গাজীপুরে নেই খেলার মাঠ, শিশু-কিশোররা ঝুঁকছে মোবাইল ফোনে

২ দিন আগে
নেই খেলার মাঠ ও পার্ক। অপরিকল্পিত নগরায়নের ফলে গাজীপুরে দিন দিন দখল হচ্ছে মাঠ, ভরাট হচ্ছে নদী। ফলাফল, শিশু-কিশোররা ঝুঁকছে মোবাইল ফোনে। আবার কেউ কেউ জড়িয়ে পড়ছে মাদকসেবনসহ অনৈতিক কাজে। যদিও এর দায় নিতে চায় না কোনো কর্তৃপক্ষ। এমন বাস্তবতায়, দ্রুতই দফতরগুলোকে সমন্বয়ের পাশাপাশি পরিকল্পিত নগরায়নের তাগিদ বিশেষজ্ঞদের।

গাজীপুরের টঙ্গীতে দেখা যায় ময়লার স্তূপের এক পাশের আবর্জনা সরিয়ে বানানো হয়েছে খেলার মাঠ। কয়েকজন কিশোরের উদ্যোগে ছোট্ট এই জায়গাটি এখন আশপাশের কয়েক এলাকার শিশু-কিশোরদেরও একমাত্র খেলার স্থান।


স্থানীয় কিশোরদের একজন বলেন, স্কুলেও খেলার মাঠ নেই পুরো এলাকাতেও মাঠ নেই। তাই আমরা ময়লা সরিয়ে মাঠ বানিয়েছি। এটা ছাড়া কোনো উপায় নেই, মাঠ কই পাবো সরকার না দিলে?


ময়লার স্তূপেও যাদের জায়গা হয়নি তারা খেলছে সড়কের উপর। এমন চিত্র গাজীপুর সিটি করপোরেশনের প্রায় প্রতিটি ওয়ার্ডেই।


জীবিকার তাগিদে দেশের বিভিন্ন অঞ্চলের মানুষের বসবাস বেড়েই চলছে এই জনপদে। তাইতো বসতভিটার চাপে এখন ফাঁকা জায়গা খুঁজে পাওয়া দুষ্কর।


গাজীপুরে যে কটি মাঠ এখনো অবশিষ্ট আছে তার মধ্যে ‘ল রাজবাড়ি মাঠ’ একটি। যদিও বছরের বেশিরভাগ সময় মেলাসহ বিভিন্ন আয়োজনের জন্যই বরাদ্দ থাকে এমন ফাঁকা জায়গাগুলো।


বিশেষজ্ঞরা বলছেন, খেলাধুলার পর্যাপ্ত জায়গা না থাকায় এই এলাকায় শিশুদের মানসিক বিকাশ বাধাগ্রস্ত হওয়ার অন্যতম কারণ।


আরও পড়ুন: ঢাকা বিশ্ববিদ্যালের সব খেলার মাঠ সংরক্ষণের নির্দেশ হাইকোর্টের


এই শহরের গোড়াপত্তন যাদের হাত ধরে আজ তাদেরই নেই স্বস্তির নিশ্বাস নেয়ার মতো কোনো স্থান। শেষ বয়সে এসে তাইতো শরীরচর্চার জন্য জায়গা ভাগাভাগি করতে হচ্ছে তরুণদের সঙ্গে। অনেকটা আক্ষেপের সুরে বললেন, এমন গাজীপুরের স্বপ্ন দেখেনি নগরবাসী। 


প্রবীণ সাংবাদিক ও স্থানীয় বাসিন্দা নাসির উদ্দীন বলেন, কোন দায়িত্বশীল ব্যক্তিই গাজীপুরকে নিয়ে পরিকল্পনা করেনি। দিন দিন এতোটাই ঘনবসতিপূর্ণ এলাকা হচ্ছে এটি আমাদের হাটাহাটিরও কোনো জায়গা নেই। শিগগিরই এর স্থায়ী সমাধান করা উচিত। না হলে তরুণ প্রজন্ম আরও বেশি মাদকাসক্ত হয়ে পড়বে। তাদের ভবিষ্যৎ অন্ধকার।


অপরিকল্পিতভাবে গড়ে উঠা এই নগরের দায় নিতে চায় না কোনো কর্তৃপক্ষ। অথচ নগরবাসীর সেবায় গেল ১ যুগ আগে নির্মিত হয়েছে সিটি করপোরেশন। বছর দুয়েক হলো যাত্রা শুরু করেছে গাজীপুর উন্নয়ন কর্তৃপক্ষও। অথচ এখন পর্যন্ত এই নগরী নিয়ে তৈরি হয়নি কোলো মাস্টারপ্ল্যান।


গাজীপুর সিটি করপোরেশনের প্রধান নগর পরিকল্পনাবিদ ড. সৈয়দা সায়কা বিনতে আলম বলেন, ডুয়েটের সহায়তায় আমরা একটি মাস্টারপ্ল্যান তৈরি করেছি। কিন্তু সেটি এখনো মন্ত্রণালয় থেকে এপ্রুভাল দেয়নি। সেই মাস্টারপ্ল্যানে প্রতিটি ওয়ার্ডে খেলার মাঠ, বিনোদন কেন্দ্র করার কথা বলা হয়েছে।


আরও পড়ুন: সময় টিভিতে প্রতিবেদনে পর সরকারি পার্ক থেকে দোকানপাট অপসারণের উদ্যোগ


যদিও গাজীপুর উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের চেয়ারম্যান মোহাম্মদ আবদুল মান্নান বলেন, গাজীপুরে দালানকোঠা নির্মাণের পর উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ করা হয়েছে, যদিও নিয়ম অনুযায়ী একটি উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ নির্ধারণ করবে কীভাবে কোন এলাকায় দালান হবে আর কোন এলাকায় মাঠ হবে। এখন তো মানুষের ঘরবাড়ি ভেঙে মাঠ তৈরি করা যাবে না। তবে সরকার চাইলে সম্ভব। তাছাড়া মাস্টারপ্ল্যানের জন্য এখনো কোন বরাদ্দ পায়নি গাজীপুর উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ।


পরিকল্পিত নগরায়ন বাস্তবায়নে দফায় দফায় চেষ্টা করেও ব্যর্থ হয়েছে এই এলাকার বাসিন্দারা। প্রশাসনের নীরব ভূমিকা আর রাজনৈতিক টানাপোড়েনই এর অন্যতম কারণ বলছেন বিশেষজ্ঞরা।


সচেতন নাগরিক কমিটি (সনাক), গাজীপুরের সহ-সভাপতি শেকানুল ইসলাম শাহী বলেন, এখনো চাইলে খেলার মাঠ আর পার্ক করা সম্ভব। অসংখ্য সরকারি জমি আছে যেগুলো মানুষের দখলে রয়েছে। সেগুলো উদ্ধার করে কাজে লাগাতে পারে কর্তৃপক্ষ।


৩৩০ বর্গ কিলোমিটার আয়তনের এই নগরীর মোট জনসংখ্যা ৩৫ লাখেরও বেশি। নাগরিক নানা সুবিধার আশ্বাস নয় এবার পরিকল্পনার বাস্তবায়ন চান এখানকার বাসিন্দারা।

]]>
সম্পূর্ণ পড়ুন