গর্ভবতী মায়ের জন্য ৮ আমল

৩ সপ্তাহ আগে
মাতৃত্ব অত্যন্ত সম্মানের একটি স্থান। নবীজি মায়ের পদতলে জান্নাতের সুসংবাদ দিয়েছেন। যা গর্ভাবস্থায় একজন মায়ের কষ্ট ও ত্যাগের প্রতিদান।

গর্ভে সন্তান আসা নারীর জন্য বোঝা নয়, বরং সম্মান ও সৌভাগ্যের। হজরত আনাস (রা.) থেকে বর্ণিত তিনি বলেন, নবীজি (স.)-এর পুত্র ইবরাহিমের দুধমাতা সালামাকে (রা.) নবীজি (সা.) বলেছিলেন, ‘তোমরা নারীরা কি এতে খুশি নও যে, যখন কোনো নারী তার স্বামীর পক্ষ থেকে গর্ভধারিণী হয় আর স্বামী তার প্রতি সন্তুষ্ট থাকেন, তখন সে আল্লাহর জন্য সর্বদা রোজা পালনকারী ও সারারাত নফল ইবাদতকারীর মতো সওয়াব পেতে থাকবে?’

 

এরপর তিনি বলেন, ‘তার যখন প্রসব ব্যথা শুরু হয় তখন তার জন্য নয়নজুড়ানো কী কী নেয়ামত লুকিয়ে রাখা হয়, তা আসমান-জমিনের কোনো অধিবাসীই জানে না। সে যখন সন্তান প্রসব করে তখন তার দুধের প্রতিটি ফোঁটার বিনিময়ে একটি করে নেকি দেয়া হয়। এ সন্তান যদি কোনো রাতে তাকে জাগিয়ে রাখে (কান্নাকাটি করে মাকে বিরক্ত করে ঘুমাতে না দেয়) তাহলে সে আল্লাহর জন্য নিখুঁত ৭০টি গোলাম আজাদ করার সওয়াব পাবে।’ (তাবরানি ৬৯০৮; মাজমাউজ জাওয়ায়েদ ৪/৩০৫)

 

আরও পড়ুন: পার্থিব আশা কম করলে আল্লাহর যে ৪ অনুগ্রহ পাওয়া যায়

 

গর্ভাবস্থায় একজন মায়ের কিছু গুরুত্বপূর্ণ করণীয় রয়েছে, যা তার নিজের এবং অনাগত সন্তানের জন্য কল্যাণ বয়ে আনে। নিচে ৮টি গুরুত্বপূর্ণ আমল আলোচনা করা হলো:

 

কল্যাণের দোয়া

 

গর্ভবতী মায়ের উচিত অনাগত সন্তানের জন্য কল্যাণের দোয়া করা। হজরত মারিয়াম (আ.)-এর মায়ের দোয়া থেকে আমরা শিক্ষা নিতে পারি। তিনি দোয়া করেছিলেন, ‘হে আমার রব, আমার গর্ভে যা আছে, নিশ্চয় আমি তা খালেসভাবে আপনার জন্য মানত করলাম। অতএব, আপনি আমার পক্ষ থেকে তা কবুল করুন। নিশ্চয় আপনি শ্রবণকারী, সর্বজ্ঞ।’ (সুরা আলে ইমরান ৩৫)

 

এছাড়াও, ‘রাব্বি হাবলি মিন লাদুনকা জুররিয়াতান তাইয়্যিবাহ, ইন্নাকা সামিউদ্দুয়া’ অর্থাৎ হে আমার পালনকর্তা, আপনার পক্ষ থেকে আমাকে পুত-পবিত্র সন্তান দান করুন। নিশ্চয়ই আপনি প্রার্থনা শ্রবণকারী। (সুরা আলে ইমরান ৩৮) এই দোয়াটিও করা যেতে পারে।

 

নেক সন্তান কামনায় ‘রাব্বি হাবলি মিনাস সালিহীন’, অর্থাৎ ‘হে আমার প্রতিপালক, আপনি আমাকে সৎকর্মশীল পুত্র সন্তান দান করুন।’ (সুরা সাফফাত ১০০) পাঠ করা যায়।

 

গুনাহ পরিহার

 

গর্ভাবস্থায় অতিরিক্ত ইবাদতের পাশাপাশি গুনাহ থেকে বেঁচে থাকা জরুরি। নাটক-সিরিয়াল দেখা, উচ্চস্বরে কথা বলা, অপ্রয়োজনে বাইরে যাওয়া এবং গায়রে মাহরাম আত্মীয়দের সাথে সাক্ষাৎ পরিহার করা উচিত।

 

ধৈর্য ধারণ

 

গর্ভাবস্থায় বিভিন্ন শারীরিক কষ্টের সম্মুখীন হতে হয়, যেমন অসুস্থতা, বমি, দুর্বলতা ইত্যাদি। এ সময় ধৈর্য ধারণ করা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। এই সময়টাকে জিহাদতুল্য ইবাদত মনে করলে ধৈর্য ধারণ করা সহজ হবে। নবী করিম (স.) বলেছেন, ‘ধৈর্য হলো জ্যোতি।’ (মুসলিম ২২৩)

 

আরও পড়ুন: দোয়ার শুরুতে পড়ার মতো আল্লাহর প্রশংসামূলক কিছু বাক্য

 

সময়মতো নামাজ

 

নামাজ অন্তরকে প্রশান্তি দেয়। গর্ভাবস্থায় অস্থিরতা বেশি থাকলে সময়মতো নামাজ আদায় করা উচিত।

 

জিকির

 

জিকির অস্থিরতা দূর করার একটি কার্যকর উপায়। এটি মা ও গর্ভের সন্তান উভয়ের মনকে শান্ত রাখে। আল্লাহ তাআলা বলেন, ‘যারা ঈমান আনে এবং আল্লাহর স্মরণে যাদের মন প্রশান্ত হয়; জেনে রাখ, আল্লাহর স্মরণেই মন প্রশান্ত হয়।’ (সুরা রাদ ২৮)

 

শোকর আদায়

 

মা হতে পারা একটি বড় নেয়ামত। অনেক নারীই এই নেয়ামত থেকে বঞ্চিত। তাই যখনই মা হওয়ার অনুভূতি হবে, আল্লাহর শোকর আদায় করা উচিত।

 

পর্যাপ্ত ঘুম

 

গর্ভাবস্থায় পর্যাপ্ত ঘুম জরুরি। রাতে তাড়াতাড়ি ঘুমানো এবং ফজরের নামাজের আগে যথেষ্ট ঘুমানোর চেষ্টা করা উচিত। আল্লাহ তাআলা বলেন, ‘আর আমি তোমাদের নিদ্রাকে করেছি ক্লান্তি দূরকারী।’ (সুরা নাবা ৯)

 

কোরআন তেলাওয়াত

 

প্রায় ২০ সপ্তাহ পর গর্ভের শিশু শুনতে পায়। তাই মায়ের উচিত নিয়মিত কোরআন তেলাওয়াত করা। আবদুল্লাহ ইবনে আমর (রা.) বলেন, ‘কোরআনের বিষয়ে তোমাদের ওপর অবশ্য পালনীয় এই যে, কোরআন শিক্ষা করা এবং তোমাদের সন্তানদের কোরআন শিক্ষা দেয়া। কেননা এ বিষয়ে তোমাদের জিজ্ঞাসা করা হবে এবং তার প্রতিদানও দেয়া হবে।’ (শরহে সহিহ বুখারী, ইবন বাত্তাল ৪৬)

 

আরও পড়ুন: বিয়ে করতে চাইলে কি রিজিক বাড়ে?

 

উপরের এই বিষয়গুলো মেনে চললে একজন গর্ভবতী মায়ের শারীরিক ও মানসিক প্রশান্তি বজায় থাকে এবং অনাগত সন্তানের উপরেও এর ইতিবাচক প্রভাব পড়ে।

]]>
সম্পূর্ণ পড়ুন