গরুর জন্য উন্মুক্ত হাসপাতাল, রোগীদের জন্য দুর্ভোগ

৩ সপ্তাহ আগে
শেরপুর ২৫০ শয্যা বিশিষ্ট সদর হাসপাতালে সোমবার (১৪ সেপ্টেম্বর) রাতে দুইটি গরু অবাধে ঘুরাফেরা করছে এমন একটি ছবি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ঘোরাফেরা করছে। সোমবার (১৫ সেপ্টেম্বর) সকাল থেকে বিষয়টি নিয়ে সমালোচনা-সমালোচনা শুরু হয় সাধারণ মানুষের মাঝে।

জানা গেছে, গত কয়েক মাস থেকে শেরপুর ২৫০ শয্যা জেলা হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের চরম অবহেলা পরিলক্ষিত হচ্ছে সাধারণ মানুষের চিকিৎসা সেবায়। শুধু চিকিৎসা সেবা নয়, বিনামূল্যে ঔষধ বিতরণ, সকল প্রকার পরীক্ষা-নিরীক্ষা, রোগীদের খাবারে অব্যবস্থাপনা, পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতার অভাবসহ প্রতিটি ক্ষেত্রেই স্বচ্ছতা এবং অবহেলার ছাপ স্পষ্ট। এই অবহেলার ছাপ স্পষ্টভাবে ধরা পরেছে সোমবার রাতে হাসপাতাল ভবনের ভিতর দুইটি গরুর অবাধ বিচরণের মাধ্যমে। গরু দুটি প্রায় ঘণ্টাখানেক সময় ধরে হাসপাতাল ভবনের বিভিন্ন স্পর্শকাতর এলাকায় অবাধে বিচরণ করতে দেখা গেছে।


জেলার প্রায় ১৬ লাখ মানুষের জন্য ২০১৮ সালের ২ নভেম্বর সদর হাসপাতালটি ১০০ শয্যা থেকে ২৫০ শয্যায় উন্নীত করা হলেও এখনো শূন্যপদে চিকিৎসক-নার্স নিয়োগ হয়নি। দালালদের দৌরাত্ম্য, যন্ত্রপাতি বিকল এবং কর্তৃপক্ষের দায়িত্বহীনতায় রোগীরা বঞ্চিত হচ্ছেন কাঙ্ক্ষিত সেবা থেকে।


হাসপাতালের তথ্য অনুযায়ী, চিকিৎসকের ৫৮ পদের বিপরীতে বর্তমানে কর্মরত আছেন মাত্র ৩০ জন। এর মধ্যে সিনিয়র কনসালটেন্ট ১০টির মধ্যে ৯টি, জুনিয়র কনসালটেন্ট ১৩টির মধ্যে ৮টি, অ্যানেসথেটিস্ট ৩টির মধ্যে একটি, রেজিস্ট্রার ৯টির মধ্যে ৫টি পদশূন্য রয়েছে। নার্সের ৮৭টি পদের মধ্যে ৯টি শূন্য রয়েছে।


জেলার সেচ্ছাসেবী সংগঠন ‘আজকের তারুণ্যের প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি রবিউল ইসলাম রতন বলেন, দায়িত্বহীনতার অভাবেই শেরপুর জেলা হাসপাতালের এই করুণ অবস্থা। তত্ত্বাবধায়ক সঠিকভাবে দায়িত্ব পালন করলে হাসপাতালটি এই করুন অবস্থায় যেত না। তিনি আরও বলে আজকের তারুণ্য সেচ্ছাসেবী সংগঠনের পক্ষ থেকে হাসপাতালে সেবার মান উন্নয়নের জন্য বিভিন্ন কাজ করে আসছি তবে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের কোনো ইচ্ছা নেই ভালো কিছু করার।


আরও পড়ুন: ওষুধ কোম্পানির প্রতিনিধিদের হাসপাতালে প্রবেশ নিয়ে কঠোর নির্দেশনা


বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সাবেক মুখ্য সংগঠক মোর্শেদ জিতু তার ফেসবুক পোস্টে লেখেন, গত রাতে হাসপাতালে গরু চলাচল করেছে, এটা নতুন কিছু না। হাসপাতালের দুর্নীতি, অনিয়ম, দালাল নির্মূল করতে না পারায় পরিস্থিতি ভয়াবহ রূপ নিয়েছে।


জেলার দায়িত্বশীল এক সংবাদকর্মী এ বিষয়ে জানতে চাইলে হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়ক ডা. সেলিম মিয়া তার সাথে অসৌজন্যমূলক আচরণ করে ফোন কেটে দেন। তিনি বলেন, হাসপাতালে গরু পাহাড়া দেওয়া দায়িত্ব আমার না। যাদের দায়িত্ব তাদের কাছে জিজ্ঞেস করেন।


জেলা স্বাস্থ্য বিভাগের সর্বোচ্চ কর্মকর্তা সিভিল সার্জন ডা. মুহাম্মদ শাহীন বলেন, আমি ঘটনাটি জানার পরপরই হাসপাতাল পরিদর্শন করেছি। গেটে দায়িত্বে থাকা আনসারদের অবহেলার কারণেই এমন ঘটনা ঘটেছে। এ বিষয়ে ব্যবস্থা নেয়া হচ্ছে। তিনি আরও বলেন, ডা. সেলিম মিয়ার আচরণ দায়িত্বশীলতার পরিচায়ক নয়। বিষয়টি নিয়ে আলোচনা চলছে।


উল্লেখ্য, গেল বছরের নভেম্বর মাসে জেলা হাসপাতালের ওষুধ ক্রয় সংক্রান্ত দূর্নীতি নিয়ে রিপোর্ট করতে গেলে সময় সংবাদের রিপোর্টার এবং চিত্র সাংবাদিকের উপর চড়াও হয়ে তাদের লাঞ্ছিত করেন তিনি।

]]>
সম্পূর্ণ পড়ুন