গাজা ফ্লোটিলায় ইসরাইলি হামলার তীব্র নিন্দা তুরস্কের, স্বেচ্ছাসেবকদের অবিলম্বে মুক্তি দাবি

১ সপ্তাহে আগে
ফিলিস্তিনের গাজাগামী ত্রাণবাহী নৌবহর গ্লোবাল সুমুদ ফ্লোটিলায় ইসরাইলি হামলা ও স্বেচ্ছাসেবকসহ বেশ কয়েকটি জাহাজ জব্দের ঘটনায় তীব্র নিন্দা জানিয়েছে তুরস্ক। সেই সঙ্গে আটক স্বেচ্ছাসেবকদের অবিলম্বে মুক্তির দাবি জানিয়েছে দেশটি।

আল জাজিরার প্রতিবেদন মতে, বৃহস্পতিবার (২ অক্টোবর) তুরস্কের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় গাজাগামী নৌবহরে ইসরাইলের হামলার তীব্র নিন্দা জানিয়ে বলেছে, আন্তর্জাতিক জলসীমায় বেসামরিক জাহাজের বিরুদ্ধে সামরিক পদক্ষেপ নিরীহ বেসামরিক নাগরিকদের জীবনকে বিপন্ন করে তুলেছে।

 

মন্ত্রণালয় এক বিবৃতিতে বলেছে, ‘সহিংসতার আশ্রয় না নিয়ে শান্তিপূর্ণভাবে কাজ করা বেসামরিক নাগরিকদের লক্ষ্য করে এই হামলা প্রমাণ করে যে, গণহত্যাকারী নেতানিয়াহুর সরকার বাস্তবায়িত ফ্যাসিবাদী ও সামরিক নীতি, যারা গাজাকে দুর্ভিক্ষের দিকে ঠেলে দিয়েছে, তা কেবল ফিলিস্তিনিদের মধ্যেই সীমাবদ্ধ নয়।’

 

মন্ত্রণালয় আরও বলেছে, নৌবহরে বাধা এবং কর্মীদের আটক থেকে বোঝা যায় যে, ইসরাইলি বাহিনী ‘ইসরাইলের আরোপিত নিপীড়নের বিরুদ্ধে সংগ্রামকারী প্রত্যেককেই’ লক্ষ্যবস্তু করছে’। আরও বলা হয়েছে, ইসরাইলি বাহিনীর হাতে আটক তুর্কি নাগরিকদের মুক্তি নিশ্চিত করার জন্য এখন সব পদক্ষেপ নেয়া হবে এবং তুর্কি সরকার নৌবহরে হামলার অপরাধীদের বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থাও নেবে।

 

আরও পড়ুন: গাজাগামী নৌবহরে হামলা / বিশ্বজুড়ে ইসরাইলবিরোধী বিক্ষোভের ডাক ইউরোপীয় পার্লামেন্ট সদস্যের

 

এদিকে গাজা ফ্লোটিলায় পর বিশ্বজুড়ে বিক্ষোভের ডাক দিয়েছেন ইউরোপীয় পার্লামেন্ট সদস্য এমা ফোরো। ফরাসি নাগরিক ফোরো নিজেও গাজাগামী ফ্লোটিলায় স্বেচ্ছাসেবক হিসেবে ছিলেন। তাকেও আটক করা হয়েছে।

 

গ্লোবাল সুমুদ ফ্লোটিলার এক্স অ্যাকাউন্ট থেকে এক বার্তায় ফোরো বলেছেন, ‘দেশটিকে [ইসরাইল] অবরুদ্ধ করুন, বিশ্ব অর্থনীতিকে পঙ্গু করে দিন। আসুন ফ্লোটিলার মিশন সম্পন্ন করি: অবরোধের অবসান ঘটাই, গাজায় গণহত্যা বন্ধ করুন!’

 

ইসরাইলি আগ্রাসন ও সর্বাত্মক অবরোধের কারণে গাজায় দুর্ভিক্ষ পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছে। প্রতি অনাহারে-অপুষ্টিতে মারা যাচ্ছে মানুষ। এমন পরিস্থিতিতে ইসরাইলের অবরোধ ভাঙার লক্ষ্যে চলতি মাসের শুরুর দিকে যাত্রা শুরু করে গ্লোবাল সুমুদ ফ্লোটিলা।

 

তবে ইসরাইল এই নৌবহর আটকে দেয়ার ঘোষণা দেয়। তাদের দাবি, স্বেচ্ছাসেবকরা ‘আইনসম্মত নৌ অবরোধ লঙ্ঘন করার’ চেষ্টা করছে। যদিও মানবিক সাহায্য প্রবেশের অনুমতি দেয়ার বিষয়ে স্পষ্ট আন্তর্জাতিক আইন রয়েছে।

 

নৌবহরটি গত বুধবার (১ অক্টোবর) গাজার কাছাকাছি পৌঁছায়। আয়োজকরা জানান, নৌবহর ইসরাইল ঘোষিত ‘বিপৎসীমায়’ প্রবেশ করেছে যা গাজার উপকূল থেকে প্রায় ২২৫ কিলোমিটার বা প্রায় ১২১ নটিক্যাল মাইল দূরে।

 

আরও পড়ুন: গাজাগামী নৌবহরে ইসরাইলের হামলা, থুনবার্গসহ দুই শতাধিক স্বেচ্ছাসেবক আটক

 

আগেরবারের ফ্লোটিলাগুলোকে এখানেই আটকানো বা আক্রমণ করা হয়েছিল। আজ বৃহস্পতিবার (২ অক্টোবর) ভোর ৫টায় তাদের গাজা উপকূলে পৌঁছানোর কথা ছিল। তার আগেই রাতে নৌবহরে হামলা চালিয়েছে ইসরাইলি নৌবাহিনী। 

 

গ্লোবাল সুমুদ ফ্লোটিলা জানিয়েছে, ইসরাইল এখন পর্যন্ত ১৩টি জাহাজ জব্দ করেছে। সেই সঙ্গে জাহাজগুলোতে থাকা দুই শতাধিক স্বেচ্ছাসেবককে আটক করা হয়েছে। তবে ৩০টি জাহাজ ক্ষুধার্ত ফিলিস্তিনিদের জন্য সাহায্য নিয়ে এখনও যুদ্ধবিধ্বস্ত অঞ্চলের উপকূলে পৌঁছানোর পথে রয়েছে।

 

ফ্লোটিলার এক বার্তায় বলা হয়েছে, ‘ইসরাইলি অবৈধ বাঁধা আমাদের দমিয়ে রাখতে পারবে না। আমরা অবরোধ ভাঙতে এবং একটি মানবিক করিডোর খোলার লক্ষ্যে আমাদের অভিযান চালিয়ে যাচ্ছি।’

 

ফ্লোটিলার মুখপাত্র সাইফ আবুকেশেক এক ইনস্টাগ্রাম বার্তায় জানিয়েছেন, জব্দ জাহাজগুলোতে ৩৭টি দেশের ২০১ জনেরও বেশি লোক ছিল, যার মধ্যে ৩০ জন স্পেনের; ২২ জন ইতালির; ২১ জন তুরস্কের এবং ১২ জন মালয়েশিয়ার।

 

আরও পড়ুন: গাজামুখী গ্লোবাল সুমুদ ফ্লোটিলায় জরুরি অবস্থা জারি

 

তিনি বলেন, ইসরাইলি বাঁধা ও জাহাজ জব্দ হওয়া সত্ত্বেও ‘মিশন চলছে’ এবং গাজার অবরোধ ভাঙার জন্য ভূমধ্যসাগর পেরিয়ে’ জাহাজগুলো যাত্রা অব্যাহত রেখেছে।

 

মুখপাত্রের কথায়, ‘আমাদের প্রায় ৩০টি জাহাজ এখনও গাজার উপকূলে পৌঁছানোর চেষ্টা করছে। দখলদার বাহিনীর সামরিক জাহাজ থেকে দূরে থাকার চেষ্টা করছে। তারা দৃঢ়প্রতিজ্ঞ। তারা অনুপ্রাণিত এবং তারা ভোরের মধ্যে এই অবরোধ ভেঙে ফেলার এবং একসাথে গন্তব্যে পৌঁছানোর জন্য সবকিছু করছে।’ 

]]>
সম্পূর্ণ পড়ুন