খুলনার সর্ববৃহৎ পাখির হাট: কিচিরমিচিরে জেগে ওঠা এক ছুটির সকাল

১ দিন আগে
শুক্রবার মানেই ছুটির দিন। কেউ কাটান ঘুমিয়ে, কেউ ঘুরে বেড়িয়ে। কিন্তু খুলনার খালিশপুর নয়াবাটি মোড়ের চিত্র একেবারেই ভিন্ন। এখানে এদিন সকাল গড়াতেই রাস্তার দুই পাশে খাঁচার পর খাঁচায় সাজানো থাকে রঙিন বাহারি পাখি। কেউ কিনছেন, কেউ বিক্রি করছেন আবার কেউ এসেছেন শুধু পাখির ডাক শুনতে ও প্রাণ জুড়াতে।

পাখির কিচিরমিচিরে মুখর হয়ে ওঠে পুরো এলাকা। গ্রীষ্ম, বর্ষা বা শীত ঋতু বদলায়, কিন্তু বদলায় না এই হাটের চেহারা। বছরের প্রতিটি শুক্রবার সকাল আটটা থেকে জুমার আগ পর্যন্ত খালিশপুরের নয়াবাটির হাজী শরিয়াতুল্লা মাধ্যমিক বিদ্যালয় সামনে বসে খুলনার সবচেয়ে বড় পাখির হাট।


এই হাটের মূল আকর্ষণ বাহারি কবুতর। প্রজাতির দিক দিয়ে আছে, কিং কবুতর, গিরিবাজ, সাটিং, হুমার, সিরাজি, জ্যাকোবিন, গোল্ডেন সুইট, পায়রা, অস্ট্রেলিয়ান ঘুঘু, প্রিন্স, হোয়াইট ফ্যান্টেল, লাভবার্ডস ইত্যাদি। একেক প্রজাতির একেক বৈশিষ্ট্য। কোনোটির পালক ঝুঁটি দেয়া, কোনোটির চোখ টকটকে লাল, আবার কোনোটির পাখায় চকচকে রং।


একজোড়া কবুতরের দাম শুরু হয় মাত্র দুইশ টাকা থেকে। তবে কিং, হুমার, বা বিরল কিছু বিদেশি জাতের দাম ছাড়িয়ে যায় ১৫ হাজার টাকা পর্যন্ত। শুধু কবুতরই নয়, এখানে মেলে শালিক, ময়না, ককাটেল, বাজিগার, মুনিয়া, জাবা, বাজারিকা, টিয়া, কোয়েল, টার্কি, খরগোশ, বিলেতি ইঁদুর এবং নানা জাতের পোষা পাখি।


এই হাটে যারাই আসেন, তাদের বেশিরভাগই এক ধরনের মানসিক প্রশান্তি নিয়ে ফেরেন। কেউ শখ পূরণে পাখি কিনতে, কেউ দেখতেই। এক ধরনের সামাজিক বন্ধন তৈরি হয় এ হাট ঘিরে।


বেসরকারি একটি প্রতিষ্ঠানে চাকরি করা তামিম আহমেদ বলেন, ‘সারা সপ্তাহ অফিস করি। শুক্রবার সকালে এখানে এসে হাঁটি, দেখি, কিছু কিনি ও আবার পরিচিতদের সঙ্গে আড্ডা দিই। এ হাট আমার সাপ্তাহিক মানসিক রিফ্রেশমেন্ট।


আরও পড়ুন: আট মাস জেল খেটে মুক্তি পেল কবুতর


নগরীর ময়লাপোতা থেকে পাখি কিনতে আসা কিশোরী আফিয়া বলেন, ‘আমার পছন্দ ময়না। কথা বলার চেষ্টা করে। ওর সঙ্গে কথা বললে একা লাগে না।’


বিক্রেতাদের অনেকেই শখের বসে শুরু করলেও এখন এই পাখির হাট হয়ে উঠেছে তাদের উপার্জনের প্রধান মাধ্যম।


দীর্ঘদিন ধরে কবুতর বিক্রি করা এক বিক্রেতা হাবিব হোসেন বলেন, ‘শুরুটা শখ ছিল। সময়ের সঙ্গে এটাই পেশা হয়ে গেছে। এখন ফেসবুকেও বিক্রি করি, তবে হাটে এলে আলাদা অনুভূতি হয়। এখানে নতুন নতুন ক্রেতা পাই, মানুষের আগ্রহ দেখি ভালো লাগে। হাট পরিচালনায় নেই কোনো টোল বা সরকারি খাজনা।’


তার মতোই অ্যাকুরিয়াম বিক্রেতা কামরুল ইসলাম বলেন, ‘আমি মাছ চাষ করি নিজস্ব খামারে। এখানেই বিক্রি করি ব্ল্যাক মলি, গোল্ডফিশ, বেলুন মলি, হোয়াইট মলি। যারা হাটে আসেন, তারা শুধু পাখিই নয় ঘরের শোভা বাড়াতে মাছও কিনেন।’


হাট ঘিরে মানুষের সমাগম থাকায় সড়কে চলাচলে কিছুটা সমস্যা হয়। তবে এলাকাবাসীর ভাষ্য কিছুটা সমস্যা হলেও হাটটা আমাদের অহংকার। এত মানুষের মিলনমেলা, এতো রকম পাখি, শুধু কেনাবেচা নয়, এটা আমাদের সংস্কৃতির অংশ হয়ে গেছে।

]]>
সম্পূর্ণ পড়ুন