিলোমিটার বেড়িবাঁধ নির্মাণ কাজ বন্ধ হয়ে যায়। বেড়িবাঁধ নির্মাণের একমাস পরেই টুঙ্গিপাড়া উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক মো. বাবুল শেখ এবং সহ-সভাপতি ও সাবেক মেয়র মো, ইলিয়াস হোসেন টুঙ্গিপাড়ার চর গওহরডাঙ্গা এলাকার মধুমতি নদীর তীরে তাদের মালিকানাধীন ইটভাটায় নদীপথে আনা মাটি ও ইট পরিবহনের জন্য রাস্তা নির্মাণ করতে প্রভাব খাটিয়ে বাঁধের ৩টি স্থানে কেটে ফেলে।


আরও পড়ুন: শরীয়তপুরের পদ্মা পাড়ে স্থায়ী বেড়িবাঁধের দাবি


বাঁধ কেটে ফেলায় বন্যা নিয়ন্ত্রণের জন্য নির্মিত বেড়িবাঁধের কোনো সুফল পাচ্ছে না এলাকাবাসী। দীর্ঘবছর আওয়ামী লীগের গুরুত্বপূর্ণ পদে থাকায় এতোদিন মুখ খলতে সাহস পায়নি তারা। বাঁধ কেটে ফেলায় বন্যার পানি ঢুকে তলিয়ে যায় ফসলি জমি ও বাড়ি-ঘর। এ ছাড়া বেড়িবাঁধের রাস্তা দিয়ে চলাচল করতে না পারায় চরম বিপাকে পড়ছেন ওই এলাকার বাসিন্দারা। ইটভাটার ফলে এলাকাবাসীর চলাচলের রাস্তা বন্ধ হওয়ায় হঠাৎ অসুস্থ রোগীরা দ্রুত চিকিৎসা সেবা থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন।


বেড়িবাধ সংলগ্ন বাসিন্দা মৈয়র আলী শেখ বলেন, বেড়িবাধটি সম্পন্ন করা হয়নি। যেটুকু হয়েছে সেই বেড়িবাধের তিন স্হানে কাটা হয়েছে। আমাদের যাতায়াত করতে হলে ইবাদত খলিফার ইট ভাটার ভিতর দিয়ে যেতে হয়। বেড়িবাঁধ ঠিক হলে আমরা মালামাল রাস্তা দিয়েই ঠিকমতো নিয়ে আসতে পারবো। তিনটি ইটভাটার কাছে বেড়িবাঁধ কাটা।


বেড়িবাঁধের বাসিন্দা সাহাবুল শেখ বলেন, আমি এখানকার একজন বাসিন্দা। আমার বাড়ির পাশে জুয়েল ইটভাটা। ভাটার পাশে যে বেড়িবাধ রয়েছে সেটি ভাটার মালিক তার প্রয়োজনে কেটে ফেলেছে। এ কারণে আমরা ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছি। বর্ষার সময় আমাদের ঘরের ভেতরে পানি ঢুকে যায়। ভাটার মালিক অনেক প্রভাবশালী ও ক্ষমতাশালী। আমরা ভয়ে তাদের কিছু বলতে পারি না।


বেড়িবাঁধের বাসিন্দা গৃহিনী শাহানা বেগম বলেন, বেড়িবাঁধের রাস্তা কেটে সেইস্হানে মাটির স্তুপ করে রেখেছে। ফলে আমাদের বাড়িতে ভ্যান গাড়ি আনারও কোনো কায়দা নাই।  রাতে বিকেলে একটা অসুবিধা হলে কেউ অসুস্থ হলো কোন অ্যাক্সিডেন্ট ঘটলো আমরা রোগী নিয়ে যেতে পারি না। আমাকে বসে থাকতে হবে কখন সকাল হবে। রাস্তা না থাকায় এই খারাপ পরিস্থিতির ভিতরে বসবাস করতে হচ্ছে। আমাদের সমস্যায় কেউ এগিয়ে আসছে না।


বেড়িবাঁধের বাসিন্দা তুরানী খাতুন বলেন, এমনিতেই বেড়িবাঁধ ঠিক নাই এজন্য আমাদের চলাচলে একদিকে অসুবিধা হয় আবার বেড়িবাঁধের ওপর মাটি ফেলে রাখায় বাড়ি থেকে বের হতে পারি না। সন্ধ্যার পর থেকে পরের দিন সকাল ৯ টার আগে বাড়ি থেকে বের হওয়া যায় না। ইটভাটার গেট বন্ধ করে রাখে। এটা খুবই অমানবিক।


বেড়িবাঁধের বাসিন্দা ভ্যানচালক মোস্তফা শেখ বলেন, আমাগে তো সমস্যা আমাকে রাস্তা বিরিজে নাম আসলে আমরা চলতে পারতেছি না, আমাগে ইনকাম বন্ধ, আমরা ভ্যান চালাতে পারি না। ভ্যান নিয়ে আসতে পারি না। আমাদের নানা সমস্যা। আমরা গ্রামের সব মানুষ দুর্ভোগে পরেছি। এক পাশে রাস্তা আছে এক পাশে ভাটার সামনে কাটা। ফলে বাড়ি থেকে বের হতে পারি না ভ্যান নিয়ে। ভ্যান নিয়ে বাড়ি থেকে বের হওয়ার কোন উপায় নেই আমাদের।


ভেকুর মালিক কামরুল শেখ বলেন, ‘এ জায়গায় বেড়িবাঁধ নাই কেন আমি জানি না। ফাঁকা পেয়েছি এই কারণে ভাটার জন্য মাটি ফেলাচ্ছি।’ ৫ আগস্টের পর  নেতারা এলাকা ছাড়া হওয়ায় তাদের সঙ্গে যোগাযোগ করা সম্ভব হয়নি।’


গোপালগঞ্জ পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী এস এম রেফাত জামিল বাঁধ কেটে ফেলার বিষয়টি এড়িয়ে কাটা অংশে বেড়িবাঁধ পুনঃনির্মাণের আশ্বাস দেন।
 

 

]]>
সম্পূর্ণ পড়ুন