গবেষণার এসব সাফল্যকে শিল্প খাতে পৌঁছে দেয়ার লক্ষ্যে এক কর্মশালা ও অংশীজন মতবিনিময় সভা হয়েছে। বুধবার (২৯ অক্টোবর) দিনব্যাপী রাজশাহী বিসিএসআইআর গবেষণাগারের মিলনায়তনে প্রতিষ্ঠানটির আয়োজনে দিনব্যাপী ‘বার্ষিক কর্মশালা ও অংশীজন মতবিনিময় সভা’ অনুষ্ঠিত হয়।
এতে বিজ্ঞানী, গবেষক, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় ও রুয়েটের শিক্ষক এবং বিভিন্ন শিল্পোদ্যোক্তারা অংশ নেন। অনুষ্ঠানে গবেষণাকে বাণিজ্যিকীকরণের চ্যালেঞ্জ ও সম্ভাবনা নিয়ে খোলামেলা আলোচনা হয়।
কর্মশালায় মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন প্রতিষ্ঠানটির প্রধান বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা শারমিনা ইয়াসমিন। তিনি জানান, বাজারের সাধারণ তেলে ক্ষতিকর ট্রান্সফ্যাট থাকে এবং প্রাকৃতিক অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট নষ্ট হয়ে যায়। এই সমস্যার সমাধানে গবেষকরা দেশীয় সরিষা, তিল ও রাইস ব্র্যান ব্যবহার করে দুটি বিশেষ ব্লেন্ডেড ভোজ্যতেল উদ্ভাবন করেছেন। এই তেল মানবদেহের জন্য উপকারি ফ্যাটি এসিডের ভারসাম্য রক্ষা করে।
আরও পড়ুন: পরিশোধিত জ্বালানি তেল ও ই-পাসপোর্টের কাঁচামাল আমদানির অনুমোদন
গবেষকদের বড় সাফল্য এসেছে বর্জ্যকে সম্পদে রূপান্তরের ক্ষেত্রে। ড. শারমিনা বলেন, আমরা ‘ওয়েস্ট টু ওয়েলথ’ বা বর্জ্য থেকে সম্পদ তৈরির ধারণাকে গুরুত্ব দিচ্ছি। সিল্ক তৈরির পর ফেলে দেয়া রেশমপোকার গুটি থেকে অ্যান্টি-ফাঙ্গাল গুণসম্পন্ন তেল আহরণ করে উন্নতমানের ফিনাইল তৈরি করা হয়েছে। অবশিষ্ট অংশ দিয়ে তৈরি হয়েছে মাছের পুষ্টিকর খাবার। একইভাবে, চিংড়ির খোসা থেকে তৈরি ‘মেসোপোরাস কাইটোসান’ শিল্পবর্জ্য থেকে বিষাক্ত ভারী ধাতু শোষণে অত্যন্ত কার্যকর। এমনকি ভুট্টার মোচা, কলার বর্জ্য ও অ্যালোভেরার মতো সহজলভ্য উপাদান ব্যবহার করে শিল্পে ব্যবহারযোগ্য মূল্যবান পণ্য তৈরির প্রযুক্তি উদ্ভাবন করা হয়েছে।
অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন বিসিএসআইআর-এর চেয়ারম্যান সামিনা আহমেদ। তিনি বলেন, ‘গবেষণাগার ও শিল্পের মধ্যে সমন্বয়হীনতার কারণেই অনেক উদ্ভাবন বাজারে পৌঁছাতে পারে না। আমরা সেই বাধা দূর করতে এসেছি। আমরা শুধু আপনাদের সমস্যা শুনতে নয়, সমাধান করতেও আগ্রহী।’
তিনি রাজশাহীর ঐতিহ্যবাহী রেশমশিল্পের উন্নয়নের ওপর জোর দিয়ে বলেন, খাঁটি সিল্কের দাম বেশি হওয়ায় এর বাজার সংকুচিত হচ্ছে। এর সঙ্গে অন্য কিছু ব্লেন্ড করে কীভাবে একে আরও সাশ্রয়ী ও আকর্ষণীয় করা যায়, তা নিয়ে গবেষণা করতে হবে।
সভাপতির বক্তব্যে রাজশাহী বিসিএসআইআরের ভারপ্রাপ্ত পরিচালক মো. হাবিবুর রহমান ভূঁঞা বলেন, ‘আমরা বিশ্বাস করি, বিজ্ঞানী, গবেষক ও শিল্পোদ্যোক্তারা এক ছাতার নিচে কাজ করলেই দেশের উন্নয়ন সম্ভব। সেবার জন্য উদ্যোক্তারা আমাদের কাছে আসবেন, এই ধারণা থেকে বেরিয়ে আমরাই সেবা নিয়ে আপনাদের দোরগোড়ায় যেতে চাই।’
কর্মশালায় বিভিন্ন উদ্যোক্তা তাদের নানা অসুবিধার কথা তুলে ধরেন। জবাবে বিসিএসআইআর কর্তৃপক্ষ জানায়, তারা উদ্যোক্তাদের সব ধরনের পরামর্শকে গুরুত্ব দেয় এবং বাণিজ্যিকীকরণের প্রতিটি ধাপে সর্বোচ্চ সহযোগিতা করতে প্রস্তুত।
আরও পড়ুন: সরকার ভোজ্যতেলের দাম বাড়ায়নি: বাণিজ্য উপদেষ্টা
অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি হিসেবে বক্তব্য দেন বিসিএসআইআর-এর সদস্য (অর্থ) যুগ্মসচিব আবুল ফাতাহ মো. বালিগুর রহমান, যুগ্মসচি মো. তৌফিক-ই-লাহী চৌধুরী, বিসিএসআইআর-এর সচিব মোহাম্মদ শহিদুল হক পাটোয়ারী। এতে সভাপতিত্ব করেন রাজশাহী বিসিএসআইআর-এর ভারপ্রাপ্ত পরিচালক মো. হাবিবুর রহমান ভূঁঞা। স্বাগত বক্তব্য দেন প্রধান বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা নাজিম উদ্দিন আহমেদ।
]]>

৩ সপ্তাহ আগে
৭







Bengali (BD) ·
English (US) ·