গাড়ল ও দুম্বার সংকর জাত উদ্ভাবনে আসাদুজ্জামানের সাফল্য

২ দিন আগে
দেশি ভেড়া ও কাশ্মীরি ভেড়ার সংকর প্রজাতি গাড়ল। এবার সেই গাড়লের সাথে মধ্যপ্রাচ্যের প্রাণী দুম্বার সংকর ঘটিয়ে নতুন জাতের দুম্বা উদ্ভাবন করেছেন মেহেরপুরের গাংনী উপজেলার ভোমরদা গ্রামের আসাদুজ্জামান।

এই জাতে গাড়ল কিংবা দেশি ভেড়ার থেকে মাংস বেশি উৎপাদন হওয়ায় নতুন সম্ভাবনা দেখছেন এই খামারী। নতুন জাতটির খাবার, পরিচর্যা ও পালন পদ্ধতি সবই ভেড়ার মতই। এরই মধ্যে আসাদুজ্জামানের দেখে নতুন খামার করেছেন অনেকেই। 

 

সংকর জাতের এই দুম্বা পালন করলে লাভবান হওয়া সম্ভব বলছে প্রাণিসম্পদ বিভাগও। তবে এই জাতের দীর্ঘমেয়াদী প্রভাব সম্পর্কে জানতে গবেষণা প্রয়োজন বলেও জানান উপজেলা পানিসম্পদ কর্মকর্তা। 

 

এক সময় গাড়ি চালাতেন আসাদুজ্জামান। চালক পেশা ছেড়ে মালয়েশিয়া যান তিনি। ৬ বছর প্রবাস থেকে ২০২০ সালে তিনি দেশে ফেরেন। শুরু করেন গরু ও ছাগল পালন। ছাগল পালনে আর্থিক ক্ষতির কারণে গাড়ল পালন শুরু করেন তিনি। 

 

জিজ্ঞাসু মন থেকেই আসাদুজ্জামান গাড়ল ও দুম্বার সংকর ঘটানোর চিন্তা করেন। প্রথমে চুয়াডাঙ্গা এবং পরে নাটোর থেকে সাড়ে ৩ লাখ টাকা ব্যয়ে দুটি দুম্বার পাঠা আনেন এবং সেই পাঠা দিয়ে গাড়লের সঙ্গে ক্রস করেন। 

 

আরও পড়ুন: খুলনা কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপাচার্যসহ ১৭ জনের বিরুদ্ধে মামলা

 

এতে সফল হন আসাদুজ্জামান যা পুরো এলাকায় সাড়া ফেলে দেয়। তিনি নতুন জাতের দুম্বার বাচ্চা বিক্রি শুরু করেন এবং মাত্র দেড় বছরে ৮ লাখ টাকার বাচ্চা বিক্রি করেন। তার খামারে দুটি মা দুম্বা রয়েছে। স্বল্প পরিসরে বাড়িতেই খামার করেছেন আসাদুজ্জামান। এখন স্বপ্ন দেখছেন জায়গা কিনে বড় একটি দুম্বার খামার গড়ার। 

 

দেখতে অনেকটা গাড়লের মতো। কিন্তু আসলে গাড়ল নয়। ছোট লেজ আর পেছনের অংশ চেপ্টা। দুম্বা পাঠার সাথে মা গাড়লের ক্রস করিয়ে উৎপাদন করা হয়েছে নতুন জাতের দুম্বা। 

 

মাত্র ৬ মাস বয়সি একটি দুম্বার ওজন হচ্ছে ৩৫ থেকে ৪০ কেজি। অথচ একই বয়সের একটি গাড়লের বাচ্চার ওজন হচ্ছে ১২ থেকে ১৫ কেজি। বাচ্চাও হচ্ছে দুটি। প্রতিটি বাচ্ছা বিক্রি হচ্ছে ৩০ থেকে ৩৫ হাজার টাকায়। দুম্বার বাচ্চার খোঁজে অনেকেই এখন ধর্না দিচ্ছেন আসাদুজ্জামানের খামারে। 

 

আসাদুজ্জামান জানান, নতুন জাতের দুম্বা পালনে বেশ কিছু সুবিধা। এগুলো বৃষ্টিতে ভিজেও সহজে অসুস্থ হচ্ছে না। জলাবদ্ধ এলাকায়ও স্বাভাবিকভাবে টিকে থাকতে পারছে। 

 

আরও পড়ুন: বাগানে পাওয়া ফুটফুটে কন্যাশিশুকে দত্তক নিতে ‘প্রতিযোগিতা’

 

তিনি বলেন, 

এ পর্যন্ত ৪০টির মতো সংকর বাচ্চা বিক্রি করেছি। আমার খামারে এখন ৮০টি মা গাড়লের সঙ্গে দুম্বার পাঠার নিয়মিত সংকর প্রজনন চলছে। 

 

মাংস বেশি হওয়ায় এ প্রজাতির দুম্বা পালনে খামারীরা লাভবান হবেন বলছেন আসাদুজ্জামান। তার কাছ থেকে নিয়ে খামার করেছেন একই গ্রামের নজরুল ইসলাম। তিনি জানান, প্রতিটি ৩০ হাজার করে দশটি দুম্বা নিয়েছেন তিনি। 

 

তিনি আরও জানান, ‘ভেড়ার মতই নতুন জাতের এই দুম্বা পালনে পরিশ্রম ও খরচ কম। রোগবালাই কম হওয়াই লাভবান হব বলে আশা করছি।’ লাভ হলে খামারের পরিধি বাড়াবেন বলেও জানান নজরুল ইসলাম। 

 

এ ধরনের সংকরায়ণ টেকসই হলে তা বাংলাদেশের মাংস উৎপাদন খাতে একটি নতুন দিগন্ত হতে পারে। তবে এর জন্য প্রয়োজন গবেষণা, প্রশিক্ষণ ও সরকারি সহায়তা।

 

আরও পড়ুন: খুলনায় ভোক্তা অধিকারের অভিযান, ১৭ প্রতিষ্ঠানকে জরিমানা

 

গাংনী উপজেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা ডা. মোত্তালেব আলী বলেন, মাঠ পর্যায়ে দেখা যাচ্ছে এই সংকর ভেড়াগুলোর মাংস উৎপাদন ক্ষমতা অনেক বেশি। তবে এ নিয়ে এখনও কোনো জাতীয় নীতিমালা নেই, সরকারিভাবেও কোনো গবেষণা শুরু হয়নি। 

 

তিনি আরও বলেন, এর কোনো পার্শপ্রতিক্রিয়া আছে কিনা তা নিয়ে গবেষণা দরকার। আমরা কোনো খামারিকে গাড়ল ও দুম্বার সংকর করতে নিরুৎসাহিত করছি না।

 

প্রায় ২০ বছর আগে দেশি ভেড়ার সঙ্গে কাশ্মীরি প্রজাতির ভেড়ার সংকরায়ণে যে জাতের উদ্ভব হয়েছিল সেটি গাড়ল নামে বাংলাদেশ ও ভারতবর্ষে স্বীকৃতি পায়। তবে গাড়ল ও দুম্বার সংকর প্রজাতির কোনো নাম দেয়া হয়নি এখনও।

]]>
সম্পূর্ণ পড়ুন