জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদের ৮০তম অধিবেশন চলছে। স্থানীয় সময় মঙ্গলবার (২৩ সেপ্টেম্বর) সকালে বিভিন্ন দেশের রাষ্ট্র ও সরকার প্রধানদের অংশগ্রহণে শুরু হয় সাধারণ বিতর্ক-পর্ব। বিতর্কের প্রথম দিনে দুটি অধিবেশনে ৩০ জনেরও বেশি বিশ্বনেতা বক্তব্য রাখেন।
যার মধ্যে ছিলেন চিলির প্রেসিডেন্ট গ্যাব্রিয়েল বোরিচ। ভাষণে তিনি ফিলিস্তিনিদের প্রতি ইসরাইলি আগ্রাসনের বিরুদ্ধে তার দৃঢ় অবস্থান ব্যক্ত করে বলেন: ‘আমি নেতানিয়াহু ও তার পরিবারকে ক্ষেপণাস্ত্র হামলায় চ্ছিন্নভিন্ন দেখতে চাই না। আমি চাই, নেতানিয়াহুসহ ফিলিস্তিনি জনগণের বিরুদ্ধে গণহত্যার জন্য দায়ীদের আন্তর্জাতিক বিচার আদালতের কাঠগড়ায় দাঁড় করানো হোক।’
বোরিচ আরও বলেন: ‘আমাদের একটি সমস্যা হলো যন্ত্রণা ঘৃণার জন্ম দেয়। তবে আমাদের অবশ্যই এটি মোকাবেলা করতে হবে এবং আমাদের সমস্ত শক্তি দিয়ে এর বিরুদ্ধে লড়াই করতে হবে।’
আরও পড়ুন: জেলেনস্কির সাথে বৈঠকের পর উল্টো কথা বলছেন ট্রাম্প!
বোরিচের বক্তব্য রাজনৈতিক ও মানবাধিকার মহলে ব্যাপক মনোযোগ আকর্ষণ করেছে। কারণ জাতিসংঘের পোডিয়ামে দাঁড়িয়ে তিনিই গাজা যুদ্ধ বন্ধ এবং ন্যায়বিচার নিশ্চিত করার ক্রমবর্ধমান আন্তর্জাতিক দাবির মধ্যে ফিলিস্তিনি বেসামরিক নাগরিকদের বিরুদ্ধে সংঘটিত অপরাধের জন্য ইসরাইলি কর্মকর্তাদের জবাবদিহি করার জন্য সরাসরি আহ্বান জানালেন।
প্রগতিশীল অবস্থানের জন্য পরিচিত চিলির প্রেসিডেন্ট তার বক্তব্যে আন্তর্জাতিক আইন মেনে চলার এবং প্রতিশোধের যুক্তি প্রত্যাখ্যান করার প্রয়োজনীয়তার ওপর জোর দেন। তিনি বলেন, বোমা হামলার মাধ্যমে ন্যায়বিচার অর্জন করা যায় না, বরং প্রাসঙ্গিক আন্তর্জাতিক প্রতিষ্ঠানের সামনে আইনি জবাবদিহিতার মাধ্যমে সেটা সম্ভব।
গাজায় যুদ্ধাপরাধ ও মানবতাবিরোধী অপরাধের দায়ে গত বছর নেতানিয়াহুর বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি করে আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালত (আইসিসি)। এরপর বেশ কয়েকটি দেশ আইসিসির গ্রেফতারি পরোয়ানা বাস্তবায়নের অঙ্গীকার করেছে।
আরও পড়ুন: গাজার ক্ষুধার্ত মানুষের ছবি নিয়ে জাতিসংঘের মঞ্চে এরদোয়ান
নিউইয়র্ক শহরের ডেমোক্রেটিক পার্টির মেয়রপ্রার্থী জোহরান মামদানি সম্প্রতি বলেছেন, তিনি মেয়র নির্বাচিত হলে নেতানিয়াহু তার শহরে এলে তাকে গ্রেফতারের পক্ষে মত দেবেন। বিশ্লেষকরা বলছেন, নেতানিয়াহুর বিপদ ক্রমেই ঘনিয়ে আসছে বলে মনে হচ্ছে।
গাজায় ইসরাইলের যুদ্ধ নিয়ে নেতানিয়াহু সরকারের সমালোচনাও বেড়ে চলেছে। আন্তর্জাতিক নেতাদের পাশাপাশি সাবেক ইসরায়েলি প্রধানমন্ত্রীদের কাছ থেকেও তাঁর সরকারের বিরুদ্ধে গণহত্যা ও যুদ্ধাপরাধ সংঘটনের অভিযোগ আসছে।
আন্তর্জাতিক অঙ্গনে ইসরাইল ক্রমেই বেশি একঘরে হয়ে পড়ছে; কারণ, গাজায় দেশটির চাপিয়ে দেওয়া দুর্ভিক্ষের ছবি বিশ্ব গণমাধ্যমে ছেয়ে গেছে। দেশের ভেতরও নেতানিয়াহুকে তীব্র সমালোচনার মুখে পড়তে হচ্ছে। অনেকেই মনে করছেন, তিনি শুধু নিজের ক্ষমতা ধরে রাখতে এ যুদ্ধ দীর্ঘায়িত করছেন।