গাজায় গত প্রায় দুই বছর ধরে সামরিক আগ্রাসন চালাচ্ছে ইসরাইল। সেই সঙ্গে গত মার্চ মাস থেকে সর্বাত্মক অবরোধ চলছে। সীমান্তের বাইরে থেকে কোনো ত্রাণ সহায়তা সেখানে প্রবেশ করতে পারছে না। ফলে ভূমধ্যসাগর পাড়ের ছোট্ট ভূখণ্ডটিতে তীব্র খাদ্য সংকট দেখা দিয়েছে।
এদিকে গাজায় যুক্তরাষ্ট্র ও ইসরাইল পরিচালিত ত্রাণ বিতরণ কেন্দ্রে কিছু সহায়তা দেয়া হলেও সেখানে ত্রাণ নিতে আসা ফিলিস্তিনিদের লক্ষ্য করে নিয়মিত গুলি চালাচ্ছে ইসরাইলি সেনারা। তাতে প্রায় প্রতিদিনই মানুষ মারা যাচ্ছে। রিপোর্ট মতে, গত মে মাসে এই সংস্থার কার্যক্রম শুরু হওয়ার পর থেকে এক হাজার তিন শতাধিক ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছে।
গাজায় রীতিমতো দুর্ভিক্ষ দেখা দিয়েছে। লাখ লাখ মানুষ অনাহারে-অর্ধাহারে দিনাতিপাত করছে। এক টুকরো রুটির জন্য সর্বত্র হাহাকার। গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের মতে, অনাহার ও অপুষ্টিতে এরই মধ্যে ১৭৫ জনের মৃত্যু হয়েছে। এর মধ্যে ৯৩ জনই শিশু।
কিশোর আতেফ আবু খাতের সেই হতভাগাদের একজন। আল জাজিরার প্রতিবেদন মতে, গত শনিবার (২ আগস্ট) গাজার আল শিফা হাসপাতালে তার মৃত্যু হয়। আগে তার কোনো অসুস্থতা ছিল না। দিনের পর দিন না খেতে পেয়ে আস্তে আস্তে তার শরীর দুর্বল হয়ে যায়। শেষ পর্যন্ত হাসপাতালে নেয়া হলেও তাকে বাঁচানো যায়নি।
আরও পড়ুন: ইসরাইলি জিম্মির নতুন ভিডিও নিয়ে চাঞ্চল্য
আবু খাতেরের পরিবার জানিয়েছে, তার কোনো অসুস্থতা ছিল না। তার শরীরের ওজন ছিল ৭০ কেজি। খাবারের অভাবে ওজন কমে দাঁড়ায় মাত্র ২৫ কেজিতে।
গাজা থেকে আল জাজিরার এক প্রতিবেদক বলেছেন, আতেফের পরিবার ও অন্যান্যদের কাছে শুনেছি, সে স্থানীয় খেলাধুলায় চ্যাম্পিয়ন ছিল। কিন্তু অনাহারে তার ওজন কমে যায়। অপুষ্টিতে ভোগার পর অবশেষে সে মারা যায়।
এই প্রতিবেদক আরও বলেন, গাজাজুড়ে হাজার হাজার মানুষ এমন তীব্র অপুষ্টিতে ভুগছে। আতেফ তাদেরই একজন মাত্র। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে একটি ভিডিও ছড়িয়ে পড়েছে। যেখানে দেখা যাচ্ছে, আতেফের পরিবার তাকে শেষ বিদায় জানাচ্ছে। সেখানে এক ব্যাগে তার শীর্ণকায় মরদেহ দেখা যাচ্ছে। তার মুখ ক্যামেরা থেকে আড়াল করা হয়েছে।
আতেফের মুখমণ্ডলের হাড়গুলোও স্পষ্টভাবে বোঝা যাচ্ছিল। ভিডিওতে আরও দেখা যায়, আতেফের এক আত্মীয় তার পাঁজরের প্রতিটি হাড় আঙুল দিয়ে ছুঁয়ে ছুঁয়ে দেখাচ্ছেন। তার পাঁজরের হাড়গুলো গোনা যাচ্ছিল।
আরও পড়ুন: গাজায় যুদ্ধ বন্ধের আহ্বান জানালেন ইসরাইলের বিরোধী নেতা
উইসাম শাবাত নামের এক সাংবাদিক ভিডিওটি নিজের ইনস্টাগ্রাম অ্যাকাউন্টে শেয়ার করেছেন। সেখানে তিনি বলেছেন, দীর্ঘদিন না খেতে পেরে এবং চিকিৎসার অভাবে আতেফের শরীরে মারাত্মক জটিলতা দেখা দেয়। আতেফ যখন হাসপাতালে আসে, তখন তার অবস্থা খুবই সংকটাপন্ন ছিল। শেষ পর্যন্ত সে মারা যায়।
]]>