ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনা করেন শ্রীপুর উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) আতাহার শাকিল। সঙ্গে ছিলেন শ্রীপুর উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা শফিকুল ইসলাম।
ভুক্তভোগী পরিবারের লিখিত অভিযোগে বলা হয়, গত ২২ জুন সকাল ১১ টার দিকে মিথিলা আক্তার (২৪) নামে এক অন্তঃসত্তা নারীকে শ্রীপুর পৌর শহরের জায়েদা মাল্টি কেয়ার হাসপাতালে নিয়ে যান স্বজনেরা। মিথিলা আক্তার শ্রীপুর সদর এলাকার শহিদুল ইসলামের স্ত্রী। শারীরিক পরীক্ষার পর হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ সেদিনই মিথিলার সিজারিয়ান অপারেশন করতে পরামর্শ দেয়।
আরও পড়ুন: শরীয়তপুর সদর হাসপাতাল / রোগীর কাছে চিকিৎসকের টাকা দাবি, সত্যতা পেল দুদক
স্বজনেরা সিজারিয়ান অপারেশনের জন্য রোগীকে অন্য হাসপাতালে নিতে চাইলে জায়েদা মাল্টি কেয়ার হাসপাতালের ব্যবস্থাপক মো. নাজমুল ও মো. মেহেদী তাদের ওই হাসপাতালেই রাখার জন্য অনুরোধ করেন। পরে সেখানেই সিজারিয়ান অপারেশন হয়। দুপুর ২টায় টায় মিথিলা আক্তার ছেলে সন্তানের জন্ম দেন। হাসপাতালে থাকা অবস্থায় রাতে নবজাতক কান্না শুরু করে।
বিষয়টি হাসপাতাল কর্তৃপক্ষকে জানালে তারা পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে জানায় নবজাতকের কোনো সমস্যা নেই। এর কিছুক্ষণ পর নবজাতকের কান্না থামানোর জন্য একজন নার্স এসে শিশুকে গ্যাস (নেবুলাইজেশন) দেয়। তখন শিশুর কান্না থেমে যায়। এই অবস্থায় একজন নার্স নবজাতকের পেটে চাপ দেন। এরপর থেকে নবজাতকের গায়ের রং নীল হতে থাকে। পরবর্তীতে ২৩ জুন রাত সাড়ে ১১ টায় নবজাতকের মৃত্যু হয়।
এই ঘটনায় বাদি হয়ে শ্রীপুর উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তার কাছে অভিযোগ দায়ের করেছেন মিথিলা আক্তারের দেবর মেহেদী হাসান আশিক। তিনি বলেন, ওই হাসপাতালের নার্স ও কর্তৃপক্ষের অবহেলার কারণে ভাতিজার মৃত্যু হয়েছে।
এ সম্পর্কে বক্তব্য জানতে হাসপাতালে গিয়ে জানা যায় প্রতিষ্ঠানটির কোনো লাইসেন্সই নেই। জায়েদা মাল্টিকেয়ার হসপিটালের অ্যাকাউন্ট অ্যাসিস্ট্যান্ট নাজমুল হুদা সময় সংবাদকে জানান, ‘লাইসেন্সের জন্য আমরা আবেদন করেছি কিন্তু এখনো পাইনি। লাইসেন্সবিহীন গাজীপুরের অসংখ্য প্রতিষ্ঠান এই ধরনের অপারেশন করে থাকে তবে তাতে কোনোদিন কেউ বাধা দেয়নি। তাই আমরাও অপারেশন কার্যক্রম চালিয়ে যাচ্ছি।’
আরও পড়ুন: ওসমানী হাসপাতালে ‘বিশেষ পাস কার্ড’, সুফল পাচ্ছেন রোগীরা
নবজাতক মৃত্যুর ঘটনায় নাজমুল হুদা বলেন, ‘আমরা সিজারিয়ান অপারেশনের পর রোগীকে বাড়ি পাঠিয়ে দিয়েছি। তারপর যা ঘটনা ঘটেছে তার দায় আমরা নেবো না।’
শ্রীপুর উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. শফিকুল ইসলাম বলেন, ওই হাসপাতালে অপারেশনের দিন কোনো চিকিৎসক ছিল না। তা ছাড়া নার্সরা নিজেদের সনদ দেখাতে পারেননি। ভ্রাম্যামাণ আদালত তাদের ৩০ হাজার টাকা জরিমানা করেছেন। এ ছাড়াও হাসপাতালের কার্যক্রম বন্ধ করা হয়েছে।
ভ্রাম্যমাণ আদালতের বিচারক ও শ্রীপুর উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) আতাহার শাকিল বলেন, 'নিবন্ধন ছাড়া পরিচালিত সকল হাসপাতাল ও ক্লিনিকে অভিযান পরিচালনা করা হবে। স্বাস্থ্য সেবা নিশ্চিত করতে এমন অভিযান নিয়মিত চলবে।'
]]>