খুলনায় সড়ক-ড্রেনের উচ্চতায় বর্ষার আগেই জলাবদ্ধতার আতঙ্কে নগরবাসী

৫ দিন আগে
খুলনায় উন্নয়নের নামে প্রতিনিয়ত উঁচু হচ্ছে সড়ক ও ড্রেন। তবে তাতে বাড়ছে না জলাবদ্ধতা নিরসনের সম্ভাবনা। বরং আগামী বর্ষায় নাগরিক দুর্ভোগ আরও বাড়ার আশঙ্কা নগরবাসীর।

খুলনা নগরীতে জলাবদ্ধতা নিরসন ও উন্নত ড্রেনেজ ব্যবস্থার উন্নয়নের নামে সড়ক ও ড্রেনের উচ্চতা ক্রমাগত বেড়েই চলেছে। কিন্তু এই উন্নয়ন এখনই উদ্বেগের কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে স্থানীয়দের কাছে। বর্ষা আসার আগেই অনেক এলাকায় সড়ক ও ড্রেনের উচ্চতা আশেপাশের বাড়িঘর ও দোকানপাটের চেয়ে ৩ থেকে ৪ ফুট পর্যন্ত বেশি হয়ে গেছে। ফলে বাসিন্দাদের প্রবেশপথ প্রাচীর দিয়ে আটকে যাওয়ার মতো পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে।

 

বিশেষ করে দক্ষিণ পাবলার কেশব লাল সড়কে এমন চিত্র চোখে পড়ে, যেখানে একসময় সমান উচ্চতায় থাকা বাড়ির গেট এখন অনেক নীচু হয়ে গেছে, আর রাস্তা যেন দেয়াল হয়ে দাঁড়িয়েছে। শুধু এই সড়ক নয়, নগরীর দৌলতপুর, খালিশপুর, হেলাতলাসহ অনেক এলাকায় একই অবস্থা।

 

আরও পড়ুন: তীব্র গরমে অতিষ্ঠ খুলনার জনজীবন

 

২০১৯ সালে খুলনা সিটি করপোরেশন (কেসিসি) জলাবদ্ধতা নিরসন প্রকল্পের আওতায় ৮২৩ কোটি টাকা ব্যয়ে ১৯২টি ড্রেন নির্মাণ ও সংস্কারের কাজ শুরু করে, যার আওতায় স্লুইসগেট ও পাম্প বসানো, খাল পুনঃখননসহ নানা উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়। কিন্তু স্থানীয়দের অভিযোগ, পরিকল্পনা ও বাস্তবতার মাঝে বড় ফারাক রয়েছে। রাস্তা ও ড্রেন এত উঁচু করা হয়েছে যে আশেপাশের শত শত বাড়ি ও ব্যবসা প্রতিষ্ঠান নীচু হয়ে পড়েছে।

 

সড়ক ও ড্রেনের উচ্চতা ৩ থেকে ৪ ফুট বেড়ে যাওয়ায় নিচু হয়ে গেছে বাড়িঘর। ছবি: সময় সংবাদ

 

বর্ষা মৌসুমে এসব নীচু স্থানে পানি ঢুকে পড়ার আশঙ্কা এখন প্রবল। অনেক দোকানে এখন সিঁড়ি বসাতে হচ্ছে, যাতে ক্রেতারা প্রবেশ করতে পারেন। স্থানীয়দের প্রশ্ন এই উন্নয়ন আসলে কার জন্য? নাগরিক দুর্ভোগ বাড়িয়ে উন্নয়ন কি কার্যকর হতে পারে?

 

নগর পরিকল্পনাবিদ ও গবেষকদের মতে, এভাবে সমন্বয়হীনভাবে উন্নয়ন কাজ চালালে জলাবদ্ধতার স্থায়ী সমাধান তো আসবেই না, বরং সমস্যা আরও জটিল হবে। খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ের গ্রামীণ ও নগর পরিকল্পনা বিভাগের অধ্যাপক ড. মো. আশিক উর রহমান বলেন, পরিকল্পিত সমন্বয় ছাড়া এমন উন্নয়ন টেকসই নয়। বরং ভবিষ্যতে এ ধরনের কাজ আরও বড় বিপর্যয়ের জন্ম দিতে পারে। একই কথা বলেছেন লেখক ও নগর পরিকল্পনাবিদ গৌরাঙ্গ নন্দী। তিনি বলেন, এ ধরনের উন্নয়ন প্রকৃতির সঙ্গে বৈরিতা তৈরি করে এবং দুর্ভোগ বাড়ায়।

 

আরও পড়ুন: ২০২৩ সালের খুলনা সিটি নির্বাচনের ফল বাতিল চাইলেন মুশফিক

 

যদিও খুলনা সিটি করপোরেশনের নির্বাহী প্রকৌশলী শেখ মোহাম্মদ মাসুদ করিম ও প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা লস্কার তাজুল ইসলাম দাবি করছেন, জলবায়ু পরিবর্তনের ঝুঁকি মাথায় রেখে দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনার অংশ হিসেবেই এসব কাজ বাস্তবায়ন হচ্ছে এবং প্রকল্প শেষ হলে সুফল পাবে নগরবাসী।

 

কেসিসির তথ্য মতে, ২০১০ সালে ‘শেল টেক’ ও ‘হাউজ অব কনসালটেন্ট লিমিটেড’ নামে দুটি প্রতিষ্ঠান খুলনার ১ হাজার ২০৫ কিলোমিটার ড্রেনেজ ব্যবস্থার যে উন্নয়ন নকশা তৈরি করেছিল, বর্তমান বাস্তবতায় তার যথাযথ প্রয়োগ নিয়েই সন্দেহ করছেন সংশ্লিষ্টরা। সব মিলিয়ে খুলনায় উন্নয়নের নামে যে কাজ চলছে, তা জনজীবনে স্বস্তি নয়, বরং নতুন করে দুর্ভোগের হুমকি হয়ে উঠছে বলে দাবি তাদের।

]]>
সম্পূর্ণ পড়ুন