গাজার অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান হবেন ট্রাম্প!

২ দিন আগে
ফিলিস্তিনের যুদ্ধবিধ্বস্ত গাজা উপত্যকায় চলমান সংঘাত বন্ধে স্থায়ী শান্তি, নিরাপত্তা এবং পুনর্গঠনের লক্ষ্যে ২০ দফার একটি প্রস্তাব উত্থাপন করেছেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। প্রস্তাবিত এই পরিকল্পনায় সম্মতি দিয়েছেন ইসরাইলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু। নতুন এই পরিকল্পায় যুদ্ধ পরবর্তী গাজার অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রধানের দায়িত্ব নিতে যাচ্ছেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট।

সোমবার (২৯ সেপ্টেম্বর) হোয়াইট হাউসে নেতানিয়াহুর সঙ্গে রুদ্ধদ্বার বৈঠক শেষে গাজা যুদ্ধ বন্ধের লক্ষ্যে এক যৌথ সংবাদ সম্মেলনে ২০-দফা শান্তি প্রস্তাব প্রকাশ করেন ট্রাম্প।

 

ইসরাইলি প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহুকে পাশে রেখে ট্রাম্প এই প্রস্তাবকে ‘ঐতিহাসিক’ বলে বর্ণনা করেছেন, যা ইসরাইল এবং অন্য মিত্র দেশগুলো গ্রহণ করেছে বলে তিনি দাবি করেন। তবে হামাসের পক্ষ থেকে এখনও কোনো আনুষ্ঠানিক সম্মতি মেলেনি। কূটনৈতিক সূত্রের বরাত দিয়ে আল জাজিরা জানিয়েছে, মধ্যস্থতাকারীদের মাধ্যমে প্রস্তাবটি পেয়ে হামাস সেটি পর্যালোচনা করছে।

 

নেতানিয়াহু প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের এই পরিকল্পনাকে পূর্ণ সমর্থন জানিয়ে বলেন, ‘আমি বিশ্বাস করি আজ আমরা গাজার যুদ্ধ শেষ করা এবং মধ্যপ্রাচ্যে শান্তি এগিয়ে নেয়ার জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ নিচ্ছি।’

 

নেতানিয়াহু আরও সতর্ক করে বলেন, যদি হামাস এই পরিকল্পনা প্রত্যাখ্যান করে, অথবা তারা যদি এটি গ্রহণ করেও এর বিপরীতে কাজ করার চেষ্টা করে, তবে ইসরাইল একাই কাজটি শেষ করবে। তিনি স্পষ্ট করেন, কাজটি সহজ বা কঠিন–যে কোনো পথেই সম্পন্ন হবে। আমরা সহজ পথটিই চাই, কিন্তু কাজটি করতেই হবে।’

 

আরও পড়ুন: গাজা যুদ্ধ বন্ধে ট্রাম্পের ২০ দফা প্রস্তাবনায় কী কী আছে

 

ট্রাম্পের প্রস্তাব অনুযায়ী, যদি হামাস যুদ্ধবিরতিতে রাজি হয়, তাহলে ৭২ ঘণ্টার মধ্যে ইসরাইলি জীবিত ও মৃত সব জিম্মিকে মুক্তি দিতে হবে, যার মাধ্যমে গাজায় একটি স্থায়ী যুদ্ধবিরতি কার্যকর হবে। হামাসকে গাজার নিয়ন্ত্রণ পুরোপুরি ছেড়ে দিতে হবে। এরপর আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়কে নিয়ে একটি অন্তর্বর্তী সরকার গঠিত হবে, যার নাম হবে ‘দ্য বোর্ড অব পিস’ বা শান্তি প্রশাসন।

 

প্রস্তাব অনুযায়ী গাজাকে একটি অস্থায়ী অন্তর্বর্তীকালীন শাসনের অধীন আনা হবে। এই প্রশাসন পরিচালনার দায়িত্বে থাকবে একটি টেকনোক্র্যাটিক ও রাজনীতি-বিবর্জিত ফিলিস্তিনি কমিটি, যা গাজাবাসীর জন্য দৈনন্দিন জনসেবা এবং পৌরসভার কাজ দেখভাল করবে।

 

শান্তি প্রস্তাব অনুযায়ী, গাজা উপত্যকা পরিচালনার জন্য একটি অস্থায়ী অন্তর্বর্তীকালীন শাসনব্যবস্থা চালু করা হবে। এই কমিটিতে থাকবেন যোগ্য ফিলিস্তিনি এবং আন্তর্জাতিক বিশেষজ্ঞরা। তাদের তত্ত্বাবধান করবে একটি নতুন আন্তর্জাতিক ট্রানজিশনাল সংস্থা, যার নাম ‘বোর্ড অব পিস’। এই বোর্ডের প্রধান ও সভাপতি হবেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প এবং সাবেক ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী টনি ব্লেয়ারসহ আরও সদস্য ও রাষ্ট্রপ্রধান, যা পরে ঘোষণা করা হবে।

 

আরও পড়ুন: গাজায় সংঘাত বন্ধে ট্রাম্পের পরিকল্পনা নিয়ে কী বললেন মুসলিম নেতারা?

 

হোয়াইট হাউসের প্রকাশিত নথিতেও ট্রাম্প ও ব্লেয়ারের ভূমিকার বিস্তারিত উল্লেখ করা হয়েছে। এতে বলা হয়, গাজার অস্থায়ী শাসনভার পরিচালনার জন্য বোর্ড অব পিস গঠিত হবে। এই সংস্থার প্রধান ও চেয়ারম্যান থাকবেন ডোনাল্ড ট্রাম্প। আর অন্যান্য সদস্যদের মধ্যে টনি ব্লেয়ারও থাকবেন।

 

পরিকল্পনা অনুযায়ী মধ্যপ্রাচ্যের সেরা বিশেষজ্ঞদের দিয়ে ট্রাম্প গাজার পুনর্গঠনে একটি বিশেষ অর্থনৈতিক পরিকল্পনা তৈরি করবেন। এই উদ্যোগের লক্ষ্য হলো নিরাপত্তা ও প্রশাসনিক কাঠামোকে এমনভাবে সাজানো, যাতে আন্তর্জাতিক গোষ্ঠীর তৈরি করা সুচিন্তিত ও আকর্ষণীয় বিনিয়োগ প্রস্তাবগুলো সহজেই আকৃষ্ট করা যায় এবং তা বাস্তবায়িত করা যায়। এই বিনিয়োগগুলো গাজার ভবিষ্যতের জন্য কর্মসংস্থান, সুযোগ এবং আশা সৃষ্টি করবে।

 

ট্রাম্পের প্রস্তাব অনুযায়ী গাজায় অভ্যন্তরীণ ও সীমান্ত নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে আন্তর্জাতিক ও আরব অংশীদারদের সহায়তায় আইএসএফ গঠন করা হবে, যা ফিলিস্তিনি পুলিশকে প্রশিক্ষণ দেবে এবং পুনর্গঠনের জন্য পণ্য সরবরাহ নিশ্চিত করবে। ইসরাইল গাজাকে দখল করবে না। আইএসএফ স্থিতিশীলতা প্রতিষ্ঠা করলে, ইসরাইলি সামরিক বাহিনী ধাপে ধাপে প্রত্যাহার করবে, তবে নতুন করে সন্ত্রাসী ঝুঁকি তৈরি না হওয়া পর্যন্ত সীমান্তে একটি নিরাপত্তা বেষ্টনী বজায় থাকবে।

]]>
সম্পূর্ণ পড়ুন