খুলনায় স্থবির উন্নয়ন প্রকল্প, কর্মসংস্থানে ভাটা

৩ সপ্তাহ আগে
একসময় শিল্পনগরীখ্যাত খুলনা ক্রমেই অর্থনৈতিকভাবে পিছিয়ে পড়ছে। একের পর এক শিল্প প্রতিষ্ঠান বন্ধ হয়ে কর্মহীন হচ্ছেন হাজারো শ্রমিক। স্থবির হয়ে আছে ইকোনোমিক জোন, বিমানবন্দর ও সেতুসহ নানা উন্নয়ন প্রকল্প। কাঙ্ক্ষিত বিনিয়োগ ও কর্মসংস্থান না হওয়ায় ক্ষোভ বাড়ছে খুলনাবাসীর মধ্যে।

দীর্ঘ এক যুগে বন্ধ হয়েছে নিউজপ্রিন্ট মিল, টেক্সটাইল মিলসহ বহু শিল্প প্রতিষ্ঠান। পাঁচ বছর আগে বন্ধ হয়ে যাওয়া ৯টি রাষ্ট্রায়াত্ব পাটকলের মধ্যে ৪টি ইজারায় চালু হলেও তা টিকে আছে খুঁড়িয়ে খুঁড়িয়ে। এতে কর্মহীন হয়ে পড়েছেন প্রায় ২৫ হাজার শ্রমিক।
 

খালিশপুর ক্রিসেন্ট মিলেরর সাবেক শ্রমিক আবদুল হক বলেন, ‘এক সময় মিলে কাজ করে ভালোই থাকতাম। এখন কোনদিন দিনমজুরি করতে পারি, আবার কোনদিন তাও পাই না। অন্য কোথাও কাজও জোটে না।’
 

অন্য শ্রমিক রহিমা বেগমের অভিযোগ, মিল বাদে খুলনায় আর কোনো ইন্ডাস্ট্রি নেই। তাই কাজও পাচ্ছি না। সংসার চালানোই কষ্ট হয়ে গেছে।

আরও পড়ুন: ঝিনাইদহে আনার চাষে সাফল্য, বিদেশি ফলেই লাখ টাকার সম্ভাবনা


এদিকে সদ্য ডিগ্রি পাস করা শিক্ষার্থী মাসুদ রানা বলেন, খুলনায় কোনো কর্মসংস্থান না থাকায় পাশ করেও বসে থাকতে হচ্ছে। চাকরির জন্য ঢাকাসহ অন্যত্র যেতে হয়।
 

গত এক দশক ধরে এ অঞ্চলে নতুন শিল্প প্রতিষ্ঠান গড়ে না ওঠায় কর্মসংস্থান সংকট প্রকট আকার ধারণ করেছে। পরিসংখ্যান ব্যুরোর তথ্যমতে, খুলনায় কর্মসংস্থান আছে মাত্র ৪২ শতাংশ মানুষের।
অর্থনৈতিক গতিশীলতা ফেরাতে কর্মসংস্থানের বিকল্প নেই বলে মত দিয়েছেন বিশেষজ্ঞরা। 

 

খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ের সহযোগী অধ্যাপক মো. জোবায়ের হোসেন বলেন, ‘কর্মসংস্থান সৃষ্টির জন্য অবকাঠামোগত উন্নয়নে সমন্বিত পরিকল্পনা গ্রহণ করা জরুরি। এজন্য সরকারকেই এগিয়ে আসতে হবে। বিনিয়োগ আকৃষ্ট করতে ইন্ডাস্ট্রি গড়ার জন্য বড় আকারের জায়গা প্রয়োজন, যেখানে একসাথে অনেক প্রতিষ্ঠান থাকতে পারে। তাহলে গ্যাস সরবরাহও সহজ হবে। এজন্য স্থানীয় রাজনৈতিক নেতা, সরকারের সকল দপ্তরকে সমন্বিত উদ্যোগ নিতে হবে।’
 

এদিকে খুলনা অঞ্চলে বেশ কিছু উন্নয়ন প্রকল্প নেয়া হলেও বছরের পর তা স্থবির হয়ে পড়ে আছে। এই যেমন ২০১৭ সালে ইকোনোমিক জোনের উদ্যোগ নেয়া হলেও স্থান নির্ধারণের জটিলতায় তা আলোর মুখ দেখেনি। দু দফায় জায়গা নির্ধারণ হলেও জমির দাম বৃদ্ধিসহ নানা জটিলতায় সে প্রকল্প বন্ধ হয়ে আছে। ইকোনোমিক জোন না হওয়ায়  পিছিয়ে গেছে ভোলা থেকে খুলনায় গ্যাস সরবরাহ প্রকল্প। একইভাবে রামপালের বিমানবন্দর চার বছর ধরে অগ্রগতি শূন্য অবস্থায় পড়ে আছে। জেলায় প্রস্তাবিত অন্তত ৬টি সেতু কাগজপত্রের ফাইলেই আটকে আছে।

আরও পড়ুন: সম্ভাবনা থাকলেও কেন দাঁড়াতে পারছে না খুলনার ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্প?

এ অবস্থায় ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন বৃহত্তর খুলনা উন্নয়ন সংগ্রাম সমন্বয় কমিটির সভাপতি শেখ আশরাফ উজ জামান। তিনি বলেন, বারবার আশ্বাস দেওয়া হলেও কোনো প্রকল্প দৃশ্যমান হয়নি। এর ফলে কর্মসংস্থান ও অর্থনৈতিক অগ্রগতি মারাত্মকভাবে ব্যাহত হচ্ছে। তিনি আশঙ্কা প্রকাশ করে বলেন, এভাবে প্রকল্পগুলো স্থবির হয়ে থাকলে এ অঞ্চলের অর্থনীতি আরও ভেঙে পড়বে। মানুষ এই শহর ছাড়তে থাকবে।


তবে প্রশাসনের দাবি, স্থবির হয়ে যাওয়া প্রকল্পগুলো আবার চালু করতে উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। খুলনার অতিরিক্ত বিভাগীয় কমিশনার (উন্নয়ন) আবু সায়েদ মো. মনজুর আলম বলেন, ‘অগ্রাধিকার ভিত্তিতে স্থবির প্রকল্পগুলো এগিয়ে নিতে কাজ শুরু হয়েছে। দ্রুত বাস্তবায়ন হলে এ অঞ্চলের অর্থনীতিতে নতুন গতি আসবে।’


চার হাজার ৩৯৪ বর্গকিলোমিটার আয়তনের খুলনায় জনসংখ্যা ২৬ লাখের বেশি। শিল্প ও কর্মসংস্থানে নতুন গতি না ফিরলে এ অঞ্চলের অর্থনৈতিক সংকট আরও তীব্র হবে বলে আশঙ্কা করছেন সংশ্লিষ্টরা।

]]>
সম্পূর্ণ পড়ুন