গীবত থেকে বেঁচে থাকাও আত্মশুদ্ধির পথে চলা

২ সপ্তাহ আগে
হজরত আশরাফ আলী থানবী (রহ.) বলেছেন, মাঝে মাঝে কেউ কেউ এসে বলেন, হুজুর, আমি আপনার গীবত করেছি, আমাকে মাফ করে দিন। আমি তখন বলি, এক শর্তে মাফ করবো, আগে বলো, কী গীবত করেছ? এর মাধ্যমে আমি জানতে চাই, মানুষ আমার সম্পর্কে কী বলে। যদি সে আমার সামনে বলার সাহস পায়, তাহলে তাকে মাফ করে দিই।

হজরত থানবী (রহ.) বলেন, 

 

এর পেছনে আমার উদ্দেশ্য হল যে দোষের কথা বলা হয়েছে, তা হয়তো আমার মধ্যেই আছে। আমি যদি তা জানতে পারি, তাহলে আল্লাহ তাআলা হয়তো আমাকে সে দোষ থেকে বাঁচার তাওফিক দেবেন।

 

গীবত থেকে বাঁচার প্রকৃত চিকিৎসা

 

গীবতের আসল চিকিৎসা হলো নিজের ভুল স্বীকার করা ও যার গীবত করা হয়েছে তার কাছে ক্ষমা চাওয়া। যদিও এটি কঠিন, মনের উপর করাত চালিয়ে বলতে হয়, ভাই, আমি তোমার গীবত করেছি, আমাকে মাফ করে দাও। তবুও এটিই প্রকৃত আত্মশুদ্ধির পথ। দু’চারবার এমন করলে ইনশাআল্লাহ ভবিষ্যতে আর গীবত করার সাহস হবে না।

 

আরও পড়ুন: এবারও বিশ্বের প্রভাবশালী ৫০০ মুসলিমের তালিকায় ড. মুহাম্মদ ইউনূস

 

বুযুর্গদের পরামর্শ

 

হজরত হাসান বসরী (রহ.) বলেছেন, যখন কারো দোষ মনে পড়ে, তখন নিজের দোষগুলো ভাবো। মনে করো, আমি নিজেও তো দোষমুক্ত নই। একইসাথে গীবতের শাস্তির কথাও ভাববে এবং দোয়া করবে হে আল্লাহ! আমাকে এই ভয়াবহ পাপ থেকে রক্ষা করুন।

 

যদি কোনো মজলিসে গীবত শুরু হয়ে যায়, তখনই মনে করবে, এটা আল্লাহর অপ্রিয় কাজ। মনে মনে দোয়া করবে হে আল্লাহ! এই গীবতের মজলিস থেকে আমাকে হেফাজত করুন।

 

গীবতের কাফফারা

 

এক হাদীসে এসেছে (অর্থসহ সহিহ), যদি কারো গীবত হয়ে যায়, তাহলে তার কাফফারা হলো যার গীবত করা হয়েছে, তার জন্য দোয়া ও ইস্তেগফার করা। যেমন কেউ আজীবন গীবত করেছে, কিন্তু এখন অনুতপ্ত। সে জানে না, কার কার গীবত করেছে। তার জন্য করণীয়, যাদের গীবত করেছে, তাদের সবার জন্য দোয়া করতে থাকা ও ইস্তেগফার চালিয়ে যাওয়া। এভাবে আশা করা যায়, আল্লাহ তার গুনাহ ক্ষমা করবেন। সূত্র: মিশকাত, কিতাবুল আদাব (হাদিস: ৪৮৭৭)

 

কারো হক নষ্ট হলে করণীয়

 

হজরত থানবী (রহ.) ও মুফতি মুহাম্মদ শফী (রহ.) তাদের জীবনের শেষদিকে এমন অনেককে চিঠি লিখেছিলেন, জীবনে আপনার বহু হক নষ্ট করেছি। আল্লাহর ওয়াস্তে আমাকে ক্ষমা করে দিন। এমন বিনয়ী আচরণই প্রকৃত ঈমানদারের পরিচয়। আশা করা যায়, আল্লাহ তাঁদেরকে ক্ষমা করেছেন এবং হক নষ্টের গুনাহ থেকে মুক্তি দিয়েছেন।

 

যদি যার হক নষ্ট করা হয়েছে সে মারা যায় বা আর খুঁজে পাওয়া না যায়, তখন করণীয় হলো, তার জন্য বেশি বেশি দোয়া করা ও ইস্তেগফার করা। যেমন, হে আল্লাহ! আমি অমুকের হক নষ্ট করেছি, তাকে মর্যাদা বৃদ্ধি দিন এবং আমার গুনাহ ক্ষমা করুন। 

 

ক্ষমা চাওয়া ও ক্ষমা করার ফজিলত

 

রাসুলুল্লাহ সা. বলেছেন, যদি কেউ কারো কাছে ক্ষমা চায়, আর অপর ব্যক্তি তার অনুতপ্ত অবস্থা দেখে ক্ষমা করে দেয়, তাহলে আল্লাহ তাআলাও কিয়ামতের দিন তাকে ক্ষমা করবেন, যেদিন তার সবচেয়ে বেশি প্রয়োজন হবে। কিন্তু কেউ যদি বলে, আমি তোমাকে মাফ করবো না, তাহলে আল্লাহ তাআলা বলবেন, তুমি যখন আমার বান্দাকে ক্ষমা করনি, আমিও আজ তোমাকে মাফ করবো না। সুতরাং, ক্ষমা প্রার্থনা করাও যেমন কর্তব্য, ক্ষমা করাও তেমনি এক বিশাল সওয়াবের কাজ। মাফ চাওয়া মানে আত্মাকে পরিশুদ্ধ করা, আর মাফ করে দেওয়া মানে আল্লাহর রহমত অর্জন করা।

 

আমরা যদি বুযুর্গদের মতো সাহস নিয়ে অন্যের কাছে ক্ষমা চাইতে পারি, আমাদের মর্যাদা নষ্ট হবে না, বরং আল্লাহর কাছে বাড়বে। হয়তো সেই বিনয় ও তওবার মাধ্যমে আল্লাহ তাআলা আমাদের গীবত, হক নষ্ট ও সকল অন্যায় ক্ষমা করে দেবেন। আল্লাহ আমাদের সবাইকে ক্ষমাশীল ও নম্র বানান। আমিন।

]]>
সম্পূর্ণ পড়ুন