আজ শনিবার (২০ সেপ্টেম্বর) কাসাম ব্রিগেডস অনলাইনে ওই সংকলিত ছবি পোস্ট করে। এতে জীবিত ও মৃত সকল জিম্মির মুখচ্ছবি দেখানো হয়েছে এবং তাদের প্রত্যেকের ক্যাপশনে ‘রন আরাদ’ বলে একটি নাম লেখা হয়েছে। এটি মূলত ১৯৮৬ সালে লেবাননে নিখোঁজ হওয়া ইসরাইলি বিমান বাহিনীর এক ক্যাপ্টেনের নাম।
দক্ষিণ লেবাননে হামলার সময় আরাদের এফ-৪ ফ্যান্টম যুদ্ধবিমানে বোমা বিস্ফোরণ ঘটে। ওই ঘটনায় আরাদ বেঁচে গেলেও লেবাননের আমাল মুভমেন্ট তাকে ধরে নিয়ে যায় এবং পরে হিজবুল্লাহর হাতে তুলে দেয়। আরাদের মৃত্যু হয়েছে বলে ধারণা করা হয়। তবে তার পরিণতি সম্পর্কে চূড়ান্ত প্রমাণ পাওয়া যায়নি।
হামাস যে ছবিটি প্রকাশ করেছে তার সাথে একটি ক্যাপশনে লেখা: ‘(যুদ্ধবিরতি চুক্তিতে) নেতানিয়াহুর অস্বীকৃতি এবং (তার সেনাপ্রধান) জামিরের কারণে গাজা সিটিতে সামরিক অভিযান শুরু হওয়ার ফলে এ বিদায়ী ছবি প্রকাশ করা হলো।’
আরও পড়ুন: গাজায় বাস্তুচ্যুতি / সিনাই উপদ্বীপে সামরিক পদক্ষেপের হুমকি মিশরের
এর আগে গত বৃহস্পতিবার (১৮ সেপ্টেম্বর) হামাস এক বার্তায় জানায়, ইসরাইলি প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু গাজা সিটিতে স্থল অভিযান চালিয়ে জিম্মিদের ফেরানোর শেষ আশা নষ্ট করেছেন। সংগঠনটির কথায়, ‘এ অভিযানে অংশ নিয়ে নেতানিয়াহু আসলে জিম্মিদের মৃত্যুদণ্ড দিয়েছেন’।
হামাস হিব্রু ভাষায় ইসরাইলি নেতৃত্বের উদ্দেশে বার্তায় বলে, ‘আপনাদের বন্দিরা গাজার বিভিন্ন এলাকায় ছড়িয়ে আছে। নেতানিয়াহু যখন তাদের হত্যা করার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন, তখন তাদের জীবন নিয়ে আমরা উদ্বিগ্ন নই। এ অভিযানের মানে হলো, কোনো বন্দিকে আর ফেরত পাবেন না—না জীবিত, না মৃত।’ হামাস আরও হুঁশিয়ারি দিয়ে বলে, ‘গাজা হবে ইসরাইলি সেনাদের কবরস্থান।’
গাজা সিটির দখল নিতে সম্প্রতি অভিযান শুরু করে ইসরাইলি বাহিনী। এরপর গত সপ্তাহে শুরু হয় স্থল অভিযান। এদিকে এই অভিযানের কারণে ইসরাইলের ভেতরে নেতানিয়াহুর বিরুদ্ধে জনরোষ আরও বেড়েছে। তেল আবিবে নিয়মিত বিক্ষোভ হচ্ছে। বিক্ষোভে যুদ্ধবিরতির দাবি তীব্র হয়েছে, যেখানে জিম্মিদের পরিবারও অংশ নিচ্ছে।
আরও পড়ুন: প্রয়োজনে আমাদের পারমাণবিক কর্মসূচি সৌদি আরবকে দেয়া হবে: খাজা আসিফ
অনেক পরিবার আশঙ্কা করছে, শহর দখলের পরিকল্পনা মানেই তাদের প্রিয়জনের মৃত্যু। বর্তমানে গাজায় ৪৮ জন ইসরায়েলি জিম্মি রয়েছেন, যার মধ্যে অন্তত ২০ জন জীবিত বলে ধারণা করা হচ্ছে। এক ভিডিওতে দেখা গেছে, জিম্মি মাতান জানগাউকারের মা নেতানিয়াহুর বাসার সামনে কান্না করে বলছেন, ‘আপনি আমাকে বলেছিলেন সবাইকে ফিরিয়ে আনবেন, অথচ মিথ্যা বলেছেন।’
এদিকে ইসরায়েলের কর্মকাণ্ডে আন্তর্জাতিক সমালোচনা বেড়েই চলেছে। ইউরোপীয় ইউনিয়ন—যা ইসরায়েলের সবচেয়ে বড় বাণিজ্যিক অংশীদার, তারা নিষেধাজ্ঞার প্রস্তাব দিয়েছে। জাতিসংঘের এক কমিশন রিপোর্টে ইসরায়েলের বিরুদ্ধে গণহত্যার অভিযোগ আনা হয়েছে, যা ইসরায়েল অস্বীকার করেছে।
প্রায় ১০ লাখ মানুষ ওই শহর ও আশপাশে বাস করে। ইসরাইল তাদের দক্ষিণে সরতে বললেও গাজায় নিরাপদ জায়গার অভাবে হাজারো মানুষ পায়ে হেঁটে, গাড়িতে বা সাইকেলে পালিয়ে যাচ্ছে। ইসরাইলি সেনারা বলছে, বর্তমানে শহরে ৪ লাখ ৫০ হাজার মানুষ অবশিষ্ট আছে। তবে এ সংখ্যা স্বাধীনভাবে যাচাই করা সম্ভব হয়নি।
আরও পড়ুন: ইসরাইলের বিরুদ্ধে এক হয়ে লড়তে সৌদি আরবকে হিজবুল্লাহ’র প্রস্তাব
জাতিসংঘ সতর্ক করেছে, এই অভিযান গাজায় ভয়াবহ মানবিক বিপর্যয় আরও বাড়াবে। এদিকে ইসরাইলি বাহিনীর বোমাবর্ষণ অব্যাহত থাকায় গত ২৪ ঘণ্টায় গাজা সিটিতে ৪৯ জনসহ কমপক্ষে ৬১ জন নিহত হয়েছেন। এতে মোট নিহতের সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ৬৫ হাজার ২০৮ জনে। আহতের সংখ্যা পৌঁছেছে ১ লাখ ৬৬ হাজার ২৭১ জনে।
]]>