ভোরের আলো ফোটার আগেই তীব্র শীতে কাঁপতে কাঁপতে মসজিদে পৌঁছান হাফিজুর রহমান, যিনি ১০ বছর ধরে মসজিদের খেদমতে নিয়োজিত রয়েছেন। তার মাসিক বেতন মাত্র সাড়ে তিন হাজার টাকা, যা দিয়ে তিনি নিজের ৭ সদস্যের পরিবারের জন্য মাসের চালও কিনতে পারেন না। এ কারণে তিনি ভ্যান-সাইকেলের গ্যারেজ চালান।
অন্যদিকে, মো. আরজান আলী শেখ, যিনি গত দেড় দশক ধরে মুয়াজ্জিন হিসেবে কাজ করছেন, চলতি মাসে বেতন হিসেবে ১ হাজার টাকা বৃদ্ধি পেয়ে সাড়ে ৪ হাজার টাকা পেয়েছেন।
আরেক তরুণ মুয়াজ্জিন, মোহাম্মদ বাহাউদ্দীন সাকিব, মসজিদ থেকে ৫ হাজার টাকা এবং মাদ্রাসা থেকে ১ হাজার ৫০০ টাকা পান। তবে, এই রোজগারে স্ত্রী ও দুই মাস বয়সি সন্তানকে নিয়ে তার জীবন চালানো কঠিন হয়ে পড়েছে। বাধ্য হয়ে তাদের গ্রামে পাঠিয়ে দিয়েছেন তিনি।
এই তিনজন মুয়াজ্জিনের গল্প খুলনার তিনটি এলাকার হলেও, তাদের জীবনের চিত্র প্রায় একই। তারা প্রত্যেকেই শীত, গরম, ঝড়-বৃষ্টি উপেক্ষা করে তাদের দায়িত্ব পালন করছেন। অথচ তাদের বেতন-ভাতা অত্যন্ত অপ্রতুল, যা তাদের জীবনের খরচ পূরণে ব্যর্থ হচ্ছে।
আরও পড়ুন: ইমাম-মুয়াজ্জিনদের বেতনকাঠামো নিয়ে যা বললেন ধর্ম উপদেষ্টা
খুলনা অঞ্চলের বেশিরভাগ মসজিদের ইমাম, মুয়াজ্জিন ও খাদেমদের বেতন ১ হাজার ৫০০ টাকা থেকে ১০ হাজার টাকার মধ্যে রয়েছে। খুব কম মসজিদই ১০ হাজার বেতন প্রদান করে, যা বাজার মূল্যের তুলনায় অত্যন্ত কম।
এ বিষয়ে জেলা ইমাম পরিষদের সভাপতি মাওলানা মোহাম্মদ সালেহ বলেন, ‘ইমাম ও মুয়াজ্জিনরা সমাজে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখেন, রাষ্ট্রের বার্তা প্রান্তিক পর্যায়ে পৌঁছানোর পাশাপাশি সামাজিক অবক্ষয় রোধে তাদের ভূমিকা অপরিসীম। তাদের জন্য সামাজিক ও রাষ্ট্রীয় উদ্যোগ জরুরি।’
ইসলামিক ফাউন্ডেশন খুলনার পরিচালক মো. আনিসুজ্জামান সিকদার জানান, খুলনায় প্রায় সাড়ে ৪ হাজার মসজিদ রয়েছে এবং বিভাগে এই সংখ্যা ৩২ হাজার। মসজিদগুলোর তালিকা তৈরি করে ইমাম-মুয়াজ্জিনদের সহায়তা পৌঁছানোর পরিকল্পনা করা হয়েছে।
এভাবে ইমাম-মুয়াজ্জিনরা জীবনের বিভিন্ন দুর্দশার মধ্যে তাদের দায়িত্ব পালন করলেও, তাদের যথাযথ সম্মান ও সুরক্ষা নিশ্চিত করার প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ জরুরি বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা।
]]>