বৃহস্পতিবার (১৮ সেপ্টেম্বর) আসরের নামাজের পর কোরআন তিলাওয়াতের মধ্য দিয়ে শুরু হয় খেলাফত মজলিসের বিক্ষোভ সমাবেশ। সমাবেশে খেলাফত মজলিসের নেতারা জুলাই সনদ এবং পিআর পদ্ধতি বাস্তবায়নে অন্তর্বর্তী সরকারের নেতিবাচক ভূমিকার জন্য ক্ষোভ প্রকাশ করেন। ফ্যাসিবাদের দোসর দলগুলোকে বাতিল করার দিকেও জোর দেন তারা। আর দাবি আদায় না হলে কঠোর কর্মসূচি নিয়ে আসার ঘোষণাও দিয়েছেন তারা।
এছাড়া ইসলামবিরোধী বিভিন্ন উদ্যোগ থেকে সরে আসার জন্যও সরকারকে কড়া হুঁশিয়ারি দিয়েছেন খেলাফত নেতারা। তবে এ বিষয়ে নির্দিষ্ট করে কিছু উল্লেখ করেননি।
জুলাই সনদ বাস্তবায়ন না হলে দেশে আবার ভারতীয় আধিপত্যবাদ এবং স্বৈরাচার ফিরে আসবে বলে দাবি করেন বক্তারা। জুলাই সনদ বাস্তবায়ন ছাড়া আগামী নির্বাচন হওয়া সম্ভব না বলেও মনে করেন তারা। বলেন, কালো টাকা এবং অস্ত্রের প্রভাবমুক্ত নির্বাচন হলে খেলাফত মজলিস সেটা স্বাগত জানাবে।
বাংলাদেশ খেলাফত মজলিশের মহাসচিব মাওলানা জালাল উদ্দিন আহমেদ বলেন, কিছু কিছু দলের প্রশ্ন, আমরা কেন হঠাৎ রাজপথে, মানুষ কখনো শখে রাজপথে নামে না। বাংলাদেশের ৩৩টি দলের নেতৃবৃন্দকে নিয়ে অন্তর্বর্তী সরকার গত কয়েক মাস ধরে জুলাই সনদ তৈরি করেছে। কিন্তু কীভাবে বাস্তবায়িত হবে সেটা নিয়ে কিছুই পরিষ্কার করা হয়নি। কিছু দল বলেছে ক্ষমতায় গেলে সংসদে জুলাই সনদের বাস্তবায়ন করবে। কিন্তু আমরা দেখেছি, ক্ষমতায় গেলে সবাই ওয়াদা ভুলে যায়। অবিলম্বে জুলাই সনদের আইনি ভিত্তি আপনাদেরই (অন্তর্বর্তীকালীন সরকার) তৈরি করে যেতে হবে। ফেব্রুয়ারির নির্বাচন জুলাই সনদের ভিত্তিতেই হতে হবে।
আইনজীবী এবং বিশ্লেষকরা দুটি পথ দেখিয়েছেন, রাষ্ট্রপতির সাংবিধানিক আদেশের মাধ্যমে পিআর পদ্ধতির বাস্তবায়ন, প্রয়োজনে গণভোটের মাধ্যমেও সিদ্ধান্ত নেয়া যেতে পারে। জুলাই সনদ আগামীর বাংলাদেশ গড়ার মূল হাতিয়ার। জুলাই সনদ আগামীর ইনসাফভিত্তিক বৈষম্যহীন বাংলাদেশ গড়ার হাতিয়ার, স্বৈরাচারের মূলোৎপাটন করার হাতিয়ার। এই সনদ বাস্তবায়ন না হলে আবার স্বৈরাচার ফিরে আসবে। তাই জুলাই বাস্তবায়ন না হলে আমরা ঘরে যাব না।
তিনি বলেন, আওয়ামী লীগ যেসব কার্যক্রমের জন্য দোষী, একই কারণে জাতীয় পার্টি এবং ১৪ দল দোষী। এখনও জাতীয় পার্টির জিএম কাদের সাংবাদিকদের কার্যালয়ে ডেকে ভারতের এজেন্ডা বাস্তবায়নের বক্তব্য দেন। আওয়ামী লীগ এবং জাতীয় পার্টিকে নিষিদ্ধের জন্য যা করতে হয় সেটা করতে আমরা প্রস্তুত। আগামী নির্বাচনে উচ্চকক্ষে পিআর দাবি করেছি। সেটও বিএনপিসহ কয়েকটি দল নাকচ করেছে। উচ্চকক্ষ পিআর ছাড়া যদি হয় তাহলে সেটা আমরা মানি না। পিআর ছাড়া হলে সেটা সরকারের খরচ বহন করার একটা মাধ্যম হবে।
আরও পড়ুন: জুলাই সনদের ভিত্তিতে নির্বাচন হতে হবে: গোলাম পরওয়ার
ফ্যাসিস্টের বিরুদ্ধে ২০১৪ সালে আমরা শাপলা চত্বরে জীবন দিয়েছি। ২০২৫ সালে বিজয় অর্জন করেছি। এখনও দোসরদের বিচার নিশ্চিত করতে পারেনি। আমার ধারণা, এই সরকারের মধ্যেই ফ্যাসিস্টের দোসর লুকিয়ে আছে। যদি সরকারের বা প্রশাসনে কেউ এই বিচার বানচাল করতে বা প্রক্রিয়া দীর্ঘায়িত করতে ভূমিকা রাখে তার পরিণতিও ভালো হবে না।
গণঅধিকার পরিষদের সভাপতি নুরুল হক নূরকে পিটিয়ে আহত করার ঘটনারও সমালোচনা করেন মাওলানা জালাল উদ্দিন আহমেদ। তিনি প্রশ্ন করেন, এর বিচার নিশ্চিত করতে এত সময় কেন লাগছে?
সমাবেশের পর বিকেল সাড়ে পাঁচটার দিকে বাইতুল মোকাররমের উত্তর গেট সংলগ্ন রাস্তা দিয়ে মিছিল নিয়ে বের হন খেলাফত মজলিসের নেতাকর্মীরা। মিছিলটি পল্টন মোড় হয়ে বিজয়নগর পানির ট্যাংকির পাশ দিয়ে এগিয়ে পুরানা পল্টন হয়ে আবার বাইতুল মোকাররমের সামনে এসে শেষ হয়।
মিছিলে ‘জুলাই সনদের বাস্তবায়ন, করতে হবে করতে হবে’, ‘আপা গেছে যেই পথে, জাপা যাবে সেই পথে’, ‘এই বাংলায় হবে না, আওয়ামী লীগের ঠিকানা’, ‘আওয়ামী লীগের দোসররা, হুঁশিয়ার সাবধান’- এসব স্লোগান দেয়া হয়।
ঐকমত্য কমিশনে আলোচনার মধ্যেই রাজপথে কয়েকটি ইসলামী দল। বিভিন্ন দাবিতে জাতীয় মসজিদ বায়তুল মোকাররমের উত্তর ও দক্ষিণ গেটসহ কয়েকটি স্থানে আজ সমাবেশ ও বিক্ষোভ মিছিল করছে জামায়াতে ইসলাম, ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ ও বাংলাদেশ খেলাফত মজলিসসহ সাতটি রাজনৈতিক দল।
আরও পড়ুন: শহীদ ও আহতদের রক্তের দায় শোধ করতে পিআর পদ্ধতিতে নির্বাচন দিতে হবে: চরমোনাই পীর
জোহরের পর বায়তুল মোকাররম মসজিদের উত্তর গেটে ইসলামী আন্দোলন, আসরের পর দক্ষিণ গেটে সমাবেশ ও বিক্ষোভ মিছিল জামায়াতে ইসলামীর। ভিন্ন ভিন্ন সময়ে একই কর্মসূচি পালন করে আরও পাঁচটি দল।
এই ইসলামী দলগুলোর অভিন্ন দাবির মধ্যে রয়েছে- জুলাই সনদের আইনি ভিত্তি, পিআর পদ্ধতিতে নির্বাচন, নির্বাচনে লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড নিশ্চিত করা, জুলাই-আগস্ট গণহত্যার বিচার দৃশ্যমান করা ও বিশেষ ট্রাইব্যুনালে জাতীয় পার্টি এবং ১৪ দলের বিচার এবং বিচার চলাকালীন তাদের কার্যক্রম নিষিদ্ধ করা।
এছাড়া শুক্রবার বিভাগীয় শহরে এবং ২৬ সেপ্টেম্বর সব জেলা ও উপজেলায় বিক্ষোভ মিছিলের কর্মসূচি পালন করবে দলগুলো।